পুড়ছে আমাজন, কী করতে পারি আমরা?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:৩৯ পিএম, ২৩ আগস্ট ২০১৯

ছাড়খার হয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম বড় রেইন ফরেস্ট আমাজন। ছোট-বড় মিলিয়ে ৪০ হাজার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা একটু একটু করে শেষ করে দিচ্ছে পৃথিবীর ২০ শতাংশ অক্সিজেনের যোগানদাতা এই অরণ্যকে।

প্রতিবছর ২শ কোটি মেট্রিক টন কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে এই বন। আর সে কারণেই বিশাল এই বন ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ নামে পরিচিত। এছাড়া পৃথিবীর বেশিরভাগ নদীর উৎস আমাজন। এখানে রয়েছে ৪৫ লাখ প্রজাতির পোকামাকড়, বাস করে তিন শতাধিক উপজাতি।

অথচ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই বনই আজ হুমকির মুখে। প্রতিনিয়ত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এই বন পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। এমনটা চলতে থাকলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হয়তো এই অরণ্যের কথা শুধু বইয়েই পড়বে। এখনই সচেতন না হলে পৃথিবীতে আর কোনো অরণ্যই থাকবে না।

amazon-2.jpg

কিন্তু দিনের শেষে ঘুমোতে যাওয়ার আগে এই পৃথিবীর কাছে নিজেদেরকে দায়বদ্ধ মনে করেন যারা বা যারা ভাবেন সমাজের কাছে তারা দায়বদ্ধ, তাদের উচিত এখনই কিছু করা। তার এখনই এ নিয়ে ভাবা উচিত। তার মানে এই না যে সবাইকে আমাজনে গিয়েই প্রতিবাদ করতে হবে। বরং প্রতিবাদ শুরু হতে পারে আপনার ঘর থেকেও। সেখান থেকেই সচেতনা শুরু করা দরকার।

আমাজন রক্ষায় সেখানকার স্থানীয় প্রশাসনের দায় সবচেয়ে বেশি। তবে আমরা যারা আমাজনের কাছাকাছি নেই তাদেরও অনেক দায় আছে। প্রকৃতি প্রতিনিয়ত আমাদের উজার করে দিয়ে যাচ্ছে আর আমরা শুধু সব সুযোগ নিয়েই যাচ্ছি। প্রকৃতিকেও আমাদের কিছু ফিরিয়ে দিতে হবে। সেটার সময় এখনই। যদি এখনই তা করা না যায় তবে পরিবেশ ধ্বংসের জন্য আমরা সবাই দায়ী থাকব।

আর সে জন্য আমরা কিছু কাজ করতে পারি। আমরা আমাদের আশেপাশের মানুষকে সচেতন করতে পারি। আপনার সন্তান বা আশেপাশে যে কাউকে যখনই সময় পাবেন প্রকৃতিকে ভালোবাসতে শেখাবেন। প্রতিটা গাছ, প্রতিটা প্রাণী সবকিছুকে ভালোবেসে এক সঙ্গে থাকতে শেখাবেন। এতে আপনার অবর্তমানে আপনার প্রজন্ম, আপনার সন্তান অথবা সন্তানের বন্ধুরাও হয়তো কখনো প্রতিবাদ গড়ে তুলবে যদি প্রকৃতির সাথে অন্যায় হয়।

বাড়ি যত ছোটই হোক এর আশে-পাশে খালি জায়গা পেলেই চারাগাছ লাগাবেন। সবুজের প্রতি যেন একটা টান তৈরি হয় সবার। আপনি আপনার সন্তানকে শেখালে সে তার বন্ধু-বান্ধবদের শেখাবে। এভাবেই সমাজ বদলে যাবে। বাড়িতে গাছ লাগান, দু’বেলা গাছে পানি দেয়া আর পরিচর্যা করতে শেখান শিশুদের। তারাও গাছপালাকে ভালোবাসতে শুরু করবে।

amazon-2.jpg

আপনার সন্তানকে খুব দরকার না পড়লে ফুল ছিড়তে উৎসাহ দেবেন না। আপনার সন্তানকে বোঝান ফুলদানিতে ফুল মানায় কিন্তু এদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা গাছই।

জন্মদিন বা যে কোনো উল্লেখযোগ্য দিনকে মনে রাখার মতো করে তুলতে বাড়িতে গাছ আনুন। পরিবারের সদস্যদের গাছ উপহার দিন নিয়ম করে। তবেই ছোটবেলা থেকে আপনার সন্তান গাছকে পরিবারের সদস্য মনে করবে।

আপনার সন্তানকে বোঝান এই প্রকৃতিকে কিছু ফিরিয়ে দিতে হবে। অনেক নিয়েছি আমরা, এবার ফিরিয়ে দেবার পালা। ওদের বোঝাতে হবে যে, এই পৃথিবী যেমন আমার, আপনার, আপনার সন্তানের, ঠিক ততটাই গাছ, পাখি, ফুল সবার। আমাদের যেমন প্রকৃতিতে নিরাপদে বসবাসের অধিকার আছে তেমনি ওদেরও আছে। গাছ-পালা কমে গেলে পশু, পাখি, বন্যপ্রাণীরাও বিলুপ্ত হয়ে যাবে। ফলে প্রকৃতিতে বিপর্যয় নেমে আসবে।

ছুটির দিনে সন্তানের সঙ্গে বাগানে গিয়ে গাছের যত্ন নিন। শিশুরা ছোটবেলা থেকে যেন দেখে যে, তাদের বাবা-মা তাদের প্রতি যতটা যত্নশীল, ততটাই গাছ-পালার প্রতিও যত্নশীল। ফলে আপনা আপনিই তার মধ্যে প্রকৃতির জন্য ভালোবাসা গড়ে উঠবে। পরবর্তীতে তারা প্রকৃতির সঙ্গে কোনো অন্যায় হতে দেখলে প্রতিবাদ করবে। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।

টিটিএন/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।