আর নয় আত্মহত্যা
আজ বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে প্রতি বছরের ১০ সেপ্টেম্বর আত্মহত্যা নিরোধী দিবস হিসেবে সারা বিশ্বে পালন করা হচ্ছে।
এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘প্রিভেন্টিং সুইসাইড: রিচিং আউট অ্যান্ড সেভিং লাইভস’। অর্থ্যাৎ- ‘আত্মহত্যা প্রতিরোধ : সম্প্রসারিত করুন এবং জীবন বাঁচান।’ যারা আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়ার ঝুঁকিতে আছেন তাদের কাছে আগেভাগে পৌঁছে গিয়ে সেই মূল্যবান জীবনগুলোকে রক্ষা করাই হবে আজকের দিনটির মূল উদ্দেশ্য।
জ্ঞানী-গুণী মুনি ঋষিরা জীবনের বন্দনা গেয়েছেন। জীবন হচ্ছে প্রকৃতির এক আশ্চর্য সুন্দর দান। রবীন্দ্রনাথ যেমনটি বলেছেন, ‘মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে’। কিন্তু এরপরও কিছু মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। জীবন যখন তার কাছে সবদিক থেকে অসহনীয় হয়ে ওঠে, যখন সে আর জীবনের ভার বইতে পারে না তখনই সে নিজেকে হত্যা করে। আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে দারিদ্র, বেকারত্ব, পারিবারিক কলহ, অভিমান, গ্লানিবোধ, নারী নির্যাতন, ঈভটিজিং, আর্থ-সামাজিক নানাবিধ কারণে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে আত্মহত্যায় যত মানুষ মারা যায় যুদ্ধ-বিগ্রহ কিংবা খুনোখুনিতেও এত মানুষ মরে না। তাই আত্মহত্যার বিষয়টি যে উদ্বেগজনক পর্যায়ে চলে গেছে সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বে প্রতি বছর আট লক্ষেরও বেশি মানুষ নিজের জীবন শেষ করতে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। প্রতি ৪০ সেকেন্ডে পৃথিবীর কোথাও না কোথাও একজন মানুষ আত্মহত্যা করে থাকেন। এছাড়াও আরো বহুগুণ মানুষ আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন। সারা বিশ্বে যত আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে থাকে তার ৭৫ শতাংশ বা তিন-চতুর্থাংশই হয়ে থাকে নিম্ন বা মধ্য আয়ভুক্ত দেশগুলোতে। এই তালিকাতেই বাংলাদেশের স্থান দশ নম্বরে।
আত্মহত্যার জন্য যে পদ্ধতিগুলোর ব্যবহার সবচেয়ে বেশি সেগুলো হলো- কীটনাশক খাওয়া, ফাঁসিতে ঝোলা কিংবা আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার। সারা বিশ্বেই এই প্রবণতা একই রকম। বিশ্বে ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যাই মৃত্যুর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কারণ। ২০১২ সালের পরিসংখ্যান সে রকম কথাই বলছে। আত্মহত্যাকে হু একটি গুরুতর জনস্বাস্থ্য সমস্যা বলে চিহ্নিত করেছে অনেক আগেই। তবে একই সঙ্গে তারা বলছে, ঠিক সময়ে হস্তক্ষেপ করে, ভালভাবে বুঝিয়ে এবং খুব কম খরচেই বেশিরভাগ আত্মহত্যা ঠেকানো সম্ভব।
আত্মহত্যার বিষয়টি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আইনগত এবং ধর্মীয়ভাবেই এটি গর্হিত একটি অপরাধ। আত্মহত্যাকারীকে তো আর ফেরানো যাবে না, তবে কেউ আত্মহত্যা করতে গিয়ে ব্যর্থ হলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। আত্মহত্যার মাধ্যমে শুধু একজন ব্যক্তির জীবন প্রদীপই নিভে যায় না এর একটি সামাজিক প্রভাবও রয়েছে। প্রতিটি আত্মহত্যার বিরূপ প্রভাব পড়ে পরিবারের ওপর, আত্মহত্যাকারীর স্বজনদের ওপর। এমনকী সমাজের ওপরও। একটি মাত্র আত্মহত্যার ঘটনা একটি পরিবার বন্ধু-বান্ধব ও অন্যান্য সদস্যদের সুখ-শান্তি কেড়ে নেয় সারাজীবনের জন্য।
সারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেও আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস পালন করা হচ্ছে। এদিনটির মূল লক্ষ্য হচ্ছে আত্মহত্যার হার যতটা কমিয়ে আনা যায় সেটিকে দৃষ্টি দেওয়া। আত্মহত্যার প্রবণতা কমিয়ে আনার জন্য বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। এরমধ্যে রয়েছে- অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি, শিক্ষার হার বাড়ানো, বেকারত্বদূর করা, পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করা, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা ইত্যাদি। এক্ষেত্রে কাউন্সেলিংও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বিশেষ করে কিশোর-কিশোরী যাদের মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতা রয়েছে তাদেরকে কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে জীবনমুখি করতে হবে। কারও জীবনই যে তুচ্ছ নয় এবং প্রতিটি জীবনই যে মূল্যবান এই মূলমন্ত্রে দীক্ষিত করতে পারলে কেউ আর আত্মহত্যার মত ঘৃণিত পন্থা বেছে নেবে না। এ বিষয়ে জনসচেতনতার জন্য গণমাধ্যমেরও ভূমিকা রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা যার যার জায়গা থেকে সঠিক দায়িত্ব পালন করলে আত্মহত্যার হার কমিয়ে আনা কোনো কঠিন বিষয় হবে না।
এইচআর/আরআইপি