মুর্তাজাকে ফাঁসি না দেয়ার আহ্বান অ্যামনেস্টির

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:৩৯ এএম, ১০ জুন ২০১৯

আরব বসন্তের সময় সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশে ১০ বছর বয়সে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেয়ায় মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত মুর্তাজা কুরেইরিসকে মুক্তি দেয়ার জন্য দেশটির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

২০১১ সালে আরব বসন্তের উত্তাল সময়ে সৌদি রাজতন্ত্রের নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্রের দাবিতে সে সময় দেশজুড়ে যে গণবিক্ষোভের সূচনা হয়েছিল, তার অংশ হিসেবেই মুর্তাজা কুরেইরিস বন্ধুদের নিয়ে সাইকেল রাইডে নেমেছিলেন।

এই অল্পবয়সী বালকদের জড়ো হওয়ার বিষয়টি সে সময় ‘পর্যবেক্ষণ’ করে সৌদি সরকার। ওই বিক্ষোভে অংশ নেয়ার তিন বছর পর পরিবারের সঙ্গে দেশ ছাড়ার সময় বাহরাইন সীমান্তে মাত্র ১৩ বছর বয়সে গ্রেফতার হন মুর্তাজা।

সেই থেকে দাম্মাম শহরের পূর্বে অবস্থিত একটি কিশোর কারাগারে সৌদি আরবের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী ‘রাজনৈতিক বন্দী’ হিসেবে ফাঁসির অপেক্ষায় আছেন মুর্তাজা। দণ্ড কার্যকর হলে দেশটির ইতিহাসে মুর্তাজাই হবেন সবচেয়ে কম বয়সে ফাঁসি হওয়া ব্যক্তি।

আল জাজিরা জানিয়েছে আটকের পর চার বছরের মধ্যে তার সঙ্গে কোনো আইনজীবীর দেখা করার সুযোগ দেয়া হয়নি। আর অ্যামনেস্টির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আটকের পর কুরেইরিসের ওপর চরম নির্যাতন চালানো হয়। তাকে মিথ্যা প্রলোভন দেখানো হয় যে, নিজের অপরাধ স্বীকার করে নিলে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে। তবে এ বিষয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি সৌদি সরকার।

মুর্তাজা কুরেইরিসের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ২০১১ সালে আরব বসন্তের সময় তার ভাই আলী কুরেইরিস মোটরসাইকেলে করে সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলীয় শহর আওয়ামিয়াতে গিয়ে থানায় পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করেন। সে সময় তার সঙ্গে ছিলেন মুর্তাজাও। পরে মুর্তাজার ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করে সৌদি নিরাপত্তা বাহিনী।

মুর্তাজার বয়স এখনও ১৮ বছরের কম। তার বিরুদ্ধে এখন সৌদি আরবের সন্ত্রাস আদালতে বিচার চলছে। মৃত্যুদণ্ড চেয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে উগ্রবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত থাকা, বিক্ষোভের সময় সহিংসতা, নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর পেট্রোল বোমা হামলায় সহযোগিতাসহ ভাইয়ের জানাজার সময় পদযাত্রা বের করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষ এসব অভিযোগের ব্যাপারে মুর্তাজার কথিত ‘স্বীকারোক্তি’ হাজির করলেও অধিকারকর্মী ও স্বজনরা বলছেন, হুমকি-ধামকি দিয়ে, নির্যাতন করেই এ জবানবন্দি নেয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত চলতি বছরের এপ্রিলে প্রায় ৩৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে সৌদি আরব। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, যাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে, তাদের বেশিরভাগই শিয়া সম্প্রদায়ের। দেশটিতে শিয়া মুসলমানদের ওপর দমন-পীড়নের অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

আরব বসন্তের ঘটনায় যদি সৌদি কর্তৃপক্ষ শেষ পর্যন্ত মুর্তাজা কুরেইরিসকে ফাঁসি দেয়, তাহলে তিনি হবেন ২০১৯ সালে সৌদিতে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত চতুর্থ তরুণ।

এর আগে গত এপ্রিলে দেশটিতে বাকি তিন জনকে (মুর্তাজার সঙ্গে বিক্ষোভে অংশ নেয়া) একই অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। সূত্র: অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, সিএনএন, আল জাজিরা।

এমএমজেড/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।