ওটিতে সুর-চিকিৎসা দিয়ে রেকর্ড বাঙালি চিকিৎসকের
অপারেশন থিয়েটারে সার্জনের কাটাছেঁড়ার পাশাপাশি যদি চলে সুরের জাদু তাহলে তো অবাক হওয়ারই কথা। তবে এমনটি করেই রেকর্ড করেছেন বাঙালি এক চিকিৎসক।
বাঁ হাতে অস্ত্রোপচার আর ডান হাত তাল তুলছেন দারবুকায়। পায়ে অস্ত্রোপচার চলাকালীন রোগী ডুবকি বাজিয়ে গান ধরেছেন। হিপ জয়েন্টের মতো ম্যারাথন অপারেশনও কণ্ঠরোধ করতে পারেনি অশীতিপর বৃদ্ধার। রক্তে মাখামাখি অপারেশন থিয়েটার হয়ে উঠছে রিহার্সাল রুম। যেন সার্জনের কাটাছেঁড়ার পাশাপাশি চলছে সুরের মহড়া।
অনেকদিন ধরেই সুর দিয়ে চিকিৎসার পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছেন বাগুইআটির একটি বেসরকারি নার্সিং হোমের অর্থোপেডিক সার্জন ডা. সুমন্ত ঠাকুর। শল্য চিকিৎসার সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছেন সুরের মায়াজাল। তাতেই নাকি ম্যাজিক হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে অস্ত্রোপচারের জায়গাটুকু অবশ করলেই কাজ হচ্ছে। ‘ফুল বডি অ্যানেস্থেশিয়া’ করার দরকার হচ্ছে না। ফলে অস্ত্রোপচার পরবর্তী জটিলতা অনেক কম।
ডা. ঠাকুরের সুর চিকিৎসার জাদু এবার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। নির্বাচিত হয়েছে ‘ইউআরএফ গ্লোবাল অ্যাওয়ার্ড, ২০১৯’ -এর জন্য। সম্প্রতি ‘ইউনিভার্সাল রেকর্ড ফোরাম’ (ইউআরএফ)-এর তরফে ভাইস প্রেসিডেন্ট শুভদীপ চট্টোপাধ্যায় ও মিডিয়া ইনচার্জ উদয়ন বিশ্বাস সুমন্ত বাবুর হাতে প্রশংসাপত্র ও স্মারক তুলে দেন। উদয়ন জানান, ‘মিউজিক থেরাপির এমন ব্যবহার সুমন্তর আগে কেউ করেননি। তাই এ স্বীকৃতি।’
আর ডা. সুমন্তর পর্যবেক্ষণ, ‘মিউজিক আমাদের শরীরের লিম্বিক সিস্টেমকে প্রভাবিত করে। শরীরে এমন কিছু হরমোনের ক্ষরণ বাড়ায় যাতে ব্যথার প্রকোপ ও উদ্বেগ কমে। সেটাই প্রমাণ করার চেষ্টা করছি।’
এখনও পর্যন্ত একশোরও বেশি রোগীর উপর পরীক্ষা চালিয়েছেন সুমন্ত। ৫০ রোগীকে অস্ত্রোপচারের আগে ‘লোকাল অ্যানেস্থেশিয়া’, ‘রিজিওনাল ব্লক’ ও ‘স্পাইনাল অ্যানেস্থেশিয়া’ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে শোনানো হয়েছে পছন্দসই গান। বাকি ৫০ রোগীকে ‘ফুল অ্যানেস্থেশিয়া’ করা হয়েছে। সুমন্তর দাবি, মিউজিক থেরাপি হওয়া প্রথম ৫০ জনের মধ্যে ৪৩ জনের উপর সুর-তালের প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। তাদের রক্তচাপ, নাড়ির স্পন্দন, হৃদস্পন্দন ‘ফুল অ্যানেস্থেশিয়া’ হওয়া রোগীদের তুলনায় অনেক ভালো। পরীক্ষালব্ধ পর্যবেক্ষণকে সম্প্রতি একটি সেমিনারেও তুলে ধরেন ডা. সুমন্ত। সেখানে বেশ কিছু খ্যাতিমান চিকিৎসক ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দীপক ঘোষ উপস্থিত ছিলেন। প্রত্যেকেই স্বীকার করেন, ডাক্তাররা যদি প্রেসক্রিপশনে এবার থেকে ওষুধের সঙ্গে একটু-আধটু সুরের দাওয়াই লেখেন, তবে রোগ নিয়ে রোগীদের ভীতি অনেকটাই কমবে।
এএইচ/এমকেএইচ