পাবলিক রিলেশন্স একটি বিশেষায়িত পেশা : মির্জা তারেক
মির্জা তারেকুল কাদের ওরফে মির্জা তারেক বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব জার্নালিজম অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার (বিজেম) প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়াশোনা করেছেন। দৈনিক দেশ পত্রিকায় কয়েক বছর সাংবাদিকতার পর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। পরে বুয়েটের চাকরি ছেড়ে গড়ে তোলেন বিজেম।
‘রাজনীতিতে জনসংযোগ : বক্তৃতার রীতি-নীতি ও প্রচার কৌশল’, ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প’ এবং ‘জনসংযোগ ও প্রকাশনা’ তার লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। তিনি এশিয়াটিক সোসাইটির গবেষক, বাংলাদেশ জনসংযোগ সমিতি এবং বাংলাদেশ সম্পাদনা ও প্রকাশনা সমিতির সভাপতি।
তিনি পশ্চিমবঙ্গের ‘তিস্তা-তোরষা সম্মাননা’, ‘জাতীয় প্রেস ক্লাব লেখক পদক’ ও ‘স্বাধীনতা সংসদ এডুকেশন অ্যাওয়ার্ড’সহ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন। জাগো জবসের পক্ষ থেকে পাবলিক রিলেশন্স বা জনসংযোগ পেশা নিয়ে মির্জা তারেকের সঙ্গে কথা বলেছেন গোলাম রাব্বী।
জাগো জবস: জনসংযোগ পেশায় আপনার শুরুটা কিভাবে?
মির্জা তারেক: ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে আমার চাকরি জীবন শুরু। তখন আমি ওখানকার জনসংযোগ অফিসের প্রধান ছিলাম। পরে উচ্চশিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার প্রতিবাদে ২০০২ সালে স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দেই এবং বিজেম প্রতিষ্ঠা করি।
জাগো জবস: সব প্রতিষ্ঠানে জনসংযোগ কর্মকর্তা রয়েছে কিনা বা থাকা উচিৎ কিনা?
মির্জা তারেক: সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সংস্থা, এমনকি গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনেরও এ পদটি থাকা উচিত। পাশ্চাত্যের বহু দেশেই সেলিব্রেটিদেরও জনসংযোগ কর্মকর্তা রয়েছে। বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, এমনকি গীর্জাতেও এ পদ রয়েছে। অথচ বাংলাদেশের বহু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানেও কোন জনসংযোগ কর্মকর্তা নেই। এটি খুবই দুঃখজনক।
জাগো জবস: আমাদের দেশে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কি সঠিক জনসংযোগ কার্যক্রম পরিচালিত হয়?
মির্জা তারেক: বর্তমানে দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহে সঠিকভাবে জনসংযোগ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে বলে মনে হয় না। এখানে ব্যক্তিকেন্দ্রিক জনসংযোগের প্রাধান্যই বেশি। কোন বিশেষ বা একক ব্যক্তির জন্য নয়; জনসংযোগ কার্যক্রম পরিচালিত হওয়া উচিত প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডকে ঘিরে। দেশের বেশিরভাগ অফিসেই পূর্ণাঙ্গ জনসংযোগ বিভাগ, এ সংক্রান্ত নীতিমালা ও কৌশল অনুপস্থিত।
জাগো জবস: ক্যারিয়ার হিসেবে পাবলিক রিলেশন্সের ভবিষ্যত কেমন?
মির্জা তারেক: আমার দুটি গ্রন্থ এ বিষয়ে লেখা বাংলাদেশের প্রথম গ্রন্থ। একটি গ্রন্থ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের পাঠ্যসূচির অন্তর্ভূক্ত। এ বিষয়ে প্রচুর লেখালেখি করেছি এবং বহু প্রতিষ্ঠানে লেকচার দিয়েছি। বস্তুতপক্ষে- পাবলিক রিলেশন্স একটি বিশেষায়িত পেশা। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও এ পেশার গুরুত্ব যেমন বাড়ছে, পেশাজীবীদের সংখ্যা তেমন বাড়ছে।
জাগো জবস: পাবলিক রিলেশন্স অফিসার নিয়োগে সাংবাদিকতার শিক্ষার্থী বা সাংবাদিকতায় অভিজ্ঞদের প্রাধান্য দেয়া হয় কেন?
