‘কুলভূষণ মামলায় আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে পাকিস্তান’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:৫০ এএম, ১৮ জুলাই ২০১৯

কুলভূষণ যাদব মামলায় রায় দিয়েছে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত। বুধবার ওই মামলার রায়ে জানানো হয় যে, পাকিস্তান আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে। গুপ্তচর বৃত্তির অভিযোগে ভারতের প্রাক্তন এই নৌসেনা কর্মকর্তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল পাক সেনা আদালত।

পাকিস্তানের ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে আন্তর্জাতিক আদালতে যায় ভারত। দিল্লির দাবি, মিথ্যা মামলা সাজিয়ে ফাঁসানো হয়েছে কুলভূষণকে। তার কাছ থেকে জোর করে জবানবন্দি আদায় করেছে পাক সেনাবাহিনী।

ওই মামলায় ভারতের পক্ষে রায় দেয়া হয়েছে। পাক সামরিক আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের আদেশ পুনর্বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছে দ্য হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালত। ওই রায় পুনর্বিবেচনার আগ পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ড স্থগিত থাকবে। পাশাপাশি ভারতীয় কূটনীতিকদের কুলভূষণ যাদবের সঙ্গে দেখা করারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

১৬ সদস্যের বেঞ্চের ১৫ জন সদস্য ওই রায়ের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন আন্তর্জাতিক আদালতের ভাইস প্রেসিডেন্ট চীনা বিচারপতিও। বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন কেবল পাকিস্তানি বিচারপতি তাসাদুক হুসেন জিলানি।

২০১৬ সালের মার্চ মাসে ভারতীয় নৌসেনার প্রাক্তন কর্মকর্তা কুলভূষণকে গ্রেফতার করে পাক বাহিনী। পাকিস্তান দাবি করে, বেলুচিস্তানে জঙ্গি কার্যকলাপে মদদ দেওয়ার সময় কুলভূষণ গ্রেফতার হন। এরপর পাক সামরিক আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। ভারত পাল্টা দাবি করে যে, ইরানে কুলভূষণের ব্যবসা রয়েছে। তাকে সেখান থেকে অপহরণ করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়।

২০১৭ সালের ৮ মে ভারত কুলভূষণের বিষয়টি নিয়ে দ্য হেগের আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হয়। কুলভূষণের মৃত্যুদণ্ডে স্থগিতাদেশ দেয় আন্তর্জাতিক আদালত। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পুলওয়ামা হামলা পরবর্তী উত্তপ্ত পরিবেশে আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালতে এই মামলার শুনানি হয়।

ভারতের কৌঁসুলি হরিশ সালভে জানান, ভিয়েনা সনদ লঙ্ঘন করে ভারতীয় কূটনীতিকদের কুলভূষণের সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি পাকিস্তান। পাশাপাশি পাক সামরিক আদালতের কাজের পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। মৃত্যুদণ্ড খারিজ করে কুলভূষণকে দেশে ফেরত পাঠানোর আর্জি জানান সালভে। পাক কৌঁসুলি খাওর কুরেশি জানান, এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার অধিকার নেই ভারতের। কুলভূষণ যাদব চরবৃত্তিতে যুক্ত ছিলেন বলেই ভারতীয় কূটনীতিকদের তার সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি।

আন্তর্জাতিক আদালতের ১৫ সদস্যের বেঞ্চে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি দলবীর ভাণ্ডারী থাকায় আনা হয় পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি তাসাদুক হুসেন জিলানিকে। সেখানে আরও ছিলেন সোমালিয়া, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, স্লোভাকিয়া, জাপান, বেলজিয়াম, ব্রাজিল, ফ্রান্স, উগান্ডা, জামাইকা, লেবানন, অস্ট্রেলিয়া এবং মরক্কোর প্রতিনিধিরা।

আন্তর্জাতিক আদালতের প্রেসিডেন্ট সোমালিয়ার বিচারপতি আব্দুলওয়াকি আহমেদ ইউসুফের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ে জানায়, ভারতের আর্জি গ্রহণযোগ্য। ভারতীয় কূটনীতিকদের কুলভূষণের সঙ্গে দেখা করতে দিতে হবে। তার আইনি প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থাও করতে হবে। পুনর্বিবেচনা করতে হবে তার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ।

তবে কুলভূষণকে মুক্তি দেওয়া বা তাকে ভারতে ফেরত পাঠানো নিয়ে ভারতের আর্জি মানতে রাজি হয়নি দ্য হেগের আদালত। রায়ের অংশ উদ্ধৃত করে কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা বলেন, রায়কে স্বাগত জানাই। কিন্তু কুলভূষণের ফেরা নিশ্চিত হয়নি। পাকিস্তানের বেছে নেওয়া মঞ্চে ফের তার বিচার হবে। তিনি ফের অবিচারের শিকার হতে পারেন। রায়ের এই অংশের পুনর্বিবেচনার আর্জি জানাতে সরকারকে অনুরোধ জানাচ্ছি। অপরদিকে পাকিস্তান জানিয়েছে, তারা আইন মেনে চলবে।

টিটিএন/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।