মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের প্রমাণ দেখিয়ে তরুণী গ্রেফতার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬:৫৬ পিএম, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

ভারতের সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বিজেপি নেতা চিন্ময়ানন্দের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ তোলা শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে দেশটির পুলিশ। তার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক চাঁদা আদায়ের অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার গ্রেফতার করা হয়।

তরুণীর পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ আজ সকালে জোর করে তাকে তুলে নিয়ে যায়। পায়ে জুতা পরার সময় দেয়া দেয়নি। প্রথমে হাসপাতালে নিয়ে মেডিকেল পরীক্ষা করানোর পর তাকে গ্রেফতার করা হয়। মেয়েটির বাবা জানিয়েছেন, তার মেয়েকে জোর করে পুলিশের কাগজপত্রে সই করানো হয়।

অভিযুক্ত ৭২ বছর বয়সী চিন্ময়ানন্দকে গত শুক্রবার সকালে গ্রেফতার করা হলেও এখন তিনি কারাগারে নেই। দুদিন কারাগারে থাকার পর রোববার তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার ওই ছাত্রীর আগাম জামিনের শুনানি ছিল। কিন্তু তার আগেই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করলো।

ক্ষমতাসীন কট্টর হিন্দুতত্ববাদী দল বিজেপির নেতা স্বামী চিন্ময়ানন্দ বেশ প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ। উত্তরপ্রদেশে কয়েকটি আশ্রম ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন তিনি। গত মাসে তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে ২৩ বছর বয়সী তরুণী বলেন, ‘পুলিশ ধর্ষণের অভিযোগ গ্রহণ করতে চায়নি।’

রাজ্যের শাহজানপুরের স্থানীয় আদালতে জামিন আবেদনের শুনানির জন্য যাচ্ছিলেন মেয়েটি। পথে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের একটি বিশাল দল তাকে নাটকীয়ভাবে গাড়ি থামিয়ে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে জোর করে তাদের গাড়িতে বসতে বাধ্য করে। আদালতে শুনানি রয়েছে বললেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।

গত সপ্তাহে আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে ওই শিক্ষার্থী বলেন, কলেজে ভর্তিতে সহযোগিতার দোহাই দিয়ে এক বছর ধরে তার ওপর যৌন নির্যাতন করেছে চিন্ময়ানন্দ। তার গোসলের ভিডিও ধারণ করে তা নিয়ে ব্ল্যাকমেল করার অভিযোগও তুলেছেন তিনি।

তরুণীর জানিয়েছেন, গত বছরের জুনে ৭৩ বছরের চিন্ময়ানন্দের সঙ্গে আলাপ হয় তার। শাহজানপুরের এসএস ল কলেজের পরিচালক চিন্ময়ানন্দ তাকে কলেজে ভর্তি হতে সাহায্য করেন। ফোন নম্বর চেয়ে নেন। পারিবারিক দুরবস্থার কথা জেনে কলেজের লাইব্রেরিতে পাঁচ হাজার টাকার চাকরিও দেন।

তরুণী ১২ পৃষ্ঠার জবানবন্দিতে জানিয়েছেন, তারপর থেকে তার উপর অত্যাচার শুরু হয়। চিন্ময়ানন্দ নিজের আশ্রমেও তাকে ডেকে পাঠান। সেখানে গেলে তার গোসল করার একটি ভিডিও রেকর্ডিং দেখান। ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে তাকে নিয়মিত ধর্ষণ করেন চিন্ময়ানন্দ।

ধর্ষণের সময়ও সাবেক মন্ত্রী ভিডিও ধারণ করেন বলে অভিযোগ ওই তরুণীর। তার দাবি, সেই ভিডিও দেখিয়ে পরবর্তীতে একাধিকবার তাকে ব্ল্যাকমেইল ও ধর্ষণ করেন চিন্ময়ানন্দ। মাঝে মধ্যে তাকে ডেকে পাঠালে যদি রাজি না হত তাহলে নানাভাবে তাকে যেতে বাধ্য করা হত।

chinmayanad-case

দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই চলছিল। শেষে নিরুপায় তরুণী চশমায় লাগানো গোপন ক্যামেরার সাহায্যে চিন্ময়ানন্দের ভিডিও ধারণ করেন। প্রমাণ হিসেবে সেই ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করেন। বিজেপির ওই সাবেক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রমাণ হাজির করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে ওই তরুণী।

এনডিটিভিকে ওই তরুণী বলেন, ‘আমি এর আগে পুলিশকে বিস্তারিত বলেছি যে, আমাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। তবুও তাকে (চিন্ময়ানন্দ) ধর্ষণে অভিযুক্ত করা হয়নি। আমি ঠিক এই ভয়টাই পেয়েছিলাম। জোরপূর্বক চাঁদা আদায়ের মামলায় আমার কিছুই করার নেই।’

তবে বিজেপির প্রভাবশালী ওই নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ না এনে ‘ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে যৌন সঙ্গমের‘ অভিযোগ আনা হয়েছে। দোষী প্রমাণিত হলে অভিযুক্তকে পাঁচ থেকে দশ বছরের কারাদণ্ড হবে। তবে ধর্ষণের অভিযোগ আনলে সাত বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারত।

এসএ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।