মোদির হলো জয়, কাশ্মীরে বাড়ল ভয়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:১৮ পিএম, ০৬ আগস্ট ২০১৯

ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার পর নিম্নকক্ষ লোকসভায়ও দেশটির সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল-সংক্রান্ত প্রস্তাবটি ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পাস হয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদাদানকারী অনুচ্ছেদটি বাতিলের খবর জানানো হয়েছে।

রাজধানী নয়াদিল্লিভিত্তিক ভারতীয় টেলিভিশন এনডিটিভি অনলাইন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সভাপতি প্রস্তাবটি লোকসভায় উত্থাপন করেন। ৫৪৩ সদস্যবিশিষ্ট লোকসভায় ৩৬৬-৬৬ ভোটে তা পাস হয়েছে।

গতকাল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার সংবিধানের ৩৭০ এবং ৩৫ (ক) অনুচ্ছেদ বাতিল করে। সংবিধানের ওই অনুচ্ছেদ দুটির কারণে জম্মু-কাশ্মীর বিশেষ মর্যাদা পেত। দেশটির সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব এবং কাশ্মীরকে দুই ভাগ অর্থাৎ জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ করার বিল পাস হয়।

অমিত শাহ’র উত্থাপিত বিল এবং প্রস্তাব ভারতীয় সংসদের উভয়কক্ষে পাস হওয়ার কারণে এখন থেক জম্মু-কাশ্মীর হবে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। এ ছাড়া কাশ্মীরকে দুটি ভাগে ভাগ করা হবে। যার একটি হবে জম্মু-কাশ্মীর অপরটি লাদাখ।

কাশ্মীরকে ভেঙে ১ লাখ ১ হাজার ৩৮৭ বর্গকিলোমিটার নিয়ে গঠিত হবে জম্মু-কাশ্মীর। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ওই এলাকায় ১ কোটি ২৫ লাখ ৪১ হাজার ৩০২ জন মানুষের বসবাস। কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে সেখানে আলাদা বিধানসভা থাকবে।

এ ছাড়া ৫৯ হাজার ১৯৬ বর্গকিলোমিটার ভূখন্ড নিয়ে গঠিত হবে লাদাখ নামে অপর একটি অঞ্চল। গত আদমশুমারি অনুযায়ী ওই এলাকার জনসংখ্যা ২ লাখ ৭৪ হাজার। এখানে কোনো পৃথক বিধানসভা থাকবে না। এটি পরিচালিত হবে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে।

Kashmir-1.jpg

গতকাল রাজ্যসভায় জম্মু-কাশ্মীর ইস্যুতে ওই বিল ও প্রস্তাব তোলা হলে তাতে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটকে সমর্থন দেয় বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি), বিজু জনতা দল (বিজেডি), তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি (টিআরএস), আম আদমি পার্টি (এএপি) এবং এআইএডিএমকে। তবে জোটসঙ্গী জনতা দল (ইউনাইটেড) তাতে সমর্থন দেয়নি।

মঙ্গলবার ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় কাশ্মীর নিয়ে সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল-সংক্রান্ত প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। প্রস্তাবটি পাস করতে কোনো বেগ পেতে হয়নি ক্ষমতাসীন বিজেপি জোটকে, কেননা লোকসভায় বিজেপির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে।

কয়েক দিন ধরেই কাশ্মীরে চরম উত্তেজনা চলছিল। আতঙ্কিত মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছিলেন। আচমকা পর্যটকদের কাশ্মীর ত্যাগের নির্দেশ দেয় সরকার। এ ছাড়া মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত ১০ হাজার সেনা। গৃহবন্দি করা হয় কাশ্মীরের সাবেক দুই মুখমন্ত্রীকেও। তারপর সোমবার কাশ্মীর-সংক্রান্ত সংবিধানের অনুচ্ছেদটি বাতিল করে সরকার।

মঙ্গলবার লোকসভায় প্রস্তাবটি উত্থাপিত হলে বিরোধী দল কংগ্রেসের সংসদ নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেন, ‘আপনি বলছেন এটা একটা অভ্যন্তরীণ বিষয় কিন্তু এটা ১৯৪৮ সাল থেকে জাতিসংঘ তদারকি করে আসছে, তাহলে কী এটা কোনো অভ্যন্তরীণ বিষয়? শিমলা চুক্তি এবং লাহোর ঘোষণায় আমরা স্বাক্ষর করেছি তাহলে কী সেটা অভ্যন্তরীণ নাকি দ্বিপাক্ষিক বিষয় ছিল?’

কাশ্মীর-সংক্রান্ত সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলে সরকারের বিরোধীতা করে তোপ দেগে কংগ্রেসের এই জ্যেষ্ঠ আইনপ্রণেতা বলেন, ‘কয়েক দিন আগে এস জয়শঙ্কর মাইক পম্পেওকে বলেছেন কাশ্মীর একটি দ্বিপাক্ষিক বিষয় তাই এখানে হস্তক্ষেপ করা যাবে না। তাহলেও জম্মু-কাশ্মীর কী করে অভ্যন্তরীণ বিষয় থাকে?’

কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেছেন, ‌‘তারা (কেন্দ্রীয় সরকার) সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করতে পারতো। সেখানে কাশ্মীরের প্রতিনিধিরাও থাকতো। তারা বৈঠক ডাকলে, আমরা তাতে যোগ দিতে প্রস্তুত ছিলাম। আলোচনার মাধ্যমে সবাইকে সহমতে এনে তারপর সিদ্ধান্ত নেয়া যেত। কোনো কিছুই স্থায়ী নয়। কিন্তু কখনও কখনও স্থায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হয়। পদ্ধতিগত ত্রুটি ছিল তাদের।’

এসএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।