মির্জা তারেক: জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীদের প্রাধান্য দেয়ার কারণ হলো- তাদের এ বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। অপরদিকে- পেশাদার সাংবাদিকদের বাস্তব অভিজ্ঞতা। সাংবাদিকতা বা মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের প্রাধান্য দেয়া হলেও আজকাল এ পেশায় অন্য বিষয়ে ডিগ্রিধারীদেরও নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও অত্যাবশ্যকীয় গুণাবলি থাকলে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে যে কেউ এ পেশায় এসে সাফল্য পেতে পারেন।
জাগো জবস: পাবলিক রিলেশন্স অফিসারের মূল কাজ কী?
মির্জা তারেক: জনসংযোগ পেশাজীবীদের মূল কাজের মধ্যে- প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড ও উপযুক্ত গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার, বিজ্ঞাপন সম্পর্কে ভালো ধারণা, প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি গড়ে তোলা, গণমাধ্যমের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থকে সমুন্নত রাখা, অভ্যন্তরীণ ও বহিঃস্থ জনগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা, কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ, সংকট ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে প্রচ্ছন্ন ধারণা এবং তথ্য সংরক্ষণ প্রভৃতি। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের মানসম্পন্ন প্রকাশনা বের করাও এ বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
জাগো জবস: দক্ষ জনসংযোগ কর্মকর্তার কি কি গুণাবলী থাকা দরকার?
মির্জা তারেক: প্রথমেই মনে রাখা উচিৎ- পেশাটি যেমন চ্যালেঞ্জিং, তেমনি সৃজনশীল ও শৈল্পিক। মানবিক ও প্রযুক্তিগত যোগাযোগে পারদর্শিতা, বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা, সাংবাদিকতা ও জনসংযোগ বিষয়ে জ্ঞান, আধুনিক মুদ্রণ ও তথ্য-প্রযুক্তিতে দক্ষতা, ইন্টারনেটসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সম্পর্কে জানা, ভালো প্রেস বিজ্ঞপ্তি লিখতে ও বলতে পারা, গণমাধ্যমের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলা ও বজায় রাখা, প্রতিষ্ঠানের সবার সঙ্গে যোগাযোগ, পরিশ্রম করার মানসিকতা, জনসংযোগ সংশ্লিষ্ট আচরণবিধি ও নীতিমালা মেনে চলা, আন্তরিকতা এবং স্মার্টনেস একজন জনসংযোগ কর্মকর্তার প্রধান গুণাবলী। এছাড়াও ফটোগ্রাফি সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে।
জাগো জবস: পাবলিক রিলেশন্স ম্যানেজার হতে চাইলে আপনার পরামর্শ কী?
মির্জা তারেক: প্রথমত পেশা ও নিজের কাজ সম্পর্কে জ্ঞান রাখা। এছাড়া নিষ্ঠা, শ্রদ্ধাবোধ, টিম ওয়ার্ক, দায়িত্ব ও সময় সচেতন হওয়াটা জরুরি। একইসাথে মানুষের সাথে সম্পর্ক রক্ষা ও যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ানোতে নজর দিতে হবে।
জাগো জবস: জনসংযোগ কর্মকর্তার সফলতার মাপকাঠি কী?
মির্জা তারেক: আধুনিক জনসংযোগের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার ব্রান্ডিং। এর মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি গড়ে তুলে গ্রহণযোগ্যতাকে শীর্ষে নিতে জনসংযোগকর্মীরা সবসময়ই স্বচেষ্ট থাকেন। কোন কোন প্রতিষ্ঠানে মার্কেটিং ও পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ যৌথভাবে এ কাজটি করে থাকে। এখানে সফলতা মাপার সুনির্দিষ্ট মাপকাঠি না থাকলেও ব্রান্ডিংয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সেবার মান সম্পর্কে মানুষের সর্বোচ্চ আস্থা অর্জনই বিবেচ্য বিষয়।
জাগো জবস: গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
মির্জা তারেক: জাগো জবসের জন্য শুভকামনা।
এসইউ/পিআর