পারমাণবিক যুদ্ধের শঙ্কা নিয়ে আলজাজিরাকে যা বললেন ইমরান খান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:২১ পিএম, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

কাশ্মীর সঙ্কট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। একই সঙ্গে এই বিরোধ ভারত-পাকিস্তান সঙ্কটের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসায় পারমাণবিক যুদ্ধের শঙ্কা এবং যুদ্ধ হলে পুরো বিশ্বই ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাশ্মীর পরিস্থিতি মোকাবেলায় পাকিস্তানের হাতে সীমিত বিকল্প রয়েছে।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সব সম্প্রদায়, বিশেষ করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর গঠিত জাতিসংঘর কাছে যাওয়া ছাড়া আমাদের বেশি কিছু করার নেই। জাতিসংঘ, চীন, রাশিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর কাছে কাশ্মীর সঙ্কট তুলে ধরা হয়েছে।

গত ৫ আগস্ট ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর বৈশ্বিক জোরালো প্রতিক্রিয়া দেখতে না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন ইমরান খান। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনক হলো এই পুরো বিষয়টি ঘটছে একটি বিশাল বাজারের জন্য। কিছু কিছু দেশ আছে যারা বড় বাজারের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারা ভারতকে এক বিলিয়ন মানুষের একটি বাজার হিসেবে দেখে। কিন্তু তারা বোঝে না যে, এই মুহূর্তে যদি সেখানে হস্তক্ষেপ না করা হয়, তাহলে এটি শুধুমাত্র এই উপমহাদেশের বিপর্যয় ডেকে আনবে না; বরং প্রত্যেকেই আক্রান্ত হবে।

পারমাণবিক যুদ্ধের সম্ভাবনা

পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই প্রতিবেশি দেশের মাঝে আকস্মিক পারমাণবিক যুদ্ধ বাধতে পারে বলে পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশির মন্তব্যের ব্যাপারে জানতে চাইলে ইমরান খান বলেন, একেবারে সত্য। কাশ্মীরে যা ঘটছে, সেটি হলো সেখানে কম কিংবা বেশি গণহত্যা চালাচ্ছে ভারত। সেখানে মানুষের ওপর জাতিগত হামলা হচ্ছে। আমি মনে করি, জার্মান নাৎসি শাসনের পর এ ধরনের হামলা দেখা যায়নি।

পাক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত প্রায় ছয় সপ্তাহ ধরে কাশ্মীরের ৮০ লাখ মানুষ অবরুদ্ধ অবস্থায় দিন পার করছে। যে কারণে এটি পাক-ভারত সংঘাতের কিন্দুবিন্দুতে চলে আসতে পারে। কারণ সেখানে অবৈধ দখলদারিত্ব ও গণহত্যা পরিচালনা করছে ভারত। আর এটি থেকে বিশ্বের নজর অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে তারা।

‘তারা সন্ত্রাসবাদের জন্য পাকিস্তানকে দোষারোপ করে মানুষের মনযোগ অন্যদিকে নিয়ে যাচ্ছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ভারতের আধা-সামরিক পুলিশ বাহিনীর ওপর আত্মঘাতী হামলার পর একই ধরনের কাজ করেছিল নয়াদিল্লি। তারা এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে এবং আমাদের ওপর বোমা বর্ষণ করে।’

ইমরান খান বলেন, আমরা আশঙ্কা করছি, এ ধরনের ঘটনা আবারো ঘটবে। কারণ কাশ্মীরে তারা যা করছে, সেটির প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে এবং গণহত্যা থেকে মানুষের মনযোগ ঘুরিয়ে দেয়ার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করা হবে।

পাকিস্তান আক্রান্ত হওয়ার আগেই প্রথমে পারমাণবিক হামলার নীতির ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এটা নিয়ে কোনো দ্বিধা নেই। আমি আগেও বলেছি যে, পাকিস্তান কখনো যুদ্ধ শুরু করবে না। এ ব্যাপারে আমার অবস্থান পরিষ্কার। আমি শান্তিকামী, যুদ্ধবিরোধী। কিন্তু আমি পরিষ্কারভাবে বলেছি যে, যখন পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুটি প্রতিবেশি দেশ যুদ্ধ করে... যদি এটি প্রচলিত যুদ্ধও হয়, তাহলে এর শেষ হতে পারে পারমাণবিক যুদ্ধের মাধ্যমে।’

এবার যদি কাশ্মীর ঘিরে প্রচলিত যুদ্ধও হয়, তাহলে পাকিস্তানিরা তাদের শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত লড়াই করবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন পাক এই প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, যখন পারমাণবিক অস্ত্রধারী একটি দেশ শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত যুদ্ধ করে, তখন এক ধরনের বিপর্যয় তৈরি হয়। যে কারণে আমরা জাতিসংঘসহ প্রত্যেকটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই মুহূর্তে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছি। কারণ এটি একটি সম্ভাব্য বিপর্যয়; যা ভারতীয় উপমহাদেশের বাইরে ছড়িয়ে পড়বে।

এসআইএস/এমএস

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।