টমাস ট্রান্সট্রোমারের কবিতা
২০১১ সালে নোবেল বিজয়ী টমাস ট্রান্সট্রোমারের জন্ম সুইডেনের স্টকহোমে, ১৯৩১ সালের ১৫ এপ্রিল। পড়াশোনা স্টকহোম ইউনিভার্সিটিতে, মূল বিষয় মনোবিজ্ঞানের সঙ্গে ছিল ইতিহাস, ধর্ম ও সাহিত্য। প্রথম বই সেভেনটিন পোয়েমস বেরোয় ১৯৫৪ সালে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর স্ক্যান্ডিনেভিয়ান কবিদের মধ্যে তাঁকে ধরা হয় সর্বাগ্রগণ্য কবি বলে; সমালোচকরা বলছেন তাঁর কবিতা সহজবোধ্য, এমন-কি অনুবাদেও। সুইডেনের প্রলম্বিত শীতকাল, প্রকৃতির ছন্দ, প্রতিদিনের জীবন, ল্যান্ডস্কেপ আর পারিপার্শ্বিক সৌন্দর্যে নতুন অর্থ সঞ্চারের সাধনা তাঁর কবিতায় স্পষ্ট।
ট্রান্সট্রোমারের নোবেল অর্জন সম্পর্কে সুইডিশ অ্যাকাডেমির সেক্রেটারি পিটার ইংলাড বলেছেন ‘...মহৎ সব প্রশ্ন নিয়ে, মৃত্যু, ইতিহাস, স্মৃতি আর প্রকৃতি নিয়ে তিনি লিখেছেন।’ মজার ব্যাপার, ১৯৯৩ থেকে প্রতি বছর তিনি মনোনীত হয়ে আসছিলেন নোবেল পুরস্কারের জন্যে। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ দ্য হাফ-ফিনিশড হ্যাভেন (১৯৬২), উইন্ডোজ অ্যান্ড স্টোনস (১৯৬৬), ফর দ্য লিভিং অ্যান্ড দ্য ডেড (১৯৯১), দ্য গ্রেট এনিগমা (২০০৪)। ট্রান্সট্রোমার নিজেই ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন তাঁর কবিতা। ভাষান্তরিত প্রথম তিনটি কবিতা নেয়া হয়েছে সেই অনুবাদ থেকে। শেষেরটি স্কটল্যান্ডের কবি রবিন রবার্টসনের ইংরেজি তরজমা থেকে নেয়া।
এপ্রিল ও নীরবতা
বসন্ত ঊষর হলো।
আমার শরীর ঘেঁষে
মখমল-কালো নর্দমাটির
প্রতিবিম্বহীন হামাগুড়ি।
এখন হলদে ফুলে
সেই সব উজ্জ্বলতা।
নিজেকে বহন করি আমার ছায়ায়
বেহালাকে যেমন বয়ে বেড়ায় তার কালো খোল।
একটা কথাই শুধু বলতে চেয়েছি
সফলতার আলো আসে
সেই রুপা থেকে,
যা থাকে বন্ধকি দোকানে।
সূর্যদৃশ্য
বাড়ির পিছনে সূর্য ওঠে জেগে
দাঁড়িয়ে থাকে রাস্তার মাঝখানে
আর লাল হাওয়ায়
আমাদের ওপর তার সব প্রশ্বাস।
আমি অবশ্যই ছেড়ে যাবো এ-শহর
কিন্তু আগামীকাল দেখবো
গনগনে সূর্যটা
হয়ে আসছে ধূসর। সেই আধমরা বনে
বাঁচবো আমরা
আমাদের করতেই হবে কাজ।
মধ্যশীত
নীল আলো ঠিকরে বেরোয়
আমার পোশাক থেকে।
শীতের মধ্যসময়।
বরফের খঞ্জনি করছে ঠকঠক।
চোখ বুঁজে ফেলি আমি।
পৃথিবী স্তব্ধ এখানে।
এখানেই ভেঙে পড়া।
আর মৃতের ব্যস্ততা
সীমান্তে, চোরাচালানে।
নির্জনতা
এখানে মৃত্যুর কাছাকাছি আমি, ফেব্রুয়ারির এক রাতে।
বিপন্ন গাড়িটি পড়ে রইলো বরফে,
অন্য লেনে আড়াআড়িভাবে। কলঙ্ক বোঝাতে
কাছে এলো ট্রাফিকের আলো।
আমার নাম, মেয়েরা, চাকরি, সবই
নিদ্রায় স্বাধীন, নিঃসঙ্গ আমাকে ফেলে গেছে, ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র করে,
দূর থেকে দূরে নিয়ে। আমি কেউ নই:
কোনো বালককে মাঠে যেন আচমকা ঘিরে ধরলো সবাই।
ছুটে আসা হেডলাইটগুলো
আমাকে উত্যক্ত করছিল যেন-বা চতুর সন্ত্রাসী হয়ে চাকার সঙ্গে
কুস্তিমত্ত আমি। ডিমের শাদা অংশের মতো পিচ্ছিল মুহূর্তগুলো
দীর্ঘতর হলো- আরও ঘর তৈরি হলো আমার জন্যে, হাসপাতালে
যেমন বাড়তে থাকে রোগীর বিছানা
মনে হলো, সামান্য বিশ্রাম নিতে পারি আমি
নিতে পারি একটা নিঃশ্বাস
চূর্ণ হওয়ার আগে।
কী যেন ঘটলো তখনই: কিছু প্রীতিকর বালি কিংবা এক পশলা হাওয়ায়
গাড়িটা উল্টে গেল তীব্র ঝনঝন শব্দে, পড়ে রইলো রাস্তায়, অন্ধকারে।
আজও তেমনি আছে। ফের এসে পড়লাম সিটবেল্টের ভেতর
আর দেখলাম, কেউ আসছে প্রসন্ন বরফ মাড়িয়ে
কী হারিয়েছি আমি, দেখার জন্যে।
এইচআর/এমএস