সন্তানকে এ কেমন নির্যাতন শিক্ষক বাবার
বগুড়ায় বিয়াম স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক আইনুল হকের শিশু পুত্র আব্দুল্লাহ আহনাব শুভ বাবার পরানো ডান্ডাবেরি নিয়ে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে জয়পুরহাট শহরের এক হোটেল মালিকের কাছে।
পারিবারিক নির্যাতনের শিকার আহত শিশুটিকে মা-বাবার স্নেহ দিয়ে সুস্থ করে তোলার সম্ভাব্য সকল চেষ্টা করে যাচ্ছেন হোটেল সেই মালিক দম্পতি। হোটেল মালিক খবর দিলে বৃহষ্পতিবার বিকেলে পুলিশ এসে শিশুটিকে সেখান থেকে নিয়ে গিয়ে ডান্ডাবেরি কেটে দিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে।
জয়পুরহাট জেলা শহরের স্টেশন রোড এলাকার সিংগাপুর কিচেন নামক ওই ফাস্ট ফুডের দোকানে গিয়ে দেখা যায় লোহার ডান্ডাবেরির ঘষায় ক্ষত হয়ে শিশুটির দুটি পায়ে ঘা হয়ে সেখান থেকে পুঁজ বেরুচ্ছে।
পারিবারিক নির্যাতনের লোমহর্ষক কাহিনীর বর্ণনা দিয়ে শিশু শুভ জানায়, সে বগুড়ার ফুলতলা এলাকার বাসিন্দা ও বিয়াম স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক আয়নুল হক বকুলের ছেলে।
শিশুটির অভিযোগ, ‘মায়ের কোলে থাকতে বাবা ও মার মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় বলে জেনেছি। আমার মা কোথায় আছে তা-ও জানিনা। সেই থেকে সৎ মায়ের সংসারে জ্বালা-যন্ত্রনার মধ্যে ধীরে ধীরে বড় হচ্ছিলাম। ছোটবেলা থেকে সৎ মায়ের জ্বালা-যন্ত্রণা ও বাবার কথায় কথায় মারধর খেয়ে এরই মধ্যে সে স্থানীয় একটি মাদ্রাসাায় ২৪ পারা কোরআনের হাফেজও হয়। প্রতিদিন বাবার শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনে অতিষ্ট শুভ কয়েকবার বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। খোঁজ পেয়ে সেখান থেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর তার ওপর চলত আরো কঠিন নির্যাতন।
এভাবে সে গত ৩/৪ মাস আগেও একবার জয়পুরহাটে এসে ক্ষুদার্থ অবস্থায় ‘সিংগাপুর কিচেন’ নামক ওই ফাস্ট ফুডের দোকানে গেলে হোটেল মালিক মনোয়ারা হক তাকে খেতে দেন। প্রথম বারের মত মাতৃস্নেহ পেয়ে মনোয়ারা হকের কাছে থেকে যেতে না চাইলে তিনি পুত্র স্নেহ দিয়ে লালন পালন করতে থাকেন। আম্মা (মনোয়ারা) আমার পরিচয় পেয়ে বগুড়া থেকে বাবাকে ডেকে এনে অনেক বুঝিয়ে বাবার হাতে তুলে দেন। এখান থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে তাকে বেদম পিটিয়ে তারপর কামারের কাছে গিয়ে তার দুই পায়ে ডান্ডাবেরি দিয়ে তাদের বাড়ির একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখা হতো। বিষয়টি আগে থেকে বুঝতে পেরে সে দোকান থেকে একটি হ্যাচকো ব্লেড কিনে তা পকেটে রেখে দেয়। সুযোগ বুঝে ডান্ডাবেরির সাথে লাগানো শিকল কেটে সে আবারো পালিয়ে গত বুধবার রাতে জয়পুরহাটে এসে তার আশ্রয় দাতা ‘আম্মার’ বাসায় উঠে বলে শুভ জানায়।
সিংগাপুর কিচেনের স্বত্ত্বাধিকারী শিশুর আশ্রয়দাতা মনোয়ারা হক জানান, প্রথমবার শিশু শুভ এখানে আসলে জয়পুরহাট সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে বিষয়টি পুলিশকে জানিয়ে আমার বাড়িতে আশ্রয় দেই।
অনেক কষ্টে তার বাবার ঠিকানা সংগ্রহ করে খবর দিলে তাকে ওর বাবা ওকে নিয়ে যায়। তখন আমাকে ছেড়ে যেতে চায়নি। আমার কষ্ট হলেও পরের ছেলে, তাই কাছে রাখতে পারিনি। এরপর আবারো গত বুধবার যখন শুভ এখানে আসে, তার ডান্ডাবেরি পরা দুই পা দিয়ে রক্ত-পুঁজ পড়ছিল। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে এ ব্যাপারে পুলিশকে জানালে জয়পুরহাট গোয়েন্দা পুলিশ ও সদর থানা পুলিশ এসে শিশুটিকে নিয়ে যায়।
জয়পুরহাট সদর থানা পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক মোখলেছুর রহমান জানান, শিশুটিকে উদ্ধার করে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে শিশু শুভ’র পায়ের ডান্ডাবেরি কেটে দেন। এরপর শিশুটিকে সুস্থ করার জন্য চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
জয়পুরহাট সদর থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনোয়ার হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এ ব্যাপারে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমএএস/পিআর