রূপগঞ্জের কারচুপিতে সয়লাব ঢাকা


প্রকাশিত: ০৯:১৫ এএম, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫

এবার ঈদে রূপগঞ্জের তৈরি মেয়েদের কারচুপিতে এখন রাজধানী ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের বাজার সয়লাব। রূপগঞ্জের শিল্পীদের নিখুঁদ হাতের কারচুপি চালিয়ে দেয়া হচ্ছে ভারতীয় বলে। আর ৮শ টাকার একএকটি কারচুপি বিক্রি করা হচ্ছে ২ থেকে ৬/৭ হাজার টাকা পর্যন্ত।

এত দামে কারচুপি কিনেও ক্রেতারা বেশ আনন্দিত। তাদের কথা কোনো অনুষ্ঠানে কারচুঁপি কোনো অনুষ্ঠানে থ্রি-পিস কিংবা শাড়ি পরে গেলে অনুষ্ঠানের মধ্যমনি হওয়া যায়। আর সৌন্দর্যের কথা লক্ষ রেখেইে মধ্যবিত্ত কিংবা উচ্চ মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে বৌ-ঝিরা কারচুপি দাম দিয়ে খুব একটা মাথা ঘামান না। কারচুপি মানেই লুকুচুরি আর কারচুপি নিয়ে লুকোচুরি খেলা হচ্ছে ক্রেতাদের সঙ্গে। আর এর সুযোগ নিচ্ছেন আমাদের দেশের কাপড় বিক্রেতারা।

রূপগঞ্জ ও পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে এসব কারচুপি কম মূল্যে কিনে দ্বিগুণ তিনগুণেরও বেশি মূল্যে তা বিক্রি করা হচ্ছে। দাম ঠিক-ঠাকমতো নিলে রীতিমতো ভারতের সঙ্গে তুলনা করা চলে রূপগঞ্জের এ কারচুপির।

Benaroshe

 রূপগঞ্জের মৈকুলী এলাকার তুহিন (২৪) গত ৭ বছরে সে কারচুপির নিখুঁদ কারিগর হিসেবে এলাকায় পরিচিতি পেয়েছে। তার একটি কাজের পুরো নকশা ফুটিয়ে তুলতে ১০-১২ দিন সময় লাগবে বলে জানান তিনি। আর এর বিনিময়ে কাস্টমারকে গুণতে হবে পাক্কা সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। অথচ শাড়িটা কেনা হয়েছিলো মাত্র ৮৪০ টাকায়। অর্থাৎ নকশা করানোর পর শাড়িটার দাম হয়ে যাবে ৬ হাজার  টাকা। আবার এ শাড়িটাই যদি অভিজাত কোনো দোকানে ওঠানো হয়, তা হলে এটি বিক্রি হবে কমপক্ষে ১০ হাজার টাকায়।

রূপগঞ্জের হাটাবো, মৈকুলী, কাঞ্চন,কায়েতপাড়ার পুরোটা এলাকা জুড়েই নারীদের পোশাকে নকশা করার কাজ চলে ঘরে ঘরে। বাড়িল আঙিনায় ফ্রেম বসিয়ে নকশা করায় ব্যস্ত শিল্পীরা। দেখা গেল তাদের অধিকাংশই বয়সে নবীন। কাজের চাপ খুব বেশি। যেসব অর্ডার ছিল তা ডেলিভারি দিতেই এখন হিমশিম খেতে হচ্ছে শিল্পীদের। সারা দিন তো বটেই, এখন কাজ হচ্ছে রাত ৩ থেকে ৪টা পর্যন্ত।

Benaroshe

জাহাঙ্গীর নামে এক বুটিক শপ মালিক জানান, রূপগঞ্জ থেকে শাড়ি ও থ্রি-পিসে নকশা করিয়ে তিনি মালিবাগ, নিউমার্কেট ও গুলশানের দোকানে বিক্রি করেন। এক সময় পোশাকে অ্যামব্রয়ডারি করা খুব জনপ্রিয় ছিল। এগুলো এখনো থাকলেও কারচুপির চাহিদা এখন বেশি। দাম বেশি হলেও ফ্যাশনপ্রিয়দের প্রথম পছন্দ এখন কারচুপি।

কাঞ্চন অ্যামব্রয়ডারির হাইজের ম্যানেজার আবদুর রশিদ জাগো নিউজকে জানান, পোশাকে কারচুপির খরচকে আমরা আট ভাগে ভাগ করি। এর মধ্যে চার ভাগ শিল্পীর বেতন। দুই ভাগ খরচ হয় নকশা করার মাল কিনতে। আর দুই ভাগ পান কারখানার মালিক।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একটি শাড়িতে কারচুপি করতে হয়তো ২০-২৫ টাকার বেশি সুতা, জরি, চুমকি, পুতি ইত্যাদি লাগে না। কিন্তু পুরো শাড়িতে নকশা ফুটিয়ে তুলতে সময় লেগে যায় ৫-১২ দিন। ফলে মূল খরচটা চলে যায় শিল্পীর পারিশ্রমিকে।

গৃহনী আইভী নুসরাত জাগো নিউজকে জানান, কারচুপি করা শাড়ি পরে সহজে বসা কষ্টকর। কিন্তু এটা তো আমরা সব সময় পড়ি না। বিশেষ অনুষ্ঠানে পড়ি। তাছাড়া এটা একটা সৌন্দর্য।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রূপগঞ্জ ছাড়াও ঢাকার তালতলা মার্কেট , মিরপুর এলাকার ঘরে ঘরে এখন পোশাকে নকশা করার এ পদ্ধতি চালু হয়ে গেছে। নারীদের বাড়তি আয়ের পথ খুলে দিয়েছে কারচুপি তবে এসব ফ্যাশনেবল পোশাকের ক্রেতা মূলত স্বচ্ছল পরিবারের লোকরাই। নিম্নবিত্ত মানুষের শেষ ভরসা কিন্তু ওই ফুটপাথ। সেখানে ‘কারচুপি’র বালাই নেই।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, রূপগঞ্জের কারচুপির মান খুই ভালো। কারচুপি শিল্পীরা অনেক ভালো কাজ করে। ভবিষ্যতে এ সুনাম অক্ষুন্ন থাকবে।

 মীর আব্দুল আলীম/এমজেড/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।