কক্সবাজারে গড়ে তোলা হবে লবণ গবেষণা কেন্দ্র
অবশেষে দেশে লবণ আমদানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। বৃহস্পতিবার কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে শিল্প উদ্যোক্তা, লবণ চাষি ও মিল মালিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় মন্ত্রী এ ঘোষণা দেন।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, দেশে লবণ উৎপাদন বাড়াতে এবং শিল্পের প্রসারে কক্সবাজারে একটি গবেষণা কেন্দ্র ও চাষিদের প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা হবে। এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ভবিষ্যতেও সরকার লবণ আমদানির পথে পা বাড়াবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ে লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর। তাই মন্ত্রী লবণ উৎপাদনে আত্মনিয়োগ করতে উপকূলের লবণ চাষিদের প্রতি অনুরোধ জানান।
সভায় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) চেয়ারম্যান আহমদ হোসেন খাঁন বলেন, ইতিপূর্বে যে লবণ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে তা সময়োপযোগী ছিলনা। এতে অনেক কিছু বাদ পড়েছিল। তাই প্রান্তিক পর্যায়ে লবণের মূল্য নিশ্চিত করা, বোর্ড গঠনসহ এ শিল্পের প্রসারে সবকিছু সম্পৃক্ত করে নতুন করে আরেকটি জাতীয় নীতিমালা গঠন করা হবে।
কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ড.অনুপম সাহার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় দেশে লবণ শিল্পের প্রসারে নানা সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মীর্জা আজম, কক্সবাজার-৩ আসনের সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল, কক্সবাজার-২ আসনের সাংসদ আশেকুলাহ রফিক, চকরিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল করিম, কক্সবাজার লবণ চাষি সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি আনোয়ার পাশা চৌধুরী প্রমুখ।
জাতীয় লবণ কমিটির হিসেব অনুযায়ী, দেশে দুই লাখ টন লবণের ঘাটতি রয়েছে। এ ঘাটতি পূরণের জন্য আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় কমিটি। সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়নের জন্য বিসিকের মতামতের ভিত্তিতে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রস্তাব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে বিষয়টি জানতে পেরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে লবণ আমদানির প্রক্রিয়া বন্ধের দাবি জানিয়েছিলেন চাষিরা।
লবণ চাষিদের তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজারের ইসলামপুরের বিভিন্ন গুদামে এসিআই সল্টের আড়াই লাখ মণ, মোল্লার দেড় লাখ, ইউনিলিভারের ৮০ হাজার থেকে এক লাখ ও ব্র্যাকের ৬০-৭০ হাজার মণসহ ৩০-৩৫টি মিলে ছয় থেকে আট লাখ মণ লবণ মজুদ রয়েছে। তবে কক্সবাজার বিসিক অফিস থেকে এ বছর কম উৎপাদনের তথ্য দেয়া হয়। আর এ তথ্যের ভিত্তিতে লবণ আমদানির চিন্তা করে সরকার।
বিসিকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালে দেশে লবণের মোট চাহিদা ছিল ১৩ লাখ ৩৩ হাজার টন। এর মধ্যে ভোজ্য লবণের চাহিদা ছিল ৮ লাখ ৪৫ হাজার টন, শিল্পে দুই লাখ ৫৭ হাজার ও হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশুর জন্য দুই লাখ ছয় হাজার টন। এছাড়া ২০১১ সালে ১৩ লাখ ৬৮ টন, ২০১২ সালে ১৪ লাখ ৩৬ হাজার, ২০১৩ সালে ১৫ লাখ ৬ হাজার, ২০১৪ সালে ১৫ লাখ ৮০ হাজার টন লবণের চাহিদা ছিল দেশে। চলতি বছর এর চাহিদা ১৬ লাখ ৫৮ হাজার টন। এর বিপরীতে গত বছর দেশে লবণ উৎপাদন হয়েছে ১৭ লাখ ৫৩ হাজার টন।
এ তথ্যের বিপরীতে লবণ সংশ্লিষ্টরা বলেন, বিসিকের দেয়া তথ্য সঠিক নয়। কারণ মাঠ পর্যায়ে বিসিকের পরিমাপ নিয়ে নানা সমালোচনা রয়েছে। তাই বৈঠকে উপস্থিত চাষিরা মাঠ পর্যায়ে একটি নিরপেক্ষ জরিপ চালানোর প্রস্তাবনা দিয়েছেন। বিগত দুই বছরে উৎপাদিত লবণের যে পরিমাণ মাঠে মজুদ রয়েছে তা দিয়ে সারা দেশের সব ধরণের চাহিদা পূরণ সম্ভব। তারা লবণের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করণের দাবি জানান তারা। পাশাপাশি তারা দরিদ্র চাষিদের সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করতে মন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।
সায়ীদ আলমগীর/এআরএ/পিআর