ভূমিকম্প মোকাবেলায় বিকল্প ইট


প্রকাশিত: ০৩:৫৩ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫

ভূমিকম্প মোকাবেলায় বিকল্প ইটের আবিষ্কার করেছেন বাংলাদেশ কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (বিসিএসআইআর) এর সাবেক পরিচালক ড. কাজী নাসরিন ফারুকী। এটি সাধারণ ইটের চেয়ে ভূমিকম্প মোকাবেলায় বেশি সহনশীল হবে বলে আশা করেন আবিষ্কারক। এমনকি এ ইট ব্যবহারে বর্তমানে মাটি দিয়ে তৈরি ইটের চেয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ ক্ষতি কমিয়ে আনা যাবে। এ উপলক্ষে রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে
‘ভূমিকম্প ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা (আর্থকোয়াক রিস্ক ম্যানেজমেন্ট)’ শীর্ষক দিনব্যাপী সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া এ সেমিনার চারটি সেশনে শেষ হয় বিকেল সোয়া ৫টায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট এবং কার্জন হল এনভায়রনমেন্টাল ক্লাব যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করেন।

গতানুগতিকভাবে দেশে নির্মিত ইট কৃষি জমির মাটি কেটে নিয়ে নির্মিত। এর দরুণ কৃষি জমির ক্ষয় হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে এটি যেখানে পোড়ানো হয় সেখানকার আশপাশের এলাকায় পরিবেশ দূষিত হয়। এর আশপাশের মানুষ সব সময় এর দোয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এমনকি এসব এলাকার বৃক্ষসমূহের পাতা ঝরে যাওয়া থেকে শুরু করে সেগুলো মরে যাচ্ছে। যা গ্রীণ হাউজ ইফেক্টের মতো বড় ধরণের ক্ষতি করছে। তাই এটি পরিবেশ বান্ধব নয়। এ ছাড়াও এ ইট তৈরিতে কাঠ এবং কয়লা অপচয় হচ্ছে। যার কারণে এর পেছনে খরচও হচ্ছে বেশী। এর ওজনও অনেক বেশী হয়ে থাকে। অন্যদিকে ভূমিকম্প এর সময় যেহেতু হালকা ভবনে ক্ষতি কম হয় সেহেতু এ ইট ভারী হওয়ায় এর দ্বারা নির্মিত ভবনের ক্ষতির পরিমাণও হয়ে থাকে বেশী।

তাই এর বিকল্প তৈরিতে চেষ্টা করা হচ্ছে দীর্ঘদিন যাবৎ। যেটি পরিবেশ বান্ধব, কম খরচ ও ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ মোকাবেলায় কার্যকর হতে পারে।

ড. কাজী নাসরিন ফারুকী দীর্ঘদিন যাবৎ এর বিকল্প আবিষ্কারে রিচার্স করে যাচ্ছেন। অবশেষে তিনি তার রিচার্সে আবিষ্কার করলেন এমন একটি ইটের যা ভূমিকম্পসহ যেকোন ধরণের দূর্যোগ মোকাবেলায় অনেকটা সহনশীল হবে। তার আবিষ্কৃত ইটের উপাদান হিসেবে তিনি ব্যবাহার করেছেন কৃষি জমির মাটি নয় বরং আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ফেলে দেয়া বিভিন্ন বর্জ।

