পদ্মার চর থেকে ৩০ গরু ব্যবসায়ীকে উদ্ধার
লৌহজংয়ে পদ্মা নদীতে গরুবাহী ট্রলারে ডাকাতির ঘটনার তিন দিন পার হলেও এখনো খোঁজ মেলেনি ৪৫টি গরুসহ ট্রলারটির। তবে শনিবার বিকেলে ফরিদপুরের সুরেশ্বর এলাকার পদ্মার চরের কাশঁবন থেকে ডাকাতের কবলে পড়া লৌহজংয়ের গফুর ভাণ্ডারি ট্রলারের মাঝিসহ ৩০ জন গরু ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করা হয়েছে।
গফুর ভাণ্ডারি ট্রলারের মাঝি মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার বনসেমন্ত গ্রামের মৃত সামাদ হাওলাদারের ছেলে আল আমিন (৩২) এই প্রতিবেদককে জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মাদবরের চর পশুর হাট থেকে গরু কিনে ৩০ জন পাইকারসহ গরু বোঝাই ট্রলারটি মাদবরের চর থেকে ছেড়ে আসে লৌহজংয়ের উদ্দেশ্যে পদ্মা পাড়ি দিয়ে লৌহজংয়ের সীমানায় আসার আগ মুহূর্তে ছোট একটি ট্রলার নিয়ে ২০/২৫ জনের একটি ডাকাত দল গরু বোঝাই ট্রলারটির গতি রোধ করে। এরপর তারা ট্রলারটিতে চাপাতি, ছুরি ও পিস্তল দিয়ে হামলা চালায়। ডাকাতরা গরুর ট্রলারে উঠে সবাইকে হাত ও পা বেঁধে মারধর করতে থাকে এবং তাদের সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে সবগুলো মোবাইল নদীতে ফেলে দেন। পরে ডাকাতদের ট্রলারে উঠিয়ে একটি কালো পর্দা দিয়ে ঢেকে দেয় যাতে দূর থেকে কেউ বুঝতে না পারে।
কোনো রকম শব্দ করলে সবাইকে জানে মেরে ফেলার হুমকি দেয় ডাকাতরা। গরুর ট্রলারটি পদ্মার ভাটির দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সুশ্বেরের একটি পদ্মার চরের কাঁশবনে নিয়ে ফেলে রেখে গরুর ট্রলার নিয়ে বরিশালের দিকে চলে যায় ডাকাত দল। নিখোঁজ হওয়া ট্রলার ও তাদের লোকজনকে সারা রাত খুঁজে বেড়ায় লোকজন। এ ঘটনায় শনিবার দুপুর পর্যন্ত কোনো খোঁজ মেলেনি ট্রলারে থাকা ব্যবসায়ীদের।
বিকেলে সুরেশ্বরের পদ্মার চরে লোকজনের ডাকচিৎকারের আওয়াজ পেয়ে চরের মধ্যে মাছ ধরতে আসা জেলেরা এগিয়ে এলে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তাদেরকে দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে ফরিদপুরের চন্দ্রীপুর এলাকায় ঘাটে এনে দিয়ে যাওয়া হয়।
ডাকাতি হওয়া গরু ব্যবসায়ীদের মধ্যে রয়েছে সিরাজদিখাঁন উপজেলার ধামালিয়া গ্রামের হালেম বেপারীর ৩টি, একই গ্রামের আমান উদ্দিন বেপারীর ২টি, লাল মিয়ার ৪টি, দীন ইসলামের ৩টি , লৌহজং উপজেলার বাসুদিয়া গ্রামের জুলহাস দেওয়ানের ৪টি, একই গ্রামের রিপন দেওয়ানের ৩টি, কাজিরগাঁ গ্রামের আকবর বেপারীর ২টি, টঙ্গীবাড়ি উপজেলার পূর্ব বালিগাঁও গ্রামের লিটন পাঠানের ৪টি গরু রয়েছে। এছাড়াও আরো বিভিন্ন এলাকার পাইকারদের গরুও এই ট্রলারে ছিল বলে জানান ট্রলারের মাঝি আলআমিন।
ট্রলারের মাঝি গফুর মিয়ার অভিযোগ এই বিষয়ে লৌহজং থানায় যোগাযোগ করা হলে থানা থেকে তাকে জানানো হয় এই ঘটনাটি যেহেতু নড়িয়া থানায় সেখানেই অভিযোগ করতে হবে। এই বিষয়ে লৌহজং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোল্লা জাকির হোসেন জাগো নিউজকে জানান, পদ্মায় যে এলাকায় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে এটা আমাদের থানা এলাকায় নয় বিধায় কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না। তবে খোঁজ খবর নিচ্ছি।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাতে শরীয়তপুরের মাদবরের চর এলাকা থেকে ৪৫টি কোরবানির পশু নিয়ে একটি ট্রলার লৌহজংয়ে আসার পথে মাঝ পদ্মায় ডাকাতরা হামলা চালিয়ে অস্ত্রের মুখে ভয় দেখিয়ে গরু ভর্তি ট্রলারটি ছিনতাই করে নিয়ে যায় ফরিদপুরের সুরেশ্বরের চরে। গত তিন দিনেও গরু বোঝাই ট্রলারটির কোনো সন্ধান মেলেনি।
এমজেড/এমএস