যেভাবে ইমরানের পিঠে ছুরি বসালেন মোদি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:০৫ পিএম, ১৯ আগস্ট ২০১৯
অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের কয়েকদিন আগে ইসলামাবাদ এবং নয়াদিল্লির সরকারি কর্মকর্তারা পাকিস্তান এবং ভারতের দুই প্রধানমন্ত্রীর একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আয়োজন নিয়ে আলোচনা অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছিলেন। পর্দার আড়ালের এই আলোচনায় আগামী মাসে নিউইয়র্কে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক আয়োজনের অগ্রগতি নিয়ে আশাবাদী হয়েছিলেন তারা।
বিচক্ষণ এই কূটনৈতিক তৎপরতায় শুধুমাত্র জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনের ফাঁকে ইমরান-মোদির বৈঠকের লক্ষ্য ছিল না, বরং দুই দেশের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে স্থগিত থাকা সংলাপ পুনরায় শুরু করার জন্য ভিত তৈরি করাও ছিল এর অন্যতম উদ্দেশ্য।
গত মে মাসের নির্বাচনে ভূমিধস জয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর উভয় দেশই ব্যাক-চ্যানেলে এই আলোচনা শুরু করে। ভারত এবং পাকিস্তানের কূটনৈতিক সূত্রগুলোর বরাত দিয়ে পাক দৈনিক দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
সংলাপ পুনরায় শুরুর এই প্রক্রিয়া গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে জটিলতা তৈরি হতে পারে; সেজন্য গণমাধ্যম এড়িয়ে মোদি-ইমরানের বৈঠক আয়োজন নিয়ে চুপিসারে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন দুই দেশের কর্মকর্তারা।
ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার অজয় বিসারা ভারতের এবং পাক পররাষ্ট্র সচিব সোহাইল মেহমুদ পাকিস্তানি পক্ষের নেতৃত্ব দেন। গত ৫ আগস্ট কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর অজয় বিসারাকে ইসলামাবাদ থেকে বহিষ্কার করে পাকিস্তান।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ব্যাক-চ্যানেলের ফলপ্রসূ আলোচনার কারণে ভারতের নির্বাচনের পরপরই ইমরান খান এবং নরেন্দ্র মোদির মধ্যে চিঠির আদান-প্রদান হয়।
পাকিস্তানি এক কর্মকর্তা বলেছেন, সবকিছুই সতর্কতার সঙ্গে নিপুনভাবে সাজানো হয়েছিল... এর মধ্যে ছিল প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের শুভেচ্ছা জানিয়ে টুইট থেকে মোদির সঙ্গে তার টেলিফোনে আলোচনাও।
এমনকি গত জুনে বিশকেকে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের সম্মেলনে ইমরান খান এবং মোদি অংশ নিয়েছিলেন। সেখানেও সম্মেলনের ফাঁকে দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের ব্যাপারে উভয় দেশ ঐক্যমতে পৌঁছেছিল। কিন্তু আনুষ্ঠানিক এই বৈঠক হলে ব্যাপক শোরগোল তৈরি হতে পারে সেজন্য দুই দেশের কর্মকর্তারা কৌশলে অপরিকল্পিত ও অনানুষ্ঠানিক সাক্ষাতের পরিকল্পনা সাজান।
কূটনৈতিক কর্মকর্তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী, সাংহাই সম্মেলনে দুই প্রধানমন্ত্রী অনানুষ্ঠানিক সাক্ষাতে করমর্দন ও কুশল বিনিময় করেন। দুই দেশই মোদি-ইমরানের অনানুষ্ঠানিক এই মিথষ্ক্রিয়াকে অচলাবস্থার উন্নতি হিসেবে চিহ্নিত করে।
তবে এক্সপ্রেস ট্রিবিউন বলছে, শুধুমাত্র করমর্দনের মাঝে সীমিত ছিল না দুই প্রধানমন্ত্রীর এই সাক্ষাৎ। কূটনৈতিক একটি সূত্র বলছে, সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের সম্মেলন কক্ষে যখন ইমরান খান প্রবেশ করেন, তখন পাক প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে দাঁড়িয়ে যান নরেন্দ্র মোদি। যদিও ওই সম্মেলন কক্ষে অন্যান্য দেশের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। তবে দুই প্রধানমন্ত্রীর মাঝে অত্যন্ত গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে।
দুই দেশের কূটনৈতিক চ্যানেলের এসব প্রচেষ্টার কারণে অনুকূল এই পরিবেশ তৈরি সম্ভব হয়েছিল। সেই সময় জনসাধারণের প্রত্যাশা নিয়ন্ত্রণে রাখতে নাটকীয় কোনো ঘোষণা না দেয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছিল উভয় পক্ষ। এমনকি ভারত তাদের উদ্বেগপূর্ণ কিছু বিষয়ের ব্যাপারে পাকিস্তানের কাছে বেশ কিছু দাবি তুলে ধরেছিল এবং সেসবের ব্যাপারে পুনরায় মোদি সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে সম্মত হয়েছিল ইসলামাবাদ।
তবে ভারত যে হঠাৎ করেই কাশ্মীরকে দেয়া বিশেষ মর্যাদা সংক্রান্ত সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল করে দেবে সে ব্যাপারে কোনো ধারণাও ছিল না পাকিস্তানের। সংবিধানের বিশেষ এই অনুচ্ছেদের কারণে অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীর আধা-স্বায়ত্তশাসন ভোগ করতো।
দুই দেশের অচলাবস্থা কাটাতে উভয় প্রধানমন্ত্রীর সংলাপ আয়োজন যখন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে তখন ভারতের এই পদক্ষেপে অবাক হয়ে যায় পাকিস্তান। কাশ্মীর ইস্যুতে মোদি সরকারের নেয়া পদক্ষেপ স্বাভাবিকভাবেই অপ্রত্যাশিত হিসেবে হাজির হয়েছে ইসলামাবাদের কাছে।
গত ৫ আগস্ট বিতর্কিত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা ভারত প্রত্যাহার করে নেয়ার পর নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে বেশ কিছু কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছে পাকিস্তান। ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনারকে বহিষ্কার, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য হ্রাস ও যানবাহন চলাচল বাতিল করে দিয়েছে পাকিস্তান সরকার।
পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সম্প্রতি বলেছিলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে, কাশ্মীর বিরোধের সমাধানের জন্য নরেন্দ্র মোদিই সেরা বাজি হতে পারেন। কিন্তু ৫ আগস্টের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং জার্মান স্বৈরশাসক অ্যাডলফ হিটলারের কাজের মাঝে মিল খুঁজে পেয়েছেন ইমরান খান।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মোদির বিরুদ্ধে ইমরান খান ব্যক্তিগত যে আক্রমণ করেছেন; সেটি তার অতীত হতাশার প্রতিফলন। তিনি সৌহার্দপূর্ণ সর্ম্পক পুনরায় স্থাপনের জন্য নয়াদিল্লির দিকে চেয়ে ছিলেন। কিন্তু আপাতত সেই আশায় গুঁড়েবালি।
সূত্র : এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।
এসআইএস/পিআর