দুর্নীতিবন্ধ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠাই হোক লক্ষ্য


প্রকাশিত: ০৫:১০ এএম, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫

দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ২১ লাখ চাকরিজীবীর বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের মধ্যে স্বস্তি নিয়ে এসেছে। অনেকদিন ধরেই পে-স্কেল বাস্তবায়ন হচ্ছে-এরকম একটি প্রত্যাশার মধ্যে ছিলেন তারা। মন্ত্রিসভা গতকাল সোমবার এটি অনুমোদন করায় সেই প্রতীক্ষার অবসান হল। এখন এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির পর শেষ হবে সকল আনুষ্ঠানিকতা।

২০১৩ সালের ২৪ নভেম্বর সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ১৭ সদস্যের ‘জাতীয় বেতন ও চাকরি কমিশন-২০১৩’ গঠন করে সরকার। ওই বছরের ১৭ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হওয়া এ কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। গত বছরের ২১ ডিসেম্বর সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে প্রতিবেদন তুলে দেন জাতীয় বেতন ও চাকরি কমিশনের চেয়ারম্যান। এরপর নানা আলোচনা-পর্যালোচনার পর এ সংক্রান্ত সচিব কমিটির সুপারিশ অনুমোদন করলো মন্ত্রিসভা।

নতুন স্কেলে প্রথম গ্রেডে সর্বোচ্চ মূল বেতন ৭৮ হাজার টাকা (নির্ধারিত)। আর ২০তম গ্রেডে সর্বনিম্ন মূল বেতন ৮ হাজার ২৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।  বাদ দেওয়া হয়েছে টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড । বার্ষিক প্রবৃদ্ধি সর্বজনীন করায় এটির প্রয়োজন হবে না বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন। এছাড়া ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন কমিশন ১৬টি গ্রেডের সুপারিশ করলেও সচিব কমিটি সরকারের আর্থিক সামর্থ্য ও কর্মকর্তাকর্মচারীদের দাবির কারণে ২০টি গ্রেড বহাল রেখেছে। তবে শ্রেণি (প্রথম শ্রেণি, দ্বিতীয় শ্রেণি) তুলে দেয়া হয়েছে। এখন থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিচয় হবে গ্রেড অনুযায়ী। বেড়েছে অবসর ভাতাও। বর্তমান অর্থ বছরের জুলাই থেকে বেতন বৃদ্ধি কার্যকর হবে। ভাতা কার্যকর হবে আগামী অর্থবছর থেকে।

তিনবাহিনীর (সেনা, নৌ ও বিমান) প্রধানের বেতন ও পদমর্যাদা একই সমান করা হয়েছে। এছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, এমপিওভুক্ত শিক্ষক, সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এই বেতন স্কেলের আওতায় আসবে। তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাবি অনুযায়ী আলাদা বেতন কাঠামো এবং পদমর্যাদা নির্ধারণের ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

নতুন পে-স্কেলের আরেকটি সংযোজন হচ্ছে বাংলা নববর্ষে উৎসব ভাতা। এই ভাতা হবে মূল বেতনের ২০ শতাংশ। এটি নিঃসন্দেহে সাধুবাদযোগ্য। বাংলা নববর্ষ এখন সার্বজনীন অসাম্প্রদায়িক একটি উৎসবে পরিণত হয়েছে। ভাতা চালু হওয়ায় সব সম্প্রদায়ের মানুষ এখন আরও ভালভাবে এই উৎসবে অংশ নিতে পারবেন। ফলে উৎসব হবে অর্থবহ।

নুতন পে-স্কেল ঘোষণা হয়েছে এটি আশার দিক। যে উদ্দেশ্য সেটি করা হয়েছে তা বাস্তবায়ন করাই এখন সময়ের দাবি। অন্য পেশা বা বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানের তুলনায় প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা অনেক কম বেতন পান বলে একধরনের হতাশা ছিল। ফলে মেধাধীদের সরকারি চাকরির ব্যাপারে অনাগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে-এমন কথাও শোনা যেত। জনপ্রশাসনের কাছ থেকে কাঙ্খিত সেবা পাওয়ার বিষয়টি এখনো সন্তোষজনক নয়। এখন নিশ্চয়ই তার অবসান হবে। পেশাগত দক্ষতা, মান, উৎকর্ষ বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করতে হবে নিষ্ঠার সঙ্গে। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে কাড়ি কাড়ি অর্থ খরচ হবে আর জনসাধারণের ট্যাক্সের পয়সায় বেতনভোগীরা কাঙ্খিত সেবা দিবেন না- এটা হতে পারে না। এছাড়া ঘুষ, দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে হবে। সুশাসন নিশ্চিত করাটাও জরুরি। এগুলো সম্ভব হলে বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।

পে-স্কেল বাস্তবায়নের ফলে নিত্যপণ্যের বাজার যাতে অস্থির হয়ে না ওঠে সেটিও নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখা প্রয়োজন, এই বেতন বৃদ্ধি মাত্র ২১ লাখ চাকরিজীবীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এই বাইরে বিরাট সংখ্যক চাকরিজীবী ও পেশাজীবীরা রয়ে যাচ্ছেন। তাদের বেতন-ভাতার বিষয়টিও পে-স্কেলের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। নইলে চাকরির বাজারে একটি অস্থিরতা তৈরি হবে। আমাদের সমাজে বৈষম্য এখনো প্রকট। পে-স্কেলের সর্বোচ্চ গ্রেড এবং সর্বনিন্ম গ্রেডের বেতনের দিকে তাকালেই বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। একই আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের জন্য অবারিত সুযোগ সুবিধা থাকবে আর বাকিরা বঞ্চিত হবে-এটি কোনো সুষ্ঠু সমাজ ব্যবস্থার জন্য কল্যাণকর হতে পারে না। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সকলকেই সক্রিয়ভাবে ভেবে দেখতে হবে।

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।