ইরান যাচ্ছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী, নেপথ্যে কী?
মধ্যপ্রাচ্যে ‘চিরশত্রু’ ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব আর উত্তেজনা এখন চরমে। ঠিক এমন সময়ে ট্রাম্পের বন্ধু এবং ওয়াশিংটনের মিত্র হিসেবে পরিচিত জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে তেহরান যাচ্ছেন। গত ৪১ বছর কোনো জাপানি প্রধানমন্ত্রী ইরান সফর করেননি।
আগামী বুধবার (১২ জুন) শিনজো আবের দুই দিনের সফর শুরু হবে। তার ইরান সফর মধ্যপ্রাচ্যে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘ অর্ধ শতাব্দী পর জাপানের কোনো প্রধানমন্ত্রীর ইরান সফরের কারণে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে দেশটির নতুন অবস্থান তৈরি হবে।
তবে আরও প্রশ্ন উঠেছে, উপসাগরীয় অঞ্চলে এমন সংকটময় মুহূর্তে আবের সফর থেকে কী পেতে পারে খনিজসমৃদ্ধ দেশটি বা তাদের জনগণের প্রত্যাশাই বা কী? তবে উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন, প্রায় অর্ধ শতাব্দী পর জাপানের কোনো প্রধানমন্ত্রী ইরান যাচ্ছেন—এই বিবেচনায় সফরটি গুরুত্ব বহন করছে।
গত মাসেই জাপান সফর করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সে সময় শিনজো আবের তেহরান সফর নিয়ে দুই নেতার মধ্যে আলোচনা হয়।
তবে আবের এই সফর শুরু হওয়ার আগে জাপান সরকার ইঙ্গিত দিচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী আবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের চলমান বিরোধে মধ্যস্থতাকারী বা ওয়াশিংটনের পক্ষ হয়ে তেহরান যাচ্ছেন না। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করতেই আবের তেহরান সফর।
মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েন মার্কিন সেনা ও স্বার্থে ইরান আঘাত হানতে পারে এমন দাবি করে সম্প্রতি অঞ্চলটিতে সামরিক উপস্থিতি বাঁড়ায় ট্রাম্প প্রশাসন। সেই থেকে তেহরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, যেকোনো মুহূর্তে পরিস্থিতির অবনতি হলে তা যুদ্ধের দিকে ধাবিত হতে পারে।
নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ দেশ এবং জার্মানি ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তিকে স্বাক্ষর করে। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর সেই চুক্তি থেকে তার দেশকে সরিয়ে নেন। তারপর থেকেই তেহরানের বিরুদ্ধে একের পর এক অবরোধ এবং নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে চলেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
যেসব দেশ ইরান থেকে তেল কেনে তাদের ওপরও খড়গহস্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। জাপান হচ্ছে ইরানের প্রধান তেল আমদানিকারক দেশগুলোর অন্যতম। জাপান সফরের সময় ট্রাম্প জানান, ইরান চাইলে আলোচনায় বসতে রাজি আছে যুক্তরাষ্ট্র। তার এমন মন্তব্যের পর জল্পনা শুরু হয়, তাহলে বোধহয় ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চলমান সংঘাত প্রশমনে মধ্যস্থতা করতে যাচ্ছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী আবে।
এদিকে আবের দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরকে ইরান সরকারের সাফল্য হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ১৯৭৯ সালের পর প্রথম কোনো জাপানি নেতা হিসেবে আবে ইরান সফর করতে যাচ্ছেন। ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি এবং দেশটির আধ্যাত্মিক নেতা আলি খামেনির সঙ্গে দেখা করবেন তিনি।
এসএ/এমএস