প্রথম দিনেই লোকসভায় তৃণমূলের মহুয়া ঝড়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:৪৮ পিএম, ২৭ জুন ২০১৯

প্রথমবারের মত এমপি হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের মহুয়া মৈত্র। মঙ্গলবার পার্লামেন্টে প্রথম ভাষণে তিনি ফ্যাসিবাদ বা কর্তৃত্ববাদী জাতীয়তাবাদের প্রাথমিক লক্ষণসমূহ নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, ভারতের সামাজিক মাধ্যমে সেটাকে ‘বছরের সেরা’ ভাষণ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন অনেক মানুষ।

মহুয়া মৈত্র বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের হলোকাস্ট মেমোরিয়াল মিউজিয়ামে একটি পোস্টারে তিনি ফ্যাসিবাদের প্রাথমিক লক্ষণসমূহের এক তালিকা দেখেছিলেন। তালিকার সে সব লক্ষণ তিনি একে একে পড়ে শুনিয়ে বলেন, ভারতের সংবিধান এখন হুমকির মুখে। ক্ষমতাসীন দলের বিভক্তির রাজনীতির কারণে ভারত এখন ছিড়ে টুকরো হয়ে যাচ্ছে।

তিনি শুরুতেই ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) বিজয়ের উল্লেখ করে বক্তব্য শুরু করেন। মৈত্র বলেন, এখন এই বিপুল জয়ের একটি প্রধান দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায় ভিন্নমত অবলম্বনকারীদের স্বর যাতে অশ্রুত না থাকে - তা নিশ্চিত করা।

পার্লমেন্টে প্রথমবারের মতো বক্তব্য দিতে তিনি যখন দাঁড়ান, তার কিছুক্ষণের মধ্যেই সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা তাকে তিরস্কার করে নানারকম কথা বলতে শুরু করেন। এর মধ্যেই তিনি ফ্যাসিবাদের সাতটি প্রাথমিক লক্ষণ পড়ে শোনান

১. দেশে শক্তিশালী ও ধারাবাহিক জাতীয়তাবাদ ক্রমে দেশের জাতীয় পরিচয়ে পরিণত হয়। এটা সুপারফিশিয়াল বা এর আসলে কোন গভীরতা নেই বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘এটা বর্ণবাদ এবং সংকীর্ণ ভাবনা। এটা বিভক্তি বাড়ায় আর কোনভাবেই ঐক্যের চেষ্টা করে না।’

২. মহুয়া মৈত্র উল্লেখ করেন, মানবাধিকারের প্রতি একটি ব্যাপক অবজ্ঞা দেখা যাচ্ছে, যা ২০১৪ থেকে ২০১৯ এর মধ্যে অন্তত ১০ গুণ বেড়েছে বলে মনে করেন তিনি।

৩. গণমাধ্যমের ওপর কর্তৃত্ব এবং নিয়ন্ত্রণের কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন, ভারতের টিভি চ্যানেলগুলো নিজেদের এয়ারটাইমের বড় অংশ ক্ষমতাসীন দলের প্রচার-প্রচারণায় (প্রোপাগান্ডা) ব্যয় করেছে।

৪. জাতীয় নিরাপত্তার কথা বলে বাড়তি সচেতনতার জন্য সরকারকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, ‘ভারতে এক ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করা হয়েছে এবং প্রতি নিয়ত নতুন শত্রু তৈরি করা হচ্ছে।’

৫. তিনি বলেন, ‘সরকার ও ধর্ম পরস্পরের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। এ সম্পর্কে কি আমার বলবার প্রয়োজন আছে? আমার কি বলার প্রয়োজন আছে যে, নাগরিক হবার মানে কী সেটাই আমরা বদলে দিয়েছি?’ তিনি উল্লেখ করেন, মুসলমানদের লক্ষ্য করে আইনে সংশোধন আনা হয়েছে।

৬. বুদ্ধিজীবী ও শিল্পের প্রতি চরম অবজ্ঞা দেখানো হয়েছে এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর শোষণ চালানো হয়েছে। একে ফ্যাসিবাদের সব চিহ্নের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিকর বলে মিস মৈত্র মন্তব্য করেছেন। তার মতে, ‘এটা ভারতকে অন্ধকার যুগে নিয়ে গেছে।’

৭. দেশটির নির্বাচন ব্যবস্থার স্বাধীনতা নষ্ট হয়ে গেছে। আর এটাকেই ফ্যাসিবাদের শেষ চিহ্ন হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।

Mohua

কাশ্মীরে ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলা এবং পাকিস্তানে চালানো ভারতের বিমান হামলার সমালোচনা করেন তিনি। ওই ঘটনাগুলোতে বিজেপি হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে বিভক্তি তৈরির চেষ্টা চালায় বলে তিনি কঠিন সমালোচনা করেন।

তার বক্তব্যের পুরো সময়টাতে সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা হট্টগোল করে তাকে থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। তবে তাতে তাকে একবারো বিচলিত হতে দেখা যায়নি। বরং তিনি দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে নিজের বক্তব্য শেষ করেন।

এ সময় কয়েকবার তিনি স্পিকারকে তার পেশাগত দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। নানা তথ্য উপাত্ত ব্যবহার করে ১০ মিনিট ধরে ইংরেজিতে বক্তব্য রাখেন মহুয়া মৈত্র। তবে মাঝখানে হিন্দিতে কয়েক রাইন কবিতারও উদ্ধৃতি দেন তিনি।

সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই এ হিন্দি কবিতা আওড়ানোর জন্য তার ভূয়সী প্রশংসা করেন, কারণ তিনি হিন্দিভাষী নন। তার মাতৃভাষা বাংলা। ফলে মঙ্গলবার তিনি যখন প্রথমবারের মত ভাষণ দিতে দাঁড়ান, অনেকেই একটি বুদ্ধিদীপ্ত বক্তৃতাই আশা করেছিল।

কিন্তু অনেকের কাছেই এটা ছিল বুদ্ধিদীপ্তর চেয়ে বেশি কিছু। কিছুক্ষণের মধ্যেই টুইটারে এ নিয়ে শুরু হয় আলোচনা। মৈত্রের এই ভাষণ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। কারণ দেশটির পার্লামেন্টে ক্ষমতাসীন বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং পার্লামেন্টে বিরোধী দল কোণঠাসা।

সূত্র : বিবিসি বাংলা

এসএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।