মিয়ানমার সেনাদের ব্যবসায় নিষেধাজ্ঞা চান মানবাধিকার কর্মীরা
রোহিঙ্গা নিপীড়নের ঘটনায় মিয়ানমার সেনাদের ব্যবসায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কর্মীরা। তারা বলছেন, বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশটি তাদের রাখাইন রাজ্যে গণহত্যার উদ্দেশ্য নিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, তাই তাদের সঙ্গে ব্যবসা করা এসব কাজে তাদের সহযোগিতা করারই শামিল।
মিয়ানমারের অসংখ্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সেদেশের সেনা সদস্যদের জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে জাতিসংঘের একদল মানবাধিকার কর্মী। তারা জানিয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অনেক বিদেশি কোম্পানির ব্যবসায়িক লেনদেন রয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে গত সোমবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তারা। মিয়ানমারের সেনারা জড়িত এমন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসায়িক লেনদেন বন্ধ করতে সব প্রতিষ্ঠানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এসব মানবাধিকার কর্মীরা।
সর্বশেষ ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার সেনা অভিযানে রাখাইন থেকে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। এ সময় তাদের অনেককে হত্যা এবং অনেক নারীকে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
তদন্ত কমিটির চেযারম্যান মারজুকি দারুসমান গত রোববার জাকার্তায় এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘এসব কোম্পানির সঙ্গে নির্দিষ্ট ইউরোপীয় ও এশিয়ান কিছু কোম্পানির লেনদেন রয়েছে, যা জাতিসংঘের চুক্তি ও আদর্শ ভঙ্গের শামিল।’
মানবাধিকার কর্মীদের ওই তদন্তে ফ্রান্স, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, হংকং ও চীনের কমপক্ষে লেনদেন আছে-এমন অন্তত ৫৯টি প্রতিষ্ঠানের খোঁজ মিলেছে, যেগুলোর সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কোনো না কোনো যোগসাজশ রয়েছে।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কাছে অস্ত্র না বিক্রির আহ্বানও জানানো হয় তদন্ত প্রতিবেদনে। বলা হয়, ইসরায়েল, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের ১৪টি কোম্পানি ২০১৬ সাল থেকে বার্মিজ সেনাবাহিনীর কাছে অস্ত্র বিক্রি করছে।
তদন্ত কমিটির প্রধান দারুসমান আরও বলেন, ‘কর্পোরেশনের ভেতরে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাও তাদের কাজের জন্য দায়বদ্ধ। সেনাবাহিনীর কাছে অস্ত্র বিক্রি করে তারাও পরোক্ষভাবে মিয়ানমারের জনগণের ওপর নির্যাতনের জন্য দায়ী।’
তদন্ত প্রতিবেদনটি মিয়ানমার সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের পক্ষ থেকে প্রতিবেদনের বিষয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কারও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে মিয়ানমার সরকার বরাবরই রাখাইন প্রসঙ্গে জাতিসংঘের অবস্থানকে ‘একপাক্ষিক’ বলে দাবি করে আসছে।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা মিয়ানমারের উচ্চপদস্থ সেনাকর্মকর্তাদের তাদের দেশে ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। সর্বশেষ গেল জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট বার্মিজ সেনাপ্রধান মিন অং হ্লায়েং-এর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
জাতিসংঘ মিয়ানমারের উচ্চপদস্থ সেনাকর্মকর্তাদের আন্তর্জাতিক আদাতে (আইসিসি) বিচারের আহ্বান জানিয়েছে। আইসিসি এর প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে।
সূত্র: ডয়চে ভেলে
এসআর/পিআর