ঢাবিতে ছাত্রলীগের চাঁদাবাজির পাল্টাপাল্টি অভিযোগ


প্রকাশিত: ০৬:৫৯ পিএম, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সামনে সিএনজিচালক ও আরোহীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান গ্রুপের কর্মীরা বলছেন এর সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক দিদার মুহাম্মদ নিজামুল হক ও সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন আনুর কর্মীরা জড়িত। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের কর্মীরা বলছেন এর সঙ্গে সভাপতি গ্রুপের কর্মীরা জড়িত।

জানা গেছে, গত শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে যাত্রী নিয়ে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সামনের রাস্তা দিয়ে পলাশীর দিকে যাচ্ছিল একটি সিএনজি। এসময় হলের মূল ফটকের সামনে থাকা একটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে ধাক্কা লাগে সিএনজিটির। মোটরসাইকেলটির কোনো ধরনের ক্ষতি না হলেও হল শাখা ছাত্রলীগের নেতারা যাত্রী এবং চালকের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা চাঁদা হাতিয়ে নেন।

এ ঘটনার মূলহোতা হিসেবে অভিযোগ উঠেছে এস এম হলে থাকা ‘জনি’ নামের এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। ঘটনায় শুরু থেকে তিনি সেখানে ছিলেন এবং চাঁদার টাকা তিনি নেন। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেন জনি।

তিনি বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি বুয়েটের একটি ছেলের বাইকে ধাক্কা দেয়ার ঘটনায় অনেকেই সেখানে একত্র হয়েছেন। এসময় হল শাখার সহ-সভাপতি তন্ময়, তাহের, রাজু, ইমরান ও সাংগঠনিক সম্পাদক আসিফ সেখানে ছিলেন। পরে সিএনজি আরোহীদের কাছ থেকে তারা দশ হাজার টাকা নেন।’

জনি বলেন, ‘পুরো টাকা তন্ময় নিজের হাতে নেন এবং বুয়েটের আহত হওয়া ওই ছাত্রকে আড়াই হাজার টাকা দেয়। পাঁচ হাজার টাকা তন্ময় নিজে নিয়ে নেয় আর হলের সাংগঠনিক সম্পাদক পিকুলসহ অন্যদের নাস্তার বিল বাবদ এক হাজার টাকা দেয়।’

তবে তাকে সিগারেট বাবদ পাঁচশো টাকা দিলে তিনি তা নিয়ে নেন বলে স্বীকার করেন। বাকি টাকার হিসেব তিনি দিতে পারেননি। এছাড়া তিনি সিএনজি আরোহীদের আত্মীয় মনির নামে একজনের কথা বলে জানান, ‘তিনি আমাকে অনুরোধ করেছিলেন যেন বিষয়টি মিউচুয়াল করে দেয়া হয়।’

তবে মনিরকে ফোন করা হলে তিনি জনিকে চেনেন না জানিয়ে বলেন, ‘আরোহীরা ছিলেন আমার এক চাচাতো বোন আর একজন ভাগিনা। তাদেরকে আটক করার পর আমি ওই হলে থাকা আমার বন্ধু আনোয়ার হোসেন আনুকে (সদ্য সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক) বলি ঘটনাটা দেখতে। সে জনির কথা বলে। জনি আমাকে ফোন করে বলে, ভাই ওরা ২০ হাজার টাকা দাবি করে আর আমি দশ হাজার টাকায় ভেঙে দিয়েছি। পরে আমি কোনো ঝামেলা না করে ওই টাকা দিয়ে দিতে রাজি হই।’

তিনি সাবেক কমিটির সহ-সম্পাদক ছিলেন জানিয়ে বলেন, ‘এসব ঘটনা ছাত্রলীগের জন্যে খুবই লজ্জার। তারা আমার বোন আর ভাগিনাকে আলাদা করে ফেলে। আমি শুধু আনুকে বললাম, তুই বলার পরও তারা টাকাটা নিলো? সে বললো, আমি স্যরি বন্ধু।’

টাকা নেয়ার অভিযোগ ওঠা আরেকজন হলের সাংগঠনিক সম্পাদক পিকুল বলেন, ‘আমরা পলাশীতে খেতে যাচ্ছিলাম। এসময় নাসিরের দোকানের সামনে এ ঘটনা দেখে আমরা একটু দাঁড়িয়ে খেতে চলে যাই।’ টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমরা খেতে গেলে জনি ভাই আমাদের খাওয়ার বিল বাবদ এক হাজার টাকা দেন।’ তবে নিজে কোনো টাকা হাতে নেননি বলেও দাবি তার।

জনির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হল শাখা সহ-সভাপতি তন্ময় বলেন, ‘আমরা গেস্টরুম করে যাচ্ছিলাম। পরে দেখি এই ঘটনা। আমরা দেখেই চলে গিয়েছিলাম। সে টোটালি মিথ্যা কথা বলছে আর আমাদের উপর ঘটনাটা চাপায়ে দিচ্ছে।’

চাঁদার টাকা বণ্টনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জনি ভাই নিজে পুরো টাকাটা হাতে নেন এবং তিনিই টাকা ভাগাভাগি করেন। তিনি শুধু শুধু আমাকে জড়িয়ে মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছেন। আমি টাকা বণ্টনের সময় ছিলাম না।’

তন্ময় তার হাত দিয়ে সব টাকা ভাগাভাগির বিষয়টি পুরোপুরি ‘মিথ্যা’ বলে মন্তব্য করেন। এছাড়াও অভিযোগ ওঠা হলের সাংগঠনিক সম্পাদক আসিফ বলেন, ‘টাকা ভাগাভাগির কোনো কিছুতে আমি জড়িত ছিলাম না।’

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে হল শাখার সাধারণ সম্পাদক দিদার মোহাম্মদ নিজামুল ইসলাম বলেন, ‘পুরো ঘটনাটা আমি শুনেছি ঘটনার পরদিন। ঘটনাটা স্বয়ং ছাত্রলীগ সভাপতি সোহাগ ভাই নিজেই দেখছেন। তিনি পুরো কাহিনী লিখে নিয়েছেন। তারা তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমার নামে যদি কেউ অভিযোগ করে থাকেন তাহলে সে খুব খারাপ একটা কাজ করছেন। এর ফলাফল ও কিন্তু খুব খারাপ হবে।’ তবে তিনি বলেন, ‘আমার কোনো কর্মীর বিরুদ্ধে যদি এ ধরনের কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

নিজের কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হল সভাপতি মেহেদী হাসান বলেন, ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে জনি আমার কর্মীদেরকে এ ঘটনায় জড়াতে চাচ্ছে।’ তবে অভিযুক্ত তার অনুসারী হলের সাংগঠনিক সম্পাদক আসিফ কোনোভাবেই এ ঘটনায় জড়াতে পারেনা বলে দাবি তার।

তিনি বলেন, ‘আমার কোনো কর্মী সেখানে ছিল না। ঘটনা শোনার পর আসিফসহ কয়েকজন সেখানে যায়। পুরো বিষয়টি কেন্দ্রীয় কমিটি তদন্ত করে তারা একটি ব্যবস্থা নিবে।’

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি আবিদ আল হাসান বলেন, ‘আমাদের কাছে কিছু নাম আছে। আমরা তদন্ত করছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরও তদন্ত করছে। ওখানে যারা জড়িত আছে যদি তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এমএইচ/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।