সুদানে সহিংসতা উসকে দিচ্ছে আরব বিশ্ব
সুদানের সাম্প্রতিক রক্তাক্ত সহিংসতাকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো উসকে দিচ্ছে। ফরেন পলিসি জানিয়েছে এই সহিংসতার বিষয়ে মিসর, সৌদি আরব এবং আরব আমিরাতের ভূমিকায় নাখোশ যুক্তরাষ্ট্র।
অন্যদিকে সুদানের একনায়ক উমর আল বসিরের শূন্যতা পূরণে মরিয়া হয়ে কাজ করছে আরব দেশগুলো। দেশটির স্বশস্ত্র বাহিনী দ্বারা বেসামরিক জনগণের হত্যাকাণ্ড নিয়ে ওয়াশিংটনের ভূমিকা নিয়েও সম্প্রতি হতাশা প্রকাশ করেছেন বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ মার্কিন কর্মকর্তা।
ইতোমধ্যে গত সোমবার সুদানে শতাধিক নিহতের খবর পাওয়া গেছে। সেদিন দেশটির রাজধানী খার্তুমে তাণ্ডব চালায় মিলিটারি ফোর্স। ভিডিওতে দেখা যায় রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী সাধারণ পথচারীরাও সেদিন তাদের হামলার শিকার হয়।
সুদানের চিকিৎসদের কেন্দ্রীয় কমিটি সূত্রে জানা গেছে নীলনদে ৪০টি লাশ ফেলেছে সৈন্যরা। সুদানের আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স এ লাশগুলো নদীতে নিক্ষেপ করেছে। একটি ভিডিওতে দেখা গেছে লাশগুলোর পায়ে পাথর বেঁধে নদীতে ফেলা হয়েছে যাতে সেগুলো ভেসে উঠতে না পারে! বুধবারও সেখানে ইন্টারনেট সংযোগ নিয়মিত ছিল না, তৃতীয় দিন ছিল ওয়েব ব্লাক আউট।
গত ৬ এপ্রিল থেকে খার্তুমে সামরিক বাহিনীর সদর দফতরের সামনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ করে। এ ঘটনার জেরে ১১ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট বশিরের পদত্যাগ ঘোষণা করে দেশটির সামরিক বাহিনী। এতে আনন্দে মেতে ওঠেন বিক্ষোভকারীরা। তবে সে আনন্দ ছিল কিছু মুহূর্তের মাত্র। কারণ বশিরের পদত্যাগের পর ক্ষমতা নেয় দেশটির সামরিক বাহিনী। পরে সামরিক বাহিনীকে বশিরেরই অংশ হিসেবে দাবি করে ফের বিক্ষোভ করতে থাকে আন্দোলনকারীরা।
বশিরের পদত্যাগের পর সুদান এখন পুরোপুরি ভাঙনের পথে। এই মুহূর্তে সৌদি আরব, মিসর এবং আরব আমিরাত কলকাঠি নাড়ছে এটা সুস্পষ্ট। খার্তুমের রাস্তায় যে সামরিক যানগুলো চলাচল করছে সেগুলো আমিরাতে তৈরি যানবাহন! সৌদি আরব এবং আরব আমিরাত এ অবস্থায় ৩ বিলিয়নের মতো অর্থ ব্যয় করছে বলে জানা গেছে। যদিও সুদানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে আমিরাতের প্রাথমিক আমানত ২৫০ মিলিয়ন ডলার গত সপ্তাহ থেকে এ পর্যন্ত এসে পৌঁছায়নি।
র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস এর কমান্ডার মোহাম্মদ হামদান ডাগোলো যিনি হেমেতি নামে পরিচিত এবং আবদেল ফাত্তাহ আল বুরহার মিলিটারি কাউন্সিলের প্রধান সম্প্রতি আরব দেশগুলো সফর করেছেন।
দেশটির সাবেক গোয়েন্দা প্রধান সালাহ গোস মঙ্গলবার ফরেন পলিসিকে জানান, বসিরের অপসারণের পর আমিরাতের ইন্ধন বেড়েছে। যদিও তার মতে সৌদি আরব, মিসরের তুলনায় সুদানে আরব আমিরাতের ভূমিকা বেশি। আমিরাত মূল ভূমিকায় না থেকে সেনাদের লেলিয়ে দিচ্ছে। তারাও মূল খেলোয়াড় না! যদিও তিনিই আবার বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, সুদানের বর্তমান এ অস্থির অবস্থায় তিন আরব দেশের ভূমিকাই সক্রিয়।
গোস আরও বলেন, সুদানের সামরিক বাহিনী কিংবা রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তার কোনো ভূমিকাই নেই। কিন্তু তিনি একটা অশুভ ভবিষ্যৎ বাণী করতে পারেন, তা হলো- 'আমি মনে করি না দারফুরের মতো ঘটনা এখানে ঘটবে কিন্তু অনেক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা থেকেই যায়।'
দারফুরের গণহত্যার পরিকল্পনাকরী হিসেবে একজন হলেন সালাহ গোস। একুশ শতকের নৃশংসতম গণহত্যা হিসেবেই ধরা হয় দারফুর গণহত্যাকে। এই গণহত্যা শুরু হয় ২০০৪ সালে, যখন সুদানের কিছু সংগঠন সুদান সরকারের বিরুদ্ধে অনারব সুদানিদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ এনে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।
সুদানের একনায়ক ওমর আল বশির সরকার এ ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর অবস্থানে গেলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিক মোড় নেয়। ওমর আল বশিরের নেতৃত্বাধীন সুদান সরকারের সহায়তায় গঠিত আধা সামরিক জানজায়িদ বাহিনী অনারব এই বিদ্রোহীদের দমনের নামে অনারব জনগোষ্ঠীর