ভারতে পাট ও পাটজাত দ্রব্য রফতানি বন্ধ


প্রকাশিত: ০৫:২৭ এএম, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫

ভারতের জুট কমিশন নতুন করে প্রজ্ঞাপন জারি করায় বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাট ও পাটজাত দ্রব্য রফতানি বন্ধ রয়েছে। এতে করে বেনাপোল স্থলবন্দরে আটকা পড়েছে শতাধিক পাট বোঝাই ট্রাক।

বৃহস্পতিবার হঠাৎ করে বাংলাদেশ থেকে পাট আমদানির ক্ষেত্রে সে দেশের ব্যবসায়ীদের এনওসি (অনুমতিপত্র) নেয়া ও এ পাট দিয়ে বস্তা তৈরি করা যাবে না বলে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এর ফলে ওই দিন বিকেল ৩টা থেকে বেনাপোলসহ সকল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পাট প্রবেশ করতে পারেনি।

বাংলাদেশের পাট রফতানিকারকদের অভিমত, এই প্রজ্ঞাপনের কারণে বাংলাদেশের কাঁচাপাটের বাজারে ধস নামতে পারে। এতে বেকার হয়ে যেতে পারে লক্ষাধিক শ্রমিক।

জানা গেছে, ভারত সরকারের পাট মন্ত্রণালয় না থাকায় টেক্সটাইল মন্ত্রণালয়ের জুট কমিশন সে দেশের পাট নিয়ন্ত্রণ করে। এর প্রধান কার্যালয় কলকাতার সল্টলেকে। গত ১০ সেপ্টেম্বর দেশটির পাট কমিশন প্রজ্ঞাপন জারি করে সে দেশের পাট আমদানিকারকদের জন্য কঠিন শর্তারোপ করেছে। এই প্রজ্ঞাপনের কপি বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় বেনাপোল বন্দরের বিপরীতে ভারতের পেট্রাপোল কাস্টমস হাতে পাওয়ার পর সে দেশে পাটের ট্রাক প্রবেশ বন্ধ করে দেয়।

এর ফলে খুলনার পাট রফতানিকারকদের শতাধিক পাটবোঝাই ট্রাক বেনাপোলে আটকা পড়েছে। পাট রফতানি খাতে রাষ্ট্রয়ত্ব ব্যাংকগুলোর প্রায় কয়েক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ শুধু খুলনায় রয়েছে। পাট রফতানিতে ধস নামলে সে খাতেও অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে। আর এই পাট রফতানি খাতের সঙ্গে এদেশের কৃষক ছাড়াও কয়েক লাখ শ্রমিক জড়িত। চলতি বছর পাট  মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকে কাঁচা পাটের বাজার চাঙ্গা ছিল। বৃহস্পতিবার  ভারত পাট গ্রহণ করছে না শুনে শুক্রবার খুলনার দৌলতপুর মোকামে পাট কেনাবেচা বন্ধ হয়ে গেছে।

খুলনার পাট রফতানিকারক ঢাকা ট্রেডিং লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর টিপু সুলতান পাট রফতানি বন্ধের কথা স্বীকার করে জাগো নিউজকে বলেন, প্রজ্ঞাপন জারির পর পাট বোঝাই কোনো ট্রাক ভারতে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। এর মধ্যে খুলনার পাট আমদানিকারকদের ১০০টি ট্রাক আটকা পড়েছে। অনেক রফতানিকারক লোকসানের ভয়ে পাটবোঝাই ট্রাক ফেরত নিয়ে গেছেন।

ভারতের জুট কমিশনের নতুন এই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে প্রতি চালান পাট আমদানির আগে কমিশন থেকে এনওসি (অনুমতিপত্র) নিতে হবে।

bemapol

টিপু সুলতান আরো জানান, আমরা এলসির মাধ্যমে ভারতে রফতানি করে থাকি। বিশ হাজার বেল এলসির পাট ২/৩ শত ট্রাকের চালান ভারতে রফতানি হয়। এখন প্রতি চালানে এনওসি আনতে গেলে এলসির সময়সীমা পার হয়ে যাবে।

প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়েছে, ভারতে আমদানি করা পাট দিয়ে বস্তা তৈরি করা যাবে না। অথচ বাংলাদেশ থেকে ভারতে যে পাট রফতানি হয় তার বেশিরভাগ দিয়ে সে দেশের জুটমিলগুলোতে বস্তা তৈরি হয়। ভারতে আমদানি করা পাট সে দেশে নেই এমন নিশ্চয়তা দেবার পরই ভারতে আমদানি করা যাবে। একইভাবে ভারতের জুট মিল ছাড়া কোনো আমদানিকারক পাট মজুদ করতে পারবে না।

প্রবীণ পাট রফতানিকারক হারুন অর রশিদ জাগো নিউজকে জানান, ভারতের প্লাস্টিক তৈরিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রভাব বিস্তার করে এই ধরনের প্রজ্ঞাপন জারি করাতে পারে। ভারত সরকারের এই ধরনের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের পাটের বাজারের ওপর প্রভাব ফেলবে। অপরদিকে ভারতের কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হবে। একইভাবে পাট চোরা পথে ভারতে পাচার হবে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ থেকে কয়েক বছর আগে বিভিন্ন দেশে ২০ থেকে ২৫ লাখ বেল পাট রফতানি হতো। কিন্তু গত কয়েক বছরে চীন, পাকিস্তান ও ইউরোপ পাট আমদানি না করায় তা নেমে এসেছে ৮ থেকে ৯ লাখ বেলে। এর ৮০-৯০ ভাগই ভারতে রফতানি হত যা দিয়ে ভারতের জুটমিলগুলো বস্তা তৈরি করে থাকে।

জামাল হোসেন/এসএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।