ঈদ পর্যন্ত লাগাতার অবরোধের সিদ্ধান্তে অটল শিক্ষার্থীরা


প্রকাশিত: ০১:১৪ এএম, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফির উপর আরোপিত মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার সড়ক অবরোধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা না জানালেও আপাতত ঈদুল আজহা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ-বিক্ষোভের মতো আন্দোলন চলবে বলে জানায় তারা।

প্রসঙ্গত, চলতি অর্থবছরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপর সাড়ে সাত শতাংশ ভ্যাট আরোপ করেছে সরকার। আরোপিত এই ভ্যাট তুলে নিতে আদালতে একটি রিটও আবেদন করা হয়েছিল। মঙ্গলবার আদালত সেই আবেদন খারিজ করে দিলে বুধবার সকাল থেকে রাজধানীতে বিক্ষোভ শুরু করে বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছড়িয়ে পড়ে এই আন্দোলন।

বিক্ষোভের চতুর্থ দিন রোববার সকাল থেকে রাজধানীর শংকর, শ্যামলী, আদাবর, সাত মসজিদ, কলাবাগান, ধানমন্ডি ১৫, ২৭ ও ৩২, রামপুরা, কুড়িল, মহাখালীসহ বেশ কয়েকটি স্থানে সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা জানায়, শিক্ষাখাত থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের আগ পর্যন্ত লাগাতার চলবে এই আন্দোলন। সরকার কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হুমকি-ধামকিতে রাজপথ ছাড়বে না তারা।

ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কাকন বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত লাগাতারভাবে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সমবেত হবে। দাবি আদায়ে যদি শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধের সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে তাই হবে।


ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাকিুবল হাসান বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নেবে। আমরা আমাদের দাবি আদায়ে অনঢ়। সরকার আমাদের দাবি মেনে নিলেই আন্দোলন বন্ধ হবে। ‘নো ভ্যাট অন এডুকেশন’ এর মুখপাত্র ফারুক আহমেদ আরিফ বলেন, ‘দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলবে।’

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মীর নাজিমও বললেন একই কথা। আন্দোলনের ধরন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয় না থাকলেও দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত লাগাতার আন্দোলনে প্রায় সবাই একমত।

তবে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী জানান, সরকারের দায়িত্বশীল পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তা ভ্যাট প্রত্যাহারের আশ্বাস দিলে অবরোধ আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়াবে তারা। এদিকে `আন্দোলন বন্ধ করতে` নর্থ-সাউথ এবং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হলেও সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ চালিয়ে যাবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।

এভাবে লাগাতার আন্দোলন চলতে থাকলে রাজধানীবাসী অসহনীয় দুর্ভোগে পড়বে বলে মত সাধারণ জনগণের। এছাড়া মহাসড়কে অবরোধের ফলে আটকে যেতে পারে ঢাকামুখি হাজারো পশুবাহী ট্রাক। সর্বশেষ রোববার রাত পর্যন্ত ভ্যাট প্রত্যাহারে কোনো সিদ্ধান্ত দেননি অর্থমন্ত্রী কিংবা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে সড়ক অবরোধ তুলে নিজ ক্যাম্পাসে আন্দোলনের আহ্বান করা হলেও এতে রাজি নয় শিক্ষার্থীরা। তবে সড়ক থেকে তাদের সরিয়ে দিতে এখনই অ্যাকশনে যাচ্ছে না তারা।


এবিষয়ে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকও করেছে র‍্যাব। র‍্যাব-১ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ বলেন, সড়কগুলোকে অবরোধমুক্ত করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের সড়ক থেকে তুলতে এখনই কোনো অ্যাকশনে যাবে না র‍্যাব।

অবরোধে বিশেষ কয়েকটি সড়কে যানচলাচল বন্ধ থাকলেও জনগণের ভোগান্তি লাঘবে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশ। পুলিশের উত্তর বিভাগের তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) আবু ইউছুফ বলেন, রামপুরা রাজধানীর অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম সড়ক। অবরোধের ফলে যেন যানজট না হয় তাই বিকল্প তিনটি সড়কে গাড়িগুলোকে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে।

তবে পশুর হাটের সময় পশুবাহী গাড়িগুলো চলাচলের জন্য ট্রাফিক বিভাগের বিশেষ পরিকল্পনা আছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এআর/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।