শুল্ক রেয়াত ও প্রত্যর্পণ পরিদফতর অনিয়মের আখড়া!


প্রকাশিত: ০২:০১ পিএম, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫

অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের অধীনস্ত শুল্ক রেয়াত ও প্রত্যর্পণ পরিদফতর (ডেডো) অনিয়মের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠানটির অপর্যাপ্ত অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কারণে অনিয়ম হচ্ছে। আর এতে প্রতিবছরই সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এজন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।

জাতীয় সংসদ ভবনে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় উপস্থাপিত প্রতিবেদনে এ তথ্য ওঠে এসেছে।

উপস্থাপিত প্রতিবেদনে শুল্ক, রেয়াত ও প্রত্যর্পণ পরিদফতর এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে রফতানির বিপরীতে শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর প্রত্যর্পণ সংক্রান্ত অর্থ বছর ২০০৫-২০১০ অর্থ বছরের হিসাব তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রাপ্য সমহারের চেয়ে অতিরিক্ত হারে প্রত্যর্পণ দেয়ার কারণে ৬৫ লাখ ৭৬ হাজার ৪০ টাকা রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে সরকারের। রফতানিকৃত মাছ আহরণে ব্যবহৃত জ্বালানির মূল্য রফতানিকৃত মাছের মূল্যের অধিক হওয়া সত্ত্বেও প্রত্যর্পণ প্রদানের কারণে রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে আরো ২ কোটি ৮২ লাখ ৩৪ হাজার ৪৮৫ টাকা।

এছাড়া প্রচ্ছন্ন রফতানিকারকে প্রত্যর্পণ প্রদানের ক্ষেত্রে রফতানিকারকের মাধ্যমে চূড়ান্ত রফতানির কোনো প্রমাণ ছাড়া ৮৭ লাখ ২৮ হাজার ৭৭১ টাকা প্রত্যর্পণ প্রদান এবং ধারাবাহিকভাবে আমদানী উপকরণ ব্যবহার না দেখিয়ে প্রত্যর্পণ প্রদানের কারণে ১ কোটি ৭ লাখ ৩২ হাজার ৭৪ টাকা রাজস্ব ক্ষতি করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

মূল্য সংযোজন কর রেয়াত গ্রহণ না করায় কোনো ধরনের প্রমাণাদি ছাড়া অনিয়মিতভাবে প্রত্যর্পণ প্রদানের কারণে আরও ৫ কোটি ৭৯ লাখ ৯৫ হাজার ৬৪৯ টাকা রাজস্ব ক্ষতি এবং প্রকৃত সমাহারের চেয়ে অতিরিক্ত হারে প্রত্যর্পণ প্রদানের কারণে ৪০ লাখ ২৩ হাজার ৪০ টাকা রাজস্ব ক্ষতির চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে এতে।

এছাড়া মূল চুক্তিপত্রে সমাহার অনুযায়ী পণ্যের তালিকায় রফতানিকৃত পণ্যের নাম না থাকা সত্ত্বেও অনিয়মিতভাবে ৫১ লাখ ২২ হাজার ২৩৬ টাকা প্রত্যর্পণ প্রদান এবং বিল অব লেডিং (বিএল) ও শিপিং বিলে রফতানিকৃত পণ্যের ওজনের মধ্যে পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও অনিয়মিতভাবে শুল্ক ও মূসক বাবদ ১৩ লাখ ৯ হাজার ৯৮ টাকা প্রত্যর্পণ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।  

কমিটি অনধিক ৬০ দিনের মধ্যে অনাদায়ী টাকা আদায়ের পর জমাকৃত টাকার প্রমাণ নিরীক্ষা অফিসে জমাদান সাপেক্ষে একটি প্রতিবেদন যথাযথ প্রক্রিয়ায় কমিটির নিকট প্রেরণের সুপারিশ করেছে।

এদিকে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে, শুল্ক রেয়াত ও প্রত্যর্পণ পরিদফতরের এই অনিয়ম নতুন কিছু নয়। অনেক আগে থেকেই প্রতিষ্ঠানটি অনিয়মে নিমজ্জিত। স্থানীয় ও রাজস্ব অডিট অধিদফতর পরিচালিত একটি বিশেষ অডিট প্রতিবেদনে ২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে প্রতিষ্ঠানটিতে ৪০ কোটি ২৬ লাখ ৫৯ হাজার ৫৮৬ টাকার অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে এসব অনিয়মের কারণ হিসেবে সরকারি আদেশ ও নির্দেশ পরিপালন না করে শুল্ক ও মূসক বাবদ অতিরিক্ত প্রত্যর্পণ করা, ডেডোর সঠিকভাবে উপকরণ উৎপাদনসহ প্রস্তুত ও তা অনুসরণ না করা, প্রত্যর্পণ মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর এবং প্রাপ্যতা অপেক্ষা অতিরিক্ত শুল্ক-কর প্রত্যর্পণ করা, প্রত্যর্পণ আবেদনের সময়কাল বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও আবেদনের অনেক পরে প্রত্যর্পণ করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া কাস্টমস অ্যাক্ট, ১৯৬৯ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জারিকৃত এ সংক্রান্ত এস, আর, ও এবং সাধারণ আদেশসমূহ যথাযথভাবে অনুসরণ না করা, প্রাপ্য প্রত্যর্পনের চেয়ে অতিরিক্ত প্রদান, মূল্য সংযোজন কর আইন ও বিধি-১৯৯১ যথাযথভাবে অনুসরণ না করা এবং দুর্বল অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি ব্যবস্থার সুযোগে এ অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে বলে জানানো হয়।

কমিটির সভাপতি ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য মো. আব্দুস শহীদ, পঞ্চানন বিশ্বাস, আ ফ ম রুহুল হক, মো. আফসারুল আমীন, বেগম রেবেকা মমিন, শামসুল হক টুকু, মঈন উদ্দীন খান বাদল, রুস্তম আলী ফরাজী এবং ওয়াসিকা আয়েশা খান অংশ নেন।

সিঅ্যান্ডএজি মাসুদ আহমেদ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান, অভ্যন্তরীণ সম্পদ  বিভাগ ও অডিট অফিসের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

এইচএস/একে/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।