ফেসঅ্যাপের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি মার্কিন সিনেটরের
সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুকে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে ফেসঅ্যাপ। যে কেউ এই অ্যাপসের সাহায্যে নিজের বয়স বাড়িয়ে কমিয়ে কেমন দেখা যায় সেটা দেখতে পারেন। এমনকি কাউকে বিপরীত লিঙ্গের মানুষ হলে কেমন দেখা যেত সেটাও জানা যায় এই অ্যাপ থেকে।
কিন্তু সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া এই ফেসঅ্যাপ ব্যক্তিগত গোপন তথ্যের ক্ষেত্রে উদ্বেগ তৈরি করেছে। কারণ ফেসবুকে এ ধরনের অ্যাপ ব্যবহারের সময় তৃতীয় পক্ষের হাতে ব্যক্তিগত তথ্য তুলে দেওয়ার জন্য সম্মতি দিতে হয়। ফলে এসব তথ্য দেয়ার কারণে নিরাপত্তা ঝুঁকির সঙ্গে সঙ্গে ফেসবুক অ্যাকাউন্টও হ্যাক হতে পারে।
সে কারণেই জনপ্রিয় এই ফেসঅ্যাপের বিরুদ্ধে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন সিনেটর চার্লস সুমার। তিনি এ বিষয়ে তদন্ত করতে এফবিআই এবং ফেডারেল ট্রেড কমিশনকে (এফটিসি) আহ্বান জানিয়েছেন।
বুধবার এ বিষয়ে এফবিআইয়ের পরিচালক ক্রিসটোফার রে এবং এফটিসির চেয়ারম্যান জোসেফ সিমন্সকে চিঠি পাঠিয়েছেন সুমার। রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের ওয়ারলেস ল্যাবের তৈরি এই ফেসঅ্যাপের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এই মার্কিন সংখ্যালঘু সিনেটর। তিনি বলেন, এই অ্যাপ জাতীয় নিরাপত্তা এবং কয়েক লাখ মার্কিন নাগরিকের গোপনীয় তথ্য ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে।
সুমার তার চিঠিতে লিখেছেন, এই ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি নজরদারি এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতে পারে। বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে নিজেদের ব্যক্তিগত এবং বায়োমেট্রিক তথ্যগুলো নিরাপদ রাখার বিষয়টি সুনিশ্চিত করা প্রয়োজন।
নিছক আনন্দ নিতে গিয়ে ওই অ্যাপ প্রস্তুতকারী সংস্থার কাছে ব্যবহারকারীর ছবি ও তথ্য চলে যাচ্ছে। ওই অ্যাপে বহু মানুষ নিজেদের ছবি দিয়েছেন। সেগুলো সংস্থার সার্ভারে রয়েছে। বিশ্বের বহু ল্যাপটপ ও স্মার্টফোন এখন ব্যবহারকারীর মুখের ছবি দিয়েই (ফেস রেকগনিশন পাসওয়ার্ড) খোলা যায়। ফলে ওই সংস্থার কাছে কিন্তু পাসওয়ার্ডও চলে যেতে পারে।
তাছাড়া, এমন অ্যাপগুলোকে বহু ক্ষেত্রে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নজরদারির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এতে অ্যাপের সার্ভারে জমা হওয়া ব্যবহারকারীর ছবি এবং তথ্য দিয়ে তাদের গতিবিধি এবং মনোভাবের ওপর নজর রাখা সম্ভব।
এই অ্যাপ ব্যবহারের আগে অনেকেই শর্তাবলী খুঁটিয়ে পড়েন না। এর ফলে অজান্তেই সেসব শর্তাবলী মেনে নেন। শর্ত অনুযায়ী, ওই অ্যাপ বিনামূল্যে ব্যবহারের বিনিময়ে ব্যবহারকারী সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে তার ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহারের অনুমতি দিচ্ছেন।
শুধু তাই নয়, ফেসবুকে তার বন্ধুদের তথ্যও তুলে দিচ্ছেন সংস্থার সার্ভারে। ওই অ্যাপে তিনি যত ছবি ব্যবহার করছেন, সেগুলোও সংস্থার কাছে চলে যাচ্ছে। ২০১৭ সালে এই অ্যাপ নিয়ে শোরগোল শুরু হয়েছিল। নতুন করে আবারও এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
সুমার জানিয়েছেন, তিনি চান এ বিষয়টি এফবিআই যেন খতিয়ে দেখে। মার্কিন নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য ওই অ্যাপের মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে কিনা সে বিষয়টি অতি দ্রুত খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
তবে ফেসঅ্যাপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়ারোস্লাভ গনচারোভ গার্ডিয়ানকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন, কোন তথ্য রাশিয়ার কাছে পাচার করা হয়নি। বরং এগুলো সংরক্ষিত রয়েছে। তিনি বলেন, ব্যবহারকারীদের কোন তথ্য তৃতীয় কোন ব্যক্তির কাছে বিক্রি বা পাচার করেনি ফেসঅ্যাপ।
টিটিএন/জেআইএম