চিকিৎসকদের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে ভারতের বিভিন্ন স্থানে
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসকদের কর্মবিরতি ও প্রতিবাদকে সমর্থন জানিয়ে নয়াদিল্লি, মুম্বাই ও হায়দরাবাদের চিকিৎসকরাও একদিনের কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন। মঙ্গলবার থেকেই পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসকরা ধর্মঘটে যোগ দিয়েছেন। চতুর্থ দিনের মতো আজ তারা ধর্মঘট পালন করছেন।
মঙ্গলবার হাসপাতালে মারা যাওয়া এক রোগীর আত্মীয়রা এনআরএস মেডিকেল কলেজ হসপিটালের দুই জুনিয়র চিকিৎসককে অপদস্ত করে। এর প্রতিবাদে ধর্মঘট ডাকা হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হুঁশিয়ারিকে না মেনে চিকিৎসকদের তরফ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা নিরাপত্তা না পাবেন ততক্ষণ তারা কাজে ফিরবেন না।
আগেই নয়াদিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সের সব পরিষেবা বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এনআরএস-এর জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনকে সমর্থন করতে কর্মবিরতিতে যোগ দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গানা, মহারাষ্ট্রসহ একাধিক হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট মেডিক্যাল সায়েন্সেস (এইমস) এবং মুম্বাইয়ের জে জে হসপিটালসহ বেশ কিছু হসপিটালের চিকিৎসকরা কর্মবিরতি ঘোষণা করছেন। ফলে এসব হাসপাতালে আউটডোর এবং জরুরি পরিষেবা বন্ধ রয়েছে। সব মিলিয়ে এনআরএস আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশেই।
বৃহস্পতিবার এইমস-এর চিকিৎসকরা হেলমেট পরে এবং মাথায় ব্যান্ডেজ বেঁধে প্রতীকী প্রতিবাদে অংশ নেন। তবে পরিষেবা সচল ছিল। ওই অবস্থাতেই সব বিভাগে চিকিৎসা দিয়েছেন চিকিৎসকরা। সেই সঙ্গে বৃহস্পতিবারই ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছিল যে, শুক্রবার হাসপাতালের সব পরিষেবা বন্ধ থাকবে। সারা দেশের সব মেডিক্যাল কলেজকেও এক দিনের এই প্রতীকী কর্মবিরতিতে সামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল এইমস-এর রেসিডেন্ট ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন।
উত্তরপ্রদেশের হাসপাতালগুলোর মধ্যে অন্যতম বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটির অধীনস্থ ইন্ডিয়ান মেডিকেল সায়েন্সেস (আইএমএস)। এনআরএস-এর আন্দোলনে সমর্থন জানাতে এই মেডিকেল কলেজেও পরিষেবা বন্ধ করে কর্মবিরতিতে সামিল হয়েছেন চিকিৎসকরা। সংগঠনের রেসিডেন্টস অব আইএমএস (বিএইচইউ)-এর তরফ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে যে, আউটডোর, ইনডোর এবং সাধারণ অস্ত্রোপচারের কাজকর্ম বন্ধ থাকবে। তবে জরুরি পরিষেবা এবং জরুরি অস্ত্রোপচার চালু থাকবে।
কলকাতার আন্দোলনের রেশ ছড়িয়েছে দক্ষিণের দুই রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তেলঙ্গানাতেও। সেখানকার মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী এবং চিকিৎসকরাও এনআরএসের আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তবে এখানে পরিষেবায় খুব বেশি প্রভাব পড়েনি।
চিকিৎসকরা হাসপাতাল ক্যাম্পাসের মধ্যে একটি প্রতিবাদ মিছিল করেছেন। হাসপাতাল সুপারের দফতরের কাছে গিয়ে শেষ হয় সেই মিছিল। তেলঙ্গানার হায়দরাবাদে নিজাম ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেসের চিকিৎসকরাও একটি প্রতিবাদ মিছিলে অংশ নিয়েছেন।
এদিকে চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে চিকিৎসার অভাবে তিন দিনের একটি শিশুর মৃত্য হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে এই ঘটনা ঘটেছে কামারহাটির সাগর দত্ত মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। গত ১০ জুন মধ্যমগ্রামের গঙ্গানগর কাঁটাখালের বাসিন্দা ঝুম্পা কর্মকার মল্লিক ওই হাসপাতালে ভর্তি হন। পরের দিন তিনি একটি পুত্রসন্তান জন্ম দেন।
ঝুম্পার স্বামী অভিজিৎ মল্লিক জানান, জন্মের পরে সুস্থ ছিল শিশুটি। পরে শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় সাগর দত্ত হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান, তাকে ভেন্টিলেশনে দিতে হবে। কিন্তু কামারহাটির ওই হাসপাতালের এসএনসিইউএ সেই সুবিধা না থাকায় অভিজিৎকে অন্যত্র যোগাযোগ করতে বলা হয়। যদিও ততক্ষণে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি শুরু হয়ে গেছে। ফলে শিশুটি চিকিৎসার অভাবেই মারা গেছে।
টিটিএন/এমএস