সিন্ধুলিপির পাঠোদ্ধার, বাঙালি নারীর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
নাম অংশুমালী মুখোপাধ্যায় বহতা। পেশায় আইটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হলেও প্রাচীন বর্ণমালা নিয়ে জানতে বেশ আগ্রহী। সিন্ধুলিপি নিয়ে অতিরিক্ত নেশা তাকে এর পাঠোদ্ধারে সফল করেছে। তাইতো বাঙালি পরিবারের মেয়ে বহতা তার অনুসন্ধিৎসু মনের আবিস্কারের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছেন সম্প্রতি।
গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশের জন্য প্রসিদ্ধ আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘প্যালগ্রেভ কমিউনিকেশন্সে’ চলতি মাসে সিন্ধুলিপির পাঠোদ্ধার নিয়ে বহতার লেখা একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। ভারতের বেঙ্গালুরু নিবাসী বহতার লেখা নিবন্ধটির শিরোনাম ‘ইন্টারোগেটিং ইন্দাস ইন্সক্রিপশনস টু আরেইভেল দেয়ার মেকানিজম অব মিনিং কনভেয়েন্স’।
তবে তার প্রথম কাজ ঠিক পাঠোদ্ধার নয় বরং পাঠোদ্ধারের প্রকৃতি নির্ধারণ বলে জানালেন বহতা। তার কথায়, ‘সিন্ধুলিপির অনেক রকমের পাঠ প্রক্রিয়ার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু বেশিরভাগই বিজ্ঞানের ভাষায় ফলসিফায়েবল নয়।’
তিনি আরও জানালেন, ‘অধিকাংশই একে অন্যের নিয়ম মানেন না বা অন্যকে খণ্ডনও করেন না, শুধুই নিজের পথের কথা বলে চলেন। আমি এই প্রক্রিয়ার মাঝে দাঁড়িয়ে গাণিতিক প্রমাণের মতই অকাট্য একটি ইন্টারডিসিপ্লিনারি পদ্ধতিতে করা প্রমাণ পেশ করেছি। একই সঙ্গে চিহ্নগুলোকে শ্রেণিকরণের কাজটাও করেছি যাতে করে পরবর্তীকালে পাঠোদ্ধারের কাজে সুবিধা হবে।’
বহতার দাবি, নেচার ব্র্যান্ডের পত্রিকা প্যালগ্রেভ কমিউনিকেশন্সে প্রকাশিত তার এই ব্লাইন্ড রিভিউড পেপার রিভিউয়ারদের কাছ থেকে এ যাবৎকালের মধ্যে অন্যতম সেরা কাজ বলে স্বীকৃতি পেয়েছে। স্বামী বিজ্ঞানী হওয়ার সুবাদে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসিদ্ধ গণিতবিদ এবং পদার্থবিদ রণজয় অধিকারী তাকে সাহায্য করেছে বলেও জানান বহতা।
স্বামীর সূত্রেই একবার বহতাদের বাড়িতে আসেন অধ্যাপক রণজয় অধিকারী। বাঙালি পরিবারে এই মেয়ে বললেন, ‘সিন্ধু সভ্যতার লিপি নিয়ে তার কিছু কাজের কথা আমি আগেই শুনেছি। বিখ্যাত কিছু আন্তর্জাতিক জার্নালে সেগুলো প্রকাশিত হয়েছিল। তাকে অনুরোধ করে তার প্রোজেক্টে আমি কিছু কাজের সুযোগ পাই।’
প্রথমে প্রজেক্টে কিছুদিন কাজ করার সুযোগ পেলেও পরে তা হাতছাড়া হয়ে যায়। কিন্তু থামতে চাননি বহতা। জানালেন, ‘কাজটি নিয়ে আমার যেভাবে আগানোর ইচ্ছে ছিল, তা এই অধ্যাপকের বিশুদ্ধ গাণিতিক বা সংখ্যাতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার চাইতে খুবই আলাদা।’
সেসব দিনের কথা বলতে গিয়ে বহতা বলেন, ‘২০১৫ সালে আমার অফিসে প্রথমে এক মাসের ছুটি নেই। ওই সময়ের মধ্যে সিন্ধুলিপি নিয়ে আমার যেসব সন্দেহ ছিল সেগুলো জাভা প্রোগ্রামিং এর প্যাটার্ন সার্চের মাধ্যমে খতিয়ে দেখি। জানতে পারি আমি অনেক ক্ষেত্রেই ঠিক।’
তারপর আর ফিরে তাকাননি বহতা। অফিসকে বলে চাকরি ছেড়ে দেন তিনি। পরবর্তী দশ মাসের মধ্যে এ নিয়ে দুটি নিবন্ধ লেখেন। যার একটি সিন্ধুলিপির স্ট্রাকচারাল (গঠনগত) দিকগুলো নিয়ে আর অপরটি সেই লিপিতে লেখা বাক্য বা বাক্যাংশগুলোর অর্থ কী বা কী ধরনের তা নিয়ে।
মূল গবেষণাটি সম্পন্ন করে ২০১৬ সালে। তিন বছর পর তার সেই গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হলো। দ্বিতীয় গবেষণাপত্র নিয়ে রিভিউ চলছে বলে জানিয়েছেন এই গবেষক। সিন্ধুলিপিকে প্রধানত শব্দচিত্রের মাধ্যমে লিখিত একটি লিপি বলে মনে করেন বহতা। গবেষণাপত্রে এই দাবির সপক্ষে প্রমাণ দিয়েছেন তিনি।
এসএ/জেআইএম