মমতার পা ছুঁয়ে প্রণাম আইজির, পশ্চিমবঙ্গে তোলপাড়
২০১২ সালে কালীপূজায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে পুলিশের পোশাক পরে খালি পায়ে ঘুরতে দেখা গিয়েছিল কলকাতার তৎকালীন পুলিশ কমিশনার রঞ্জিত কুমার পচনন্দাকে। দুই বছর পর ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ইউনিফর্ম পরে প্রকাশ্যে মমতাকে ‘জঙ্গলমহলের মা’ বলে মন্তব্য করেছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের তৎকালীন পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ। এবার মুখ্যমন্ত্রীর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলেন রাজ্য পুলিশের আইজি।
ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, পিছনে সমুদ্রকে রেখে সৈকতের দিকে মুখ করে বসে আছেন মমতা। তাকে ঘিরে ছোটখাটো একটা জটলা। মমতার বাঁ দিকে রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। তার পাশে রাজ্যের এডিজি পদমর্যাদার এক পুলিশ কর্মকর্তা। মুখ্যমন্ত্রীর ডান দিকে দাঁড়িয়ে শুভেন্দুর বাবা তথা কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারী। তার ডান পাশে পুলিশের পোশাক পরে দাঁড়িয়ে রাজ্যের আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) রাজীব মিশ্র।
সেখানে দেখা গেছে, মমতার পায়ের কাছে বাঁ দিকে একটি কেকের বাক্স খোলা। তিনি প্রথমে কেকের একটি টুকরো তুলে নিজে হাতে খাইয়ে দিলেন সামনে দাঁড়ানো রাজ্যের নিরাপত্তা অধিকর্তা বিনীত গোয়েলকে। বিনীতের খাওয়া বাকি টুকরোটি মুখ্যমন্ত্রী এগিয়ে দিলেন পাশে দাঁড়ানো রাজীব মিশ্রের দিকে।
রাজীব মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে কেকের টুকরো মুখে পুরেই সামনে বসা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেন। ততক্ষণে শিশির অধিকারীকে কেক খাওয়াচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাদের পিছনে দাঁড়ানো জটলার অনেকেই মোবাইলে সেই দৃশ্য ধারণ করতে ব্যস্ত।
ভিডিওটি আনন্দবাজার পত্রিকা থেকে নেয়া
আনন্দবাজার পত্রিকা বলছে, আট সেকেন্ডের ওই ভিডিওর সত্যতা যাচাই না করা হলেও তা প্রকাশ্যে আসতেই বিতর্ক শুরু হয়েছে প্রশাসনিক মহলের পাশাপাশি রাজনৈতিক শিবিরেও। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ওই ভিডিওকে হাতিয়ার করেই দলদাস প্রশাসনের অভিযোগ তুলে ক্ষমতাসীন দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রচারে নামার জন্য তৈরি হচ্ছে।
বিজেপি নেতা তথা পশ্চিমবঙ্গে দলটির পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেন, ‘দিদির (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) সামনে পোশাক পরে নতমস্তক হয়ে যাচ্ছে। পুলিশের একজন আইজি মুখ্যমন্ত্রীর চরণবন্দনা করছেন। এ কি রকম ব্যবস্থা? কী রকম গণতন্ত্র।’
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘শুধু এটাই বাকি ছিল। আমলাদের প্রকাশ্যে তিনি কার্যত ওঠবস করাচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির কালীপূজায় পুলিশ কমিশনার খালি পায়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, প্রসাদ বিতরণ করছেন, এমনটাও দেখা গেছে। এবার লাঠিবাবার মতো আমলাদের মাথার ওপর পা বোলাবেন উনি।’
পুলিশের একটি সূত্র বলছে, কেক খাওয়ার ওই ভিডিওটি তোলা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক দিঘা সফরে। গত সপ্তাহের সোম থেকে বৃহস্পতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা দিঘায় ছিলেন। সেখানে জনসংযোগের পাশাপাশি প্রশাসনিক বৈঠকও করেন তিনি।
ভিডিওটি দেখার পর রাজ্য পুলিশের শীর্ষ কয়েক কর্মকর্তার ধারণা, ভিডিওটি ধারণ করা হয় ২১ অগস্ট। সেদিন ছিল বিনীতের জন্মদিন। তার জন্মদিন পালন করতেই মুখ্যমন্ত্রী কেক খাওয়াচ্ছিলেন তাকে।
ভিডিওতে দেখা গেছে, সাদা পোশাক পরিহিত বিনীতের পাশে রাজীব মিশ্র দাঁড়িয়ে আছেন। আইজি হওয়ার আগে তিনি দীর্ঘদিন কলকাতা পুলিশের ডিসিসহ বিভিন্ন পদে ছিলেন। তার মতো একজন দক্ষ কর্মকর্তা কেন মুখ্যমন্ত্রীকে এভাবে প্রণাম করতে গেলেন তাতে অনেকেই অবাক।
পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা পঙ্কজ দত্ত কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ‘একজন পুলিশ কর্মী হিসেবে তিনি অল ইন্ডিয়া সার্ভিস কনডাক্ট রুল মেনে চলতে বাধ্য। সেই রুল অনুযায়ী তিনি সাংবিধানিক কোনো পদাধিকারীকে ডিউটিতে থাকাকালীন স্যালুট করতে পারেন। কিন্তু কোনো ব্যক্তিকে প্রণাম করা নিয়ম পরিপন্থী এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’
আনন্দবাজার পত্রিকা বলছে, তাদের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে জানার জন্য আইজি রাজীব মিশ্রের সঙ্গে অনেকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। তার কোনো জবাবও দেননি। এছাড়া বার্তা আদান-প্রদানের মাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপেও যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে।
এসএ/এমএস