গরমে নাকাল দশা ইউরোপের, যুক্তরাজ্যে সতর্কতা
ছয়দিন ধরে তীব্র গরমে নাকাল দশা ইউরোপের বিভিন্ন দেশের। ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, ইতালি, স্পেন, জার্মানি, পোল্যান্ড এবং কেন্দ্রীয় ইউরোপের অনেক দেশেই তীব্র দাবদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
ভয়াবহ গরমে এখন পর্যন্ত ফ্রান্সে চারজন, ইতালিতে দু'জন এবং স্পেনে দু'জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে, স্পেনে ভয়াবহ দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। শুক্রবার থেকেই সেখানে দাবানল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে যাচ্ছেন দেশটির দমকলকর্মীরা।
শুক্রবার আলমোরোক্স শহরে শুরু হওয়া দাবানলে কমপক্ষে ১৬শ হেক্টর জমি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সেখানকার একটি গ্রামের লোকজনকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জরুরি বিভাগের কর্মীরা।
এছাড়া স্পেনের দক্ষিণাঞ্চলে দাবানল থেকে প্রায় ৪০টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৬শ হেক্টর জমি এবং বহু বাড়ি-ঘর পুড়ে গেছে।
জার্মানিতে জুনের সামগ্রিক তাপমাত্র চার ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। এর আগের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে এবারের তাপমাত্রা। ২০০৩ সালে যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল তার চেয়েও দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেড়েছে।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা বলছে, ২০১৯ সাল বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণতম বছর। এ ছাড়া ২০১৫ থেকে ২০১৯ পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণ বছরের তালিকায় সবার উপরে আছে। জাতিসংঘ বলছে, গ্রীন হাউজ গ্যাস নির্গমনের কারণে বিশ্ব যে দিন দিন উষ্ণ হয়ে যাচ্ছে তারই প্রমাণ এটি।
এদিকে, আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ায় যুক্তরাজ্যে জরুরি সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দফতর। শনিবার সেখানকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফ্রান্স, স্পেন, জার্মানি এবং ইতালির বিভিন্ন স্থানেও সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
কিভাবে এই গরমের মধ্যেও ঠান্ডা থাকা যাবে সে বিষয়ে লোকজনকে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া তীব্র রোদের মধ্যে ঘরের বাইরে বের না হওয়ার জন্যও বলা হয়েছে। কারণ তীব্র গরমে অধিকাংশ সময় হিটস্ট্রোকেই বেশির ভাগ মানুষের মৃত্যু হয়।
জার্মানির আবহাওয়া বিভাগ বলছে, দেশটির তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। ১৯৪৭ সালে জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ইতালির সাতটি শহরেও তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।
অপরদিকে ফ্রান্সের জাতীয় আবহাওয়া সংস্থা মেট-ফ্রান্স বলছে, দেশটির গার্ড বিভাগের গ্যালারগেস মনটুয়েক্স অঞ্চলে স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে ৪৫ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্র রেকর্ড করা হয়েছে।
দেশটিতে এর আগে সর্বোচ্চ তাপমাত্র রেকর্ড করা হয়েছিল ২০০৩ সালে। সে সময় তাপমাত্রা ছিল ৪৪ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফ্রান্সের আবহাওয়া সংস্থার জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ ইতিন্নে কাপাকিয়ান ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানকে বলেছেন, ‘এটা ঐতিহাসিক। এবারই প্রথম তাপমাত্র ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করেছে। যা এর আগে কখনোই হয়নি।
আগে যেটা ছিল তা এরচেয়ে অনেক কম।’
ফ্রান্স ছাড়াও বুলগেরিয়া, পর্তুগাল, ইতালি, স্পেন, গ্রিস, নর্থ মেসিডোনিয়ার বিভিন্ন স্থানে তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে।
টিটিএন/জেআইএম