হাসিলের টাকায় ভারি হয় প্রশাসন ও ইজারাদারের পকেট


প্রকাশিত: ০৮:৪৩ এএম, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫

ফটিকছড়ির গরুর বাজারের হাসিলের টাকায় ভারি হয় প্রশাসন আর ইজারাদারের পকেট। গরু বিক্রেতারা সরকারি নিয়ম মতে হাসিল পরিশোধ করলেও তা সঠিকভাবে সরকারি খাতে জমা হয়না বলে অভিযোগ রয়েছে।

ফটিকছড়ির অর্ধশত কোরবানির গরু বাজারের হাসিল বাবদ আয়ের টাকা ভাগ হয় প্রশাসন, ইজারাদার, জনপ্রতিনিধি আর দলীয় লোকদের মাঝে। তবে অনেক সময় আবার ইজারাদারও পায়না তার সঠিক প্রাপ্য। বিভিন্ন স্তরে কমিশন দিতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত নিজের ভাগে আর কিছুই জোটেনা বলে জানান জনৈক ইজারাদার।

কোরবানি উপলক্ষে গরুর বাজারগুলোর দরপত্রের মাধ্যমে ইজারা দেয়ার বিধান থাকলেও বেশির ভাগ সময় তা বাস্তবায়ন হয়না। প্রশাসনের সাথে বোঝাপড়া না হলেই কেবলমাত্র কোরবানির বাজার শুরু হওয়ার আগে নামে মাত্র ইজারা দেখায় প্রশাসন। অভ্যন্তরীণ ইজারা দেখিয়ে নামে মাত্র মূল্যে পুনরায় ইজারাদারকেই দেয়া হয় বাজার।

আবার প্রশাসনের সাথে সমঝোতা হলে অনেক ক্ষেত্রে তাও হয়না। এ ছাড়া প্রতি বছর কোরবানির সময় আসলে এসব গরু বাজারের আয়ের একটি অংশ চলে যায় দলীয় নেতাকর্মীদের পকেটে। আর এসব গরু বাজার কোরবানি উপলক্ষে নিয়ন্ত্রণ করে এলাকা ভিত্তিক সরকার দলীয় নেতা এবং জন প্রতিনিধিরা।  

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন বিক্রেতা জানান কোরবানির বাজারের বিক্রতা এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্রেতার কাছ থেকে শতকরা হারে হাসিলের অর্থ আদায় করে নেয় ইজারাদার। আবার কখনো কখনো ইজারাদারের সাথে ক্রেতার  গোপন সমঝোতা থাকায় বিক্রেতার কাছ থেকে হাসিলের টাকা আদায় করে নিলেও তা জমা হয়না। অভিযোগকারী বিক্রেতা নবী জানান ,তাদের কাছ থেকে কড়ায়-গণ্ডায় আদায় করার পরেও এসব অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা করেনা।

একটি সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে উপজেলার কয়েকটি বাজার নামে মাত্র ইজারা দিলেও সরকারি দলের সাথে ছিল বিরাট গরমিল। এসব বাজার থেকে লক্ষ লক্ষ টাকার হাসিল আদায় হলেও সরকারি কোষাগারে জমা হয়না এসব টাকা।

এদিকে উপজেলার অর্ধশত গরু বাজারে কোরবানি উপলক্ষে গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার কোন ব্যবস্থা দেখা যায়নি বিগত বছর গুলোতে। সরকারি নির্দেশনা মতে প্রত্যেক কোরবানির গরু বাজারে পশু ডাক্তার নিয়োজিত থাকার কথা। কিন্তু অতীতের কোরবানির বাজারগুলোতে তা পরিলক্ষিত হয়নি।

এ ছাড়া সীমান্ত অরক্ষিত থাকায় অবাধে আসে ভারতীয় নিম্ন স্বাস্থ্যের রোগাক্রান্ত গরু। দামে কিছুটা সস্তা হওয়ায় এসব গরু সহজেই ক্রেতাদের আকর্ষণ করে। ফলে দেশীয় গরু ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

তবে বিজিবির একটি সূত্র জানায়, এ বছর সীমান্তে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সীমান্ত দিয়ে কোন অবস্থাতেই গরু পারাপার করতে দেয়া হবে না। কোরবানি উপলক্ষে এখানকার বাজারগুলোতে বিক্রির জন্য যে সব গরু ছাগল তোলা হয় তার বেশির ভাগই স্থানীয় এবং গৃহপালিত। নানা ধরনের চাঁদাবাজি আর দাম কম থাকার কারণে গরু পালনকারীদের লোকসান গুনতে হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, উপজেলায় আলাদা কোন গরু বাজার নেই। সাধারণ বাজারগুলোর সাথেই গরু বাজার সংযুক্ত। কোরবানি উপলক্ষে গরু বাজারগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রত্যেক বাজারে পুলিশ মোতায়েন থাকবে।

এ ছাড়া জাল নোট চিহ্নিত করতে প্রশাসনের বিশেষ টিম কাজ করবে। বাজারে বিক্রির জন্য আনা গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য উপজেলা পশু সম্পদ কর্মকর্তার নেতৃত্বে একাধিক টিম মাঠে থাকবে। কোন ধরনের চাঁদাবাজিকে প্রশ্রয় দেয়া হবেনা বলে তিনি জানান।

এসএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।