৫০০ গ্রেফতার, আতঙ্ক কাটছে না কাশ্মীরে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:৩৪ পিএম, ০৯ আগস্ট ২০১৯
ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের পর কাশ্মীরজুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীর গুলিতে ৬ জন নিহত ও শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে স্থানীয় রাজনীতিবিদসহ প্রায় ৫ শতাধিক ব্যক্তি। এ পরিস্থিতিতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। আতঙ্কে রয়েছে কাশ্মীরিরা।
বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে তার সরকার নতুন যুগের সূচনা করেছে। এর মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদমুক্ত হবে কাশ্মীর।
মোদী বলেন, আমার বিশ্বাস, জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণ নতুন আশা, স্বপ্ন এবং প্রেরণা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবে। ভারত রাজ্যটির পুরো নাম ব্যবহার করে, যেটিকে সরাসরি নয়াদিল্লি থেকে শাসন করার জন্য কেন্দ্রীয় অঞ্চলে রূপান্তর করা হচ্ছে।
সোমবার (৫ আগস্ট) ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপের পর বৃহস্পতিবার এ ইস্যু নিয়ে প্রথম প্রকাশ্যে কথা বলেন মোদী। ইতোমধ্যে মুসলিশ সংখ্যাগরিষ্ঠ এ অঞ্চলের কয়েক শতাধিক মানুষকে গ্রেফতারের খবর এসেছে। এছাড়া রোববার রাত থেকে গোটা কাশ্মীরের মোবাইল-টেলিফোন নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এ অবস্থার আজ চতুর্থ দিন।
গত সপ্তাহের শুরুতেও জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষ যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান, অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার মধ্যে সম্পত্তি এবং সরকারি চাকরির একচেটিয়া অধিকার তাদের ছিল। কিন্তু ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের পর এসব অধিকার হারিয়েছে তারা। ভারতশাসিত কাশ্মীর এখন আর নিজস্ব পতাকা উড়তে পারে না।
কাশ্মীরে ব্যাপক দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি হয় বলে গতকাল মোদী তার বক্তব্যে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ সংখ্যালঘুদের রক্ষা এবং ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণসহ অন্যান্য ভারতীয় আইন প্রয়োগে করতে বাধা দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আশ্চর্যের বিষয়, জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণের জন্য ৩৭০ অনুচ্ছেদ কোনো সুফল বয়ে এনেছে কিনা তা কেউ বলতে পারবে না।
কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর সেখানে দশ হাজার সেনা মোতায়েন করেছে মোদী সরকার। রোববার রাতে জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক দুই মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ এবং মেহবুবা মুফতিকে গৃহবন্দি করা হয়। পরে সোমবার সন্ধ্যায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়। এছাড়া স্থানীয় রাজনীতিবিদসহ প্রায় ৫ শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
স্কুল ও দোকানপাট থেকে শুরু করে সবকিছু বন্ধ রয়েছে কাশ্মীরে। সব ধরনের তথ্য সরবরাহ বন্ধে গোটা কাশ্মীরে মোবাইল-টেলিফোন নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। গত রোববার রাত ও সোমবার সকাল থেকে স্থানীয় অনলাইন সংবাদমাধ্যমগুলো বন্ধ করে দেয়। সেই সঙ্গে এ সপ্তাহে কোনো সাংবাদিকদের কাশ্মীর পরিদর্শনের অনুমতি নেয়।
নয়াদিল্লীর ইন্টারনেট অধিকার সংগঠন সফটওয়্যার ফ্রিডম ল সেন্টারের হিসেব মতে, চলতি বছরে কাশ্মীরে ৫৩ বার ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। ফোন, টেলিভিশন ও ইন্টারনেট সংযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্নের ঘটনা নজিরবিহীন বলে উল্লেখ করেন সংগঠনটির পরিচালক সুন্দার কৃষ্ণান।
তিনি আরও বলেন, যেকোনো কাজে মানুষ এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এটা ছাড়া সাধারণ জীবনযাপনে ব্যাঘাত ঘটে। ইটারনেট ব্যবহার করাটা এখন মৌলিক অধিকারে পরিণত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে দেয়া বক্তব্যে কাশ্মীর কীভাবে অনেক বলিউড সিনেমার সেট হিসেবে ব্যবহৃত হতো সে সম্পর্কেও স্মরণ করিয়ে দেন মোদী। সেই দিন আবারও ফিরে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন। মোদী বলেন, অন্যান্য দেশের সিনেমার শ্যুটিংও কাশ্মীরে করা হতো। এছাড়া বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হতো কাশ্মীরি শাল।
কাশ্মীরের মর্যাদা বাতিলের একদিন পর বুধবার ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার ও নয়াদিল্লি থেকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয় দুই দেশ। ভারতের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিত ও সমঝোতা ট্রেনের চলাচলও বন্ধ করে দিয়েছে পাকিস্তান। এছাড়া পাকিস্তানে ভারতীয় চলচ্চিত্র নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
কাশ্মীরে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানের ২২ বছর বয়সী মানবাধিকার কর্মী ও নোবেল জয়ী মালালা ইউসুফজাই। শিশু এবং নারীদের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সেখানকার নারী এবং শিশুরা কেমন আছে তা নিয়ে তিনি চিন্তিত।
এক টুইট বার্তায় মালালা বলেন, ‘আমি যখন ছোট এমনকি আমার মা-বাবা যখন ছোট এবং আমার দাদা যখন তরুণ তখন থেকেই কাশ্মীরের লোকজন সংঘাতের মধ্যে বসবাস করছেন।’
কাশ্মীরে শান্তি নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন এই মানবাধিকার কর্মী। তিনি বলেন, আজ আমি কাশ্মীরি শিশু এবং নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। কারণ সহিংসতায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ সহ্য করতে হয় নারী এবং শিশুদের।
এদিকে টানা চারদিন ধরে কাশ্মীরে সবকিছু বন্ধ। বাজার খোলা নেই, এটিএম বুথও বন্ধ। কেউ চাইলেও ঘর থেকে বের হতে পারছে না। কারও সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারছে না। কার্যত বিশ্ব থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে কাশ্মীর। এভাবে সবকিছু বন্ধ থাকলে সেখানে তীব্র খাদ্য সঙ্কট দেখা দেবে।
এখন সেখানকার লোকজনের নিজেদের হাতে যা কিছু আছে তারা সেগুলো দিয়েই দিন কাটাচ্ছেন। কিন্তু অনেক দরিদ্র এলাকার লোকজনের হাতেই কোনো সঞ্চিত অর্থ নেই। ফলে তারা চরম কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করছেন।
এমএসএইচ/এমএস