ধর্ষণ তো হয়েছেই, এবার মেরে ফেলতেই এত পরিকল্পনা?
২০১৭ সালের ঘটনা। ভারতের উত্তর প্রদেশের উন্নাওয়ে বিজেপির চারবারের বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, চাকরি দেয়ার নামে নিজের বাড়িতে ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরীকে তিনি ধর্ষণ করেছেন। সে সময় এ ঘটনা নিয়ে ভারতজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। ধর্ষণের অভিযোগে গত বছর কুলদীপকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর থেকে তিনি কারাগারেই আছেন।
গত রোববার (২৮ জুলাই) একটি দুর্ঘটনার পর বিষয়টি আবারও সামনে এসেছে। এদিন একটি মামলায় কারাবন্দি এক আত্মীয়কে দেখতে লক্ষ্ণৌ থেকে রায়বেরিলি যাচ্ছিলেন ভুক্তভোগী ওই তরুণী। সঙ্গে ছিলেন তার দুই কাকি ও আইনজীবী। পথিমধ্যে উল্টো দিক দিয়ে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে তাদের গাড়ির ধাক্কা লাগে। এ ঘটনায় ওই তরুণীর মা এবং তাদের আইনজীবী মহেন্দ্র সিংহের মৃত্যু হয় বলে প্রথমে জানায় পুলিশ।
পরে জানা গেছে, তার মা গাড়িতে ছিলেন না। তার কাকি ও বোন ছিলেন। তাদের দুজনের মৃত্যু হয়েছে। ওই তরুণী এবং তার আইনজীবী মহেন্দ্র সিংহ গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। নিহতদের একজন ধর্ষণ মামলার সাক্ষী।
ভুক্তভোগী তরুণীর পরিবারের অভিযোগ, জেলে বসে কুলদীপ সব খবর রাখছেন। তার ইশারায় এ ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া ওই তরুণীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরাই কুলদীপকে এসব তথ্য দিচ্ছেন বলে তাদের অভিযোগ। কারণ দুর্ঘটনার দিন তার নিরাপত্তা কর্মীরা সঙ্গে ছিলেন না।
ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গার ও তার ভাই মনোজ সেঙ্গারসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এ মামলার ভার দেয়া হয়েছে সিবিআইয়ের হাতে।
দুর্ঘটনার পর ভারতের রাজনীতি উত্তাল হয়ে উঠেছে। তীব্র সমালোচনা চলছে দেশটির সংসদেও। লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেন, উন্নাও ঘটনায় দেশবাসী লজ্জিত। সভ্য সমাজে এ ঘটনা কলঙ্কের। এ দেশে নাবালিকা গণধর্ষিত হয়, তার পরিবারের সদস্য এবং সাক্ষীকে ট্রাকে পিষে দেয়া হয়।
অধীর চৌধুরীর মন্তব্যের জবাবে কেন্দ্রীয় সংসদীয় বিষয়কমন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী বলেন, উন্নাও ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয়। ইতোমধ্যে সিবিআই তদন্তভার হাতে নিয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে। সরকার নিরপেক্ষ তদন্ত চালাচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
দেশটির সাধারণ জনগণও এ ঘটনায় সমালোচনা করছে। অনেকের দাবি, এটা দুর্ঘটনা নয়, খুন। দুর্ঘটনার সময় দেখা যায়, ঘাতক ট্রাকটির নম্বরপ্লেট কালি দিয়ে লেপা ছিল। ওই তরুণীর সঙ্গে পুলিশি প্রহরা কেন ছিল না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে অনেকে।
তবে পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, ভুক্তভোগী তরুণী এবং তার পরিবারই সঙ্গে পুলিশ নিতে অস্বীকার করেছিল। ওই তরুণীর কাকা, যিনি অন্য মামলায় রায়বরেলী জেলে বন্দি, তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশের কাছ থেকেই সব খবর জেলে বসে পাচ্ছেন কুলদীপ। তার ইশারায় রোববারের ‘অপারেশন’ হয়েছে।
২০১৭ সালে ঘটনার পর থেকেই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বারবার। পুলিশ এফআইআরে কুলদীপ সেঙ্গারের নাম রাখতে চায়নি বলে অভিযোগ। ধর্ষিতার বাবাকে কুলদীপের লোকজন মারধর করার পরে পুলিশ হেফাজতেই তার মৃত্যু হয়। ভুক্তভোগীর পরিবারের অভিযোগ, পুরনো মামলা খুঁচিয়ে তুলতেই ধর্ষিতার কাকাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ওই তরুণীর মা বলেন, পুরো পরিবারটাকে শেষ করে দিচ্ছেন কুলদীপ। কুলদীপের লোকজন প্রতিনিয়ত হুমকি দেয়। বলে, মামলা তুলে না নিলে জানে মেরে দেবে! ধর্ষিতার বাবার হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় যে পুলিশ অফিসার গ্রেফতার হন, তিনি সম্প্রতি জামিন পাওয়ার পরে হুমকি বেড়েছে।
তরুণীর পরিবার জানায়, ২০১৭ সালের ওই ঘটনার পর পুলিশে একাধিকবার অভিযোগ জানিয়েও লাভ হয়নি। উল্টো ভুক্তভোগী তরুণীর বাবাকে মিথ্যা মামলায় জেলে দেয়া হয়। এরপর মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বাসভবনের সামনে ওই তরুণী ও তার মা গায়ে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তারপরই এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসে।
এমএসএইচ/জেআইএম