চন্দ্রাভিযানের রাজনীতি: আবেগপ্রবণ মোদি প্রশংসায় রাহুল দিদির খোঁচা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:১৮ পিএম, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

চাঁদের পৃষ্ঠ ছোঁয়ার আগ মুহূর্তে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশনের (ইসরো) নিয়ন্ত্রণকক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে দেশটির পাঠানো মহাকাশ যান ‘চন্দ্রযান-২’ এর। শুক্রবার দিবাগত রাতে এ ঘটনা ঘটে। ভারতীয় সময় শুক্রবার দিবাগত রাত ১ টা ৪০ মিনিট থেকে ১টা ৫৫ মিনিটের মধ্যে চাঁদের মাটিতে পা রাখার কথা ছিল চন্দ্রযান-২ এর অবতরণকারী যান বিক্রমের।

স্বপ্ন দেখিয়ে ইতিহাসের পাতায় যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের পর চন্দ্র জয়ী দেশের তালিকায় চতুর্থ দেশ হিসেবে নাম লেখানোর আগ মুহূর্তে থমকে যায় ভারতের চন্দ্রাভিযান। ইসরো বলছে, অবতরণকারী যান বিক্রমের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণকক্ষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় একেবারে শেষ মুহূর্তে। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে প্রথমবারের মতো এই রোবোটিক যানটির নামার কথা ছিল।

ব্যর্থ অভিযান প্রত্যক্ষ করে বেঙ্গালুরুর স্পেস সেন্টার থেকে বেরিয়ে আসার সময় আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন নরেন্দ্র মোদি। এ সময় ইসরোর চেয়ারম্যান কে সিভান চন্দ্রায়ণকে বেশ কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দেন তিনি।

শনিবার সকাল ৮টার দিকে বেঙ্গালুরুতে ইসরোর কার্যালয় থেকে জাতির উদ্দেশ্যে চন্দ্রাভিযান নিয়ে ভাষণ দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভাষণে বিজ্ঞানীদের অনুপ্রেরণা দিয়ে তিনি বলেছেন, আমি আপনাদের সঙ্গে আছি এবং পুরো দেশ আপনাদের সঙ্গে আছে।

ইসরোর বিজ্ঞানীরা শেষ মুহূর্তে এসে হতাশায় ভেঙে পড়লেও তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন দেশটির প্রধানবিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী। বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তিনি। চাঁদে ভারতের ব্যর্থ অভিযানের পর ইসরোর প্রশংসা করে টুইট করেছেন রাহুল গান্ধী। টুইটে বলেছেন, ইসরোর বিজ্ঞানীরা চন্দ্রযান-২ নিয়ে চাঁদে অভিযানের অসাধারণ যাত্রা শুরু করেছিলেন। এ জন্য তাদের অভিনন্দন।

কংগ্রেসের প্রধান সোনিয়া গান্ধী শনিবার সকালের দিকে এক বিবৃতিতে বলেছেন, ভারতের দ্বিতীয় চন্দ্রাভিযান চন্দ্রযান-২ এর মিশন নিয়ে পুরো জাতি অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিল। তাদের এই অপেক্ষা ছিল প্রত্যেকটা ধাপে।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, প্রত্যেকটি প্রতিবন্ধকতাই ভবিষ্যতের সফলতার একটি ধাপ। ইসরোর বিজ্ঞানীদের প্রশংসা করে ৭২ বছর বয়সী এই রাজনীতিক বলেন, আমরা ইসরোর মেধাবী পুরুষ এবং নারী কর্মীদের কাছে প্রচণ্ড ঋণী। তাদের কঠোর পরিশ্রম এবং উৎসর্গ মহাকাশে পাড়ি জমানো দেশগুলোর কাতারে ভারতকে নিয়ে গেছে।

তবে চন্দ্রাভিযান নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় দেশটির ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন সরকারের ব্যাপক সমালোচনা করেছেন। শুক্রবার চাঁদের মাটিতে ভারতের পা রাখার আগ মুহূর্তে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন তিনি।

মমতা বলেন, বিজেপি চন্দ্রযান-২ মিশনকে এমন অবস্থানে নিয়ে গেছে যেন তারাই এমন কাজ প্রথম কাজ করছে! এই কাজটি (চন্দ্রাভিযানের গবেষণা) গত ৬০-৭০ বছর ধরে চলছে।

পশ্চিমবঙ্গের এই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নরেন্দ্র মোদি হঠাৎ করেই বেঙ্গালুরুতে ইসরোর সদর দফতরে গেছেন। এখন পর পর চারদিন ধরে এই ইস্যু চলবে; ভারতের চন্দ্রযান! যেন বিজেপিই দেশের সব কিছু করেছে! যেন তারাই বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে। এটা অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে সবার নজর ঘুরিয়ে দেয়ার রাজনীতি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসরোর এক বিজ্ঞানী দেশটির বার্তাসংস্থা আইএএনএসের কাছে দাবি করেন, বিক্রম ল্যান্ডারটি ধ্বংস হলেও অরবিটার হিসেবে চন্দ্রযান-২ এর ৯৫ শতাংশই অক্ষত অবস্থায় রয়েছে। সেটি চাঁদের নির্দিষ্ট কক্ষপথে সফলভাবে ঘুরছে।

এসআইএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।