কুড়িগ্রামে বন্যায় কৃষকের ক্ষতি ৪শ কোটি টাকা
কুড়িগ্রামে কৃষকের এখন মাথায় হাত। পর পর দু`দফা বন্যায় বেড়ে ওঠা আমন ক্ষেত নষ্ট হওয়ায় তাদের স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেছে। বন্যার পানিতে ডুবে থাকা চারাগুলো অধিকাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে জেলার ৩ লাখ কৃষক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। সোনালী ফসলের বদল এখন তাদের দু’চোখে শুধুই অন্ধকার।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, চলতি বছর ৮৮ হাজার ৩৯৬ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১ লাখ ৩ হাজার ২৯১ হেক্টর জমিতে আমন চাষ করেছে কৃষকরা। দীর্ঘ সময় পানিতে তলিয়ে থাকায় জেলার ৪৪ হাজার হেক্টর জমির চারা পচে নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে ৪০০ কোটি টাকা ক্ষতির কবলে পড়েছেন প্রায় ৩ লাখ কৃষক।
তিনি আরো জানান, গত ১৯ আগস্ট থেকে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দু’দফা বন্যায় জেলার ৯ উপজেলার ৬৩টি ইউনিয়নের ৫০৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এর ফলে তলিয়ে গেছে ৭৬ হাজার হেক্টর রোপা আমন ক্ষেত। ১৯ আগস্ট থেকে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত প্রথম দফা বন্যার পানি নেমে যেতে না যেতেই ৩১ আগস্ট থেকে দ্বিতীয় দফা বন্যা আঘাত হানে যা ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
ফলে ৩ সপ্তাহ ব্যাপি বন্যার পানি ক্ষেতে অবস্থান করায় অধিকাংশ ক্ষেতের চারা পচে নষ্ট হয়ে যায়। দু’দফা বন্যায় পানিতে তলিয়ে যায় প্রায় ৭৬ হাজার ৬৮৮ হেক্টর রোপা আমন ক্ষেত। এর মধ্যে ৪৪ হাজার ৮৫ হেক্টর রোপা আমন ক্ষেতের চারা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। এতে ৩৯৭ কোটি টাকার ক্ষতিতে পড়েছেন জেলার ২ লাখ ৯৫ হাজার ৭৭২ জন কৃষক। এর মধ্যে উলিপুর উপজেলায় ক্ষতির মাত্রা সব চেয়ে বেশি। এখানে ৯৬ হাজার ৫৫৮ জন কৃষকের ১১ হাজার ৭৫৪ হেক্টর আমন ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে।
বেলগাছা ইউনিয়নের টুপামারী বিলের কৃষক জিতেন সরকার জাগো নিউজকে জানান, আমার ৬/৭ একর জমির আমন ক্ষেত সম্পূর্ণ বন্যায় খেয়ে গেছে। এখানকার বিলে কৃষকদের লাগানো প্রায় ১৬০ একর রোপা আমন ক্ষেত পচে মাটিতে মিশে গেছে। বিপুল ক্ষতির সম্মুক্ষীন হয়েছি আমরা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারিভাবে পুনর্বাসন প্রয়োজন।
রাজারহাটের নাককাটি এলাকার কৃষক বিশ্বজিৎ মন্ডল জাগো নিউজকে জানান, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক চড়া দামে চারা কিনে লাগানোর ব্যবস্থা করছে। এতে বিঘায় প্রায় দুই হাজার থেকে বাইশ শ টাকা খরচ গুণতে হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক শওকত আলী সরকার জাগো নিউজকে জানান, চলতি বন্যায় কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে নাভি জাতের রোপা আমনের চারা রোপণের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আর যেসব জায়গায় পানি সরতে দেরি হচ্ছে সেখানে আগাম শাক-সবজি, সরিষা, মাসকালাই এবং চরাঞ্চলে বাদাম আবাদের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
নাজমুল হোসেন/এসএস/পিআর