কাশ্মীরিদের কথা অবশ্যই শুনতে হবে : মনমোহন সিং
কাশ্মীরের সাংবিধানিক বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর এই প্রথমবার মুখ খুললেন দেশটির দুইবারের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। তিনি ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল প্রসঙ্গে বলেছেন, সরকারকে অবশ্যই কাশ্মীরিদের কথা শুনতে হবে। তিনি বলেছেন, মোদি সরকারের এমন পদক্ষেপ দেশের অনেক মানুষ পছন্দ করেনি।
ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ এবং ৩৫ (ক) অনুচ্ছেদ বাতিল করেছে বিজেপি সরকার। গত ৫ আগস্টের পর কংগ্রেস দলীয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রথমবার কাশ্মীর ইস্যুতে নিজের অবস্থান জানাতে গিয়ে বলেন, ভারত এক গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তাই সবাইকে এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মনমোহন সিং বলেন, ‘এমন সিদ্ধান্ত যা হবে তা আমাদের দেশের অনেক মানুষ পছন্দ করেনি। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ যে কাশ্মীরের সব মানুষ কি বলতে চায় তা অবশ্যই শুনতে হবে। এর মাধ্যমে ভারতীয় ধারনা সদূরপ্রসারী হবে।’
গতকাল সোমবার ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে কড়া নিরাপত্তায় ঈদ পালন করেছেন সেখানকরা মুসলিমরা। ঈদের আগের দিন সেখানে ফের কারফিউ জারি করায় পুরো কাশ্মীরের পথঘাট থমথমে ও নির্জন। কড়া নিরাপত্তার মধ্যেই ঈদের নামাজ আদায় করলেও বড় বড় মসজিদগুলোতে ঈদের নামাজ পড়তে পারেনি মানুষ।
ভারতীয় টেলিভিশন এনডিটিভির অনলাইন প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাশ্মীর ও শ্রীনগরের অনেক মসজিদে ঈদের নামাজ আদায়ের অনুমতি দেয়নি দেশটির সরকার। ফলে ভারতের একমাত্র মুসিলমি সংখ্যাগরিষ্ঠ ‘রাজ্যটিতে’ ঈদের কোনো আমেজ ছিল না।
Former PM Manmohan Singh on #Article370Revoked: Its outcome is not to the liking of many people of our country & It's important that voices of all these people be heard & It is only by raising our voice that we can ensure that in the long run, the idea of India prevails. pic.twitter.com/x0Iq4yhzpi
— ANI (@ANI) August 12, 2019
সরকার জানিয়েছে, গত শনিবার নিরাপত্তা শিথিল করার পরে শ্রীনগরে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি, তার জেরেই রোববার থেকে ফের সেখানে কারফিউ জারি করা হয়। কিন্তু বিবিসি এ সংক্রান্ত ভিডিও প্রকাশ করেছে। যেখানে হাজোর মানুষ স্লোগানে স্লোগানে তাদের বিক্ষোভ জানাচ্ছেন।
গত ৫ আগস্ট কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা প্রদানকারী ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার। শুধু বিশেষ মর্যাদা বাতিল নয় কাশ্মীরকে জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ নামে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করা হয়।
বিশ্বের সবচেয়ে সামরিকায়িত একটি এলাকা হলো কাশ্মীর। সেখানে লাখো সেনা মোতায়েন রয়েছে। এর মধে কাশ্মীরকে দিখণ্ডিত করার ঘোষণা দেয়ার আগে সেখানে আরও ৩৫ হাজার অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
হাজার হাজার নিরাপত্তাকর্মী কাশ্মীর উপত্যকায় রয়েছেন। মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেট পরিষেবা এখনও বন্ধ রয়েছে। ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে থাকা অনেক কাশ্মীরি তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। তারা ঈদে বাড়িতেও ফিরতে পারেননি।
এদিকে জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে কেন্দ্রের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আঞ্চলিক দল ন্যাশনাল কনফারেন্সের পক্ষ থেকে মোদি সরকারের কাশ্মীর সংক্রান্ত সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করা হয়েছে।
দলটির নেতা ও এমপি আকবর লোন এবং হাসনাইন মাসুদির তাদের দায়ের করা পিটিশনে কেন্দ্রীয় সরকারের এই পদক্ষেপকে ‘বেআইনি’ বলে দাবি করেছে। তারা ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলক ‘অসাংবিধানিক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
কাশ্মীরিরা যাতে কোনো প্রতিবাদ করতে না পারে তাই সেখানে নেয়া হয়েছে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সেখানকার মানুষ এখন সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ। মোদি সরকারের মাস্টারে প্ল্যানের কাছে হেরে বিক্ষোভে ফুঁষে উঠেছে কাশ্মীর মানুষ।
কারফিউ জারি থাকার কারণে সেখানে মানুষ সংঘবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ করতে পারছে না। এ ছাড়া সেখানকার সাবেক দুই মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রভাবশালী স্থানীয় নেতাসহ পাঁচ শতাধিক সাধারণ মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বিশ্বের অন্যতম সামরিকায়িত এলাকাগুলোর একটি কাশ্মীর। ভারতীয় সংবিধোনের ৩৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এতদিন কাশ্মীর প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ছাড়া কোনো কিছুতেই ভারতীয় আইন মানতে বাধ্য ছিল না। কিন্তু মোদি তা বাতিল করেছে। এ ছাড়া রাজ্যের মর্যাদাও হারিয়েছে কাশ্মীর।
এসএ/জেআইএম