নিষেধাজ্ঞার মুখে আলোচনার প্রস্তাবে সাড়া দেবে না ইরান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:৫৭ এএম, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রসঙ্গে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, নিষেধাজ্ঞার মুখে আলোচনার প্রস্তাবে ইরান সাড়া দেবে না। যে শত্রু নিষেধাজ্ঞা, চাপ প্রয়োগ ও দারিদ্র্যের অস্ত্র দিয়ে ইরানকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করতে চায়, তার সঙ্গে আলোচনার প্রশ্নই ওঠে না।

বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম বার্ষিক অধিবেশনে দেয়া ভাষণে এ কথা বলেন রুহানি।

জাতিসংঘে ভাষণ দেয়ার জন্য গত ২৪ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্ক পৌঁছান রুহানি। এরপর ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তাকে আলোচনায় বসতে উৎসাহিত করার জন্য ইউরোপীয় দেশগুলো ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতা চালায়। বিশেষ করে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ একাধিকবার রুহানির সঙ্গে দেখা করে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতে উৎসাহিত করার চেষ্টা করেন।

কিন্তু তার ভাষণে আলোচনার পূর্বশর্ত হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে পরমাণু সমঝোতায় ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে রুহানি বলেন, পরমাণু সমঝোতায় ফিরে এসে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন, তাহলেই কেবল আলোচনার পথ উন্মুক্ত হতে পারে। আমেরিকা এমন সময় ইরানকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানাচ্ছে যখন সে নিজে চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেছে।

পরমাণু সমঝোতাকে ‘ইরানের ন্যূনতম দাবি’ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনারা আরও বেশি চাইলে আমাদেরকে আরও বেশি দিতে হবে।

রুহানি তার ভাষণে পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোকে নিয়ে একটি নতুন জোট গঠনের প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, আমি পারস্য উপসাগর ও হরমুজ প্রণালীর ঘটনাবলীতে জড়িত দেশগুলো নিয়ে একটি জোট গঠনের প্রস্তাব করছি, যার নাম হতে পারে ‘কোয়ালিশন অব হোপ’ বা ‘প্রত্যাশার জোট’।

প্রায় দুই সপ্তাহ আগে সৌদি আরবের দুটি তেল স্থাপনায় ইয়েমেনের ড্রোন হামলাকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যে যখন নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে, ঠিক তখন এ প্রস্তাব দিলেন প্রেসিডেন্ট রুহানি। ইয়েমেনের হুথি আনসারুল্লাহ যোদ্ধারা ওই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব ওই হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করে। তবে তেহরান কঠোর ভাষায় এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে এসেছে।

রুহানি তার ভাষণে বলেন, মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধ, রক্তপাত, আগ্রাসন, ধর্মীয় উগ্রতা ও জঙ্গিবাদের আগুনে জ্বলছে এবং এই আগুনের সবচেয়ে বড় শিকার ফিলিস্তিনিরা। ফিলিস্তিনের স্বাধীকার আন্দোলন থেকে বিশ্ববাসীর দৃষ্টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার লক্ষ্যে এই আগুন জ্বালানো হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইহুদিবাদী ইসরাইল মিলে ‘ডিল অব সেঞ্চুরি’ নামের যে পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে তা অবশ্যই ব্যর্থ হবে।

ইরানের ওপর গত প্রায় দেড় বছরের মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি এমন একটি দেশ থেকে এসেছি যে দেশের জনগণ গত দেড় বছর ধরে ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম অর্থনৈতিক সন্ত্রাসবাদের শিকার। যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা ও হুমকির মাধ্যমে ইরানি জনগণকে বিশ্ব অর্থনীতির সুবিধা থেকে বঞ্চিত রাখার চেষ্টা করার পাশাপাশি ব্যাংকিং ব্যবস্থার অপব্যবহার করে আন্তর্জাতিক দস্যুবৃত্তি চালু করেছে।

ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা সত্ত্বেও ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার তেহরানের সঙ্গে আলোচনায় বসার যে আগ্রহ প্রকাশের বিষয়ে রুহানি বলেন, মার্কিন শাসকগোষ্ঠী কীভাবে ইরানি জনগণের বিরুদ্ধে চাপ প্রয়োগ করে গর্ব করতে পারে? ইরানি জনগণ তাদের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অপরাধযজ্ঞে জড়িতদের যেমন কোনোদিন ভুলবে না, তেমনি ক্ষমাও করবে না।

ইরানের পরমাণু সমঝোতা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের একতরফাভাবে বেরিয়ে যাওয়া এবং ইউরোপের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করার ব্যাপারে রুহানি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও ইরান এখন পর্যন্ত এটি মেনে চলেছে এবং ইউরোপকে এই সুযোগ দিয়েছে যে, তারা যেন ইরানের আর্থিক ক্ষতিটি পুষিয়ে দেয়। কিন্তু আমরা ইউরোপীয়দের পক্ষ থেকে শুধু কথা শুনেছি, কিন্তু কোনো বাস্তবায়ন দেখিনি।

সূত্র : পার্সটুডে

এমএসএইচ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।