কে নেবে মৃত্যুর দায়ভার?
টাঙ্গাইলের কালীহাতীতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে তিনজন নিহত হওয়ার ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। পুলিশের দায়িত্ব হচ্ছে জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া। সেই পুলিই যদি মানুষের জীবননাশের কারণ হয় এরচেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে। যে তিনটি তাজা প্রাণ ঝরে গেল কে নেবে এই মৃত্যুর দায়ভার। পুলিশের প্রতি জনআস্থা ফিরিয়ে আনা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য তদন্ত সাপেক্ষে দোষী ব্যক্তির শাস্তি নিশ্চিত করাই হবে এই মুহূর্তের করণীয়।
জানা গেছে, কালীহাতী উপজেলা সদরের সাতুটিয়া এলাকার মোজাফফর হোসেনের ছেলে রফিকুল ইসলাম ওরফে রোমার স্ত্রীর সঙ্গে পার্শ্ববর্তী ঘাটাইল উপজেলার শ্রমজীবী আলামিনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কয়েক মাস আগে আলামিনের সঙ্গে পালিয়ে যায় সে। পরে তাকে ফিরিয়ে আনা হয়। এরপর গত ১২ সেপ্টেম্বর আবারো আলামিনের সঙ্গে পালিয়ে রোমার স্ত্রী।
মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে রোমা ও তাদের পরিবারের লোকেরা আলোচনার কথা বলে আলামিন, তার মা ও রোমার স্ত্রীকে রোমাদের বাড়িতে ডেকে নিয়ে যায়। পরে বাড়ির উঠানে আলামিনকে বিবস্ত্র করে রোমা ও তার ভগ্নিপতি হাফিজ। এ সময় আলামিনের মাকেও বিবস্ত্র করা হয়। নির্যাতিতার পক্ষ থেকে ধর্ষণের অভিযোগও আনা হয়।
এই ঘটনায় মঙ্গলবার রোমা, হাফিজসহ তিনজনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে কালিহাতী থানায় মামলা করেন আলামিনের মা। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে রোমা ও হাফিজকে আটক করেছে পুলিশ। এই ঘটনায় দু`দল গ্রামবাসীর মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। শুক্রবার রাস্তা অবরোধ করে নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভের সময় এলাকাবাসী ও পুলিশ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে পুলিশের গুলিতে শামীম (৩২), ফারুক (৩৫) ও শ্যামল দাস (১৫) নামে তিনজন নিহত হয়। এ সময় আহত হয় আরও অর্ধশতাধিক ব্যক্তি ।
যে কোনো পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধারণ করে দায়িত্ব পালন করাই হচ্ছে পুলিশের কাজ। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে পারে। তবে তার মধ্যে পেশাদারিত্ব, দক্ষতা এবং সর্বোপরি দায়িত্বশীলতার পরিচয় থাকতে হবে। এ ধরনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে প্রশিক্ষণ দিয়েই মাঠে নামানো হয়। এরপরও প্রাণহানির মত বিয়োগান্তক ঘটনা কেন এড়ানো গেল না সেটি অবশ্যই দেখার বিষয়। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে লোকজনকে বেঘোরে প্রাণ দিতে হবে এটা মেনে নেওয়া যায় না। প্রাণহানি কিংবা সম্পদের ক্ষতি ব্যতিরেকে এই ধরনের পরিস্থিতি কিভাবে সামাল দেওয়া যায় সে বিষয়ে পুলিশকে আরও দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি পুলিশের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাও জরুরি। এতে পুলিশের দায়িত্বশীলতা বাড়বে।
যে তিনজন নিহত হয়েছেন তাদের মৃত্যুর দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারে না পুলিশ। এ জন্য তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে বিভাগীয় তদন্ত হলে সেক্ষেত্রে নিরপেক্ষ তদন্ত না হওয়ারই আশঙ্কা থাকে। এক্ষেত্রে বিচারবিভাগীয় তদন্ত হওয়া উচিত।জেলাপ্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণের কথা বলা হয়েছে। আমরা আশা করবো, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের জন্য সরকার প্রয়োজনীয় সবকিছু করবে। যারা আহত হয়েছেন তাদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। এ ঘটনায় যাতে এলাকাবাসীকে উল্টো হয়রানির মধ্যে পড়তে না হয় সেটিও নিশ্চিত করতে হবে। সবার আগে দোষী ব্যক্তির শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা যায়।
এইচআর/এমএস