লেবাননে খুনের ঘটনায় আশুগঞ্জে অগ্নিতাণ্ডব


প্রকাশিত: ১১:৩৩ পিএম, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫

লেবাননের রাজধানী বৈরুতে প্রেম সংক্রান্ত ঘটনায় যুবক খুনের ঘটনার জের ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে লেবানন প্রবাসীর বাড়িতে তাণ্ডব চালিয়েছে প্রতিপক্ষের লোকজন। বৈরুতে আশুগঞ্জের যুবক সজিব সিকদার খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ১২ মে আশুগঞ্জ উপজেলার নাওঘাট গ্রামের লেবানন প্রবাসী পাঁচ ভাই মো. কামাল উদ্দিন, জামাল উদ্দিন, মো. লুৎফুর রহমান শ্যামল, মো. হেলাল উদ্দিন ও জালাল উদ্দিনের বাড়িতে মধ্যযুগীয় কায়দায় হামলা চালানো হয়।

দিন দুপুরে বাড়ির দক্ষিণ ও পূর্ব-পশ্চিমের ভিটের পাকা দুটি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এতে পুড়ে যায় ঘর দুটিতে থাকা সব দামি আসবাবপত্র। পাশাপাশি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ঘরের মেঝের টাইলস পর্যন্ত ছিন্নবিন্ন করে দেয়া হয়। আশুগঞ্জ উপজেলার তালশহর পশ্চিম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু শামার নেতৃত্বেই কয়েকশ লোক এই হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগি পরিবারটি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লেবাননে নিহত হওয়া সজিব সিকদার আবু শামার নাতি। তার মৃত্যুর জন্যে দায়ি করা হয় লেবানন প্রবাসি ওই পরিবারের সদস্যদের। এ ঘটনার পরপরই লেবাননে গ্রেফতার হন লেবানন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. লুৎফুর রহমান শ্যামল। তবে তিনি আদালত থেকে নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে বের হন।

লেবানন প্রবাসী শ্যামলের আরেক ভাই হেলাল উদ্দিন জাগো নিউজকে জানান, একটি মেয়ের সঙ্গে প্রেমের ঘটনাকে কেন্দ্র করেই লেবাননে পিয়াস নামে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক তরুণের গুলিতে নিহত হন সজিব। এ ঘটনায় ওই মেয়েটিও গুলিবিদ্ধ হন। কিন্তু এর দোষ চাপানো হয় আমাদের ওপর। অথচ আমরা ঘটনায় জড়িত দুজনের কাউকেই চিনতাম না। এ হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করেই নাওঘাটে আমাদের বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ৫০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ প্রায় সাত লাখ টাকাও লুটে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন তিনি।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রথমে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে হামলাকারীরা বাড়িতে প্রবশে করে। এরপরই পেট্রোল ঢেলে ঘর দুটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। আগুনে ঘর দুটির পাকা দেয়াল ছাড়া সবকিছুই পুড়ে ছারখার হয়ে যায়। ঘরের ভেতরের কোনো আসবাবপত্রই রক্ষা পায়নি আগুন থেকে। বিদেশি ব্র্যান্ডের এলসিডি টিভি, ফ্রিজ সবকিছুই পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

এদিকে এ ঘটনার পর থেকেই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন প্রবাসী পাঁচ ভাইদের স্ত্রী-সন্তান, মাসহ ওই পরিবারের ২২/২৩ জন সদস্য। ঘটনার পর থেকে হামলাকারীরা ভুক্তভোগী পরিবারের কাছে ২৫ লাখ টাকা দাবি করছে। এ টাকা দিলেই তাদের মুক্তি মিলবে বলে জানিয়েছে হামলাকারীরা।

অন্যদিকে, এ ঘটনায় গত ২ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রবাসীদের মা রেজিয়া বেগম বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় তালশহর পশ্চিম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু শামাকে প্রধান আসামি করা হয়। পরে আদালত আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ঘটনার সত্যতা যাচাইপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। কিন্তু গত ১৪ দিনেও আশুগঞ্জ থানা পুলিশ মামলাটি রেকর্ড করেনি।

আশুগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জাফর জাগো নিউজকে জানান, সোমবার বিকেলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম.এ মাসুদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছেন। তার তদন্ত প্রতিবেদনের পরই মামলা রেকর্ড করা হবে।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম.এ মাসুদ জাগো নিউজকে বলেন, আগুনে ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া ও মালামাল ভাংচুরের বিষয়টি অমানবিক। মামলাটির অধিকতর তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে দোষিদের বিরুদ্বে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আজিজুল আলম সঞ্চয়/এমজেড/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।