তিনি এই ইট তৈরিতে তার রিচার্সে ব্যবহার করেছেন ধানের তুষ, চুন, বালু এবং পানি। এগুলোকে এক সঙ্গে করে তৈরি করেছেন আঠা। এরপর এগুলো খন্ড খন্ড ভাবে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রেখে তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে মাটি ছাড়া একটি ইট তৈরি করতে হয়। এই ইটে তৈরিতে আমাদের দেশে ম্যানুফেকচারগুলোতে তৈরি ইটের খরচ এর চেয়ে অনেক কম পড়বে এবং এর ওজনও কম। এর নির্মাতা বলেন, এর ওজন মাটির তৈরি ইটগুলোর চেয়ে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ কম হবে। তাই এটি ব্যবহারে ভূমিকম্পে ক্ষতির সম্ভবনাও কম হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কারণ ভূমিকম্পে সাধারণত যে ভবনের ওজন যত বেশী তার ক্ষতিও বেশী। কিন্তু এ ইট ব্যবাহার করলে এর ওজনও কম হবে। তাছাড়া এটি পরিবেশ বান্ধব। কারণ এটি তৈরিতে এটিকে আগুনে পোড়াতে হবেনা। নির্দিষ্ট একটি তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট সময় রেখে একে ব্যবাহর উপযোগী করে তোলা হবে।

ড. কাজী নাসরিন ফারুকী ১৯৭৯ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (বিসিএসআইআর) এ বেশ বিল্ডিং তৈরির উপাদান নিয়ে রিচার্স করেন। তার রিচার্স সমূহের মধ্যে রয়েছে টাইলস, কম্পোজিট সিমেন্ট, পলিমার কম্পোজি সিমেন্ট (বাংলাদেশে একমাত্র রিচার্স) এর উপর রিচার্স।

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ থেকে ১৯৭৮ সালে মাস্টার্স শেষ করেন। এরপর ১৯৯৩ সালে নেদারল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এনভায়রণমেন্টাল সায়েন্সের ওপর মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। বিভিন্ন সেশনে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অ্যান্ড এনভায়রণমেন্ট অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. আ হ ম মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক ড. রাকিব আহসান, মো. আবু সাদেক প্রমূখ।

প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, মানুষের জীবনের প্রথম কাজ হচ্ছে বিকল্প খোঁজা। এটি মানব জাতির অভ্যাস। তাই এর জন্য আমাদের জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন উপাদান আবিষ্কার করতে হবে। কিন্তু যে সমাজে  সবকিছু বদ্ধমূল এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে, সেখানে বিকল্প খোঁজার শক্তি কয় জনের আছে সেটাও চিন্তার বিষয়। তিনি বলেন, আজকে দিনের যারা শিক্ষার্থী রয়েছ তোমরা বিকল্প খোঁজ।

তোমাদের মনকে খোলা কর। বিকল্প খুঁজলেই আমাদের দেশটির অনেক কিছুরই অর্থনৈতিক সমাধান হবে। যেখানে কম খরচ কিন্তু অর্জন বেশী। সেখানে মনেযোগী হও। বর্জ দিয়ে তৈরি এ ইটটিও কার্যকর হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ এন্ড এ্যানভায়রনমেন্ট অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, আমাদের এ অঞ্চলে যে কোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ অঞ্চলে ভূমিকম্প হওয়ার জন্য যে সব সিগমেন্ট থাকে, এর সবগুলো সিগমেন্টই রয়েছে। দেশের অধিকাংশ ভবনই ঝুঁকিতে রয়েছে। ২০০৯ সালের এক হিসাবে দেখা যায়, ঢাকায় তিন লাখ ২৬ হাজার ভবন রয়েছে। এর মধ্যে ভূমিকম্পের ফলে ৭৮ হাজার ভবন ধসে পড়বে। অন্যান্য ভবনও ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এছাড়া চট্টগ্রাম ও সিলেটের অধিকাংশ ভবন ভূকম্পনের সম্ভাব্য ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, যদি ভবনের ওজন কমানো যায়, তাহলে সেই ভবন ভূমিকম্পের ঝুঁকি কম থাকে। আবার ভবনের ওজন বেশি হলে সেই ভবনের জন্য ঝুঁকি আরো বেশি থাকে। তাই আমাদের ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে এর ওজন ও উচ্চতার দিকে বেশি খেয়াল রাখতে হবে। ঝুঁকি কম এমন নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করতে হবে।

এমএইচ/এএইচ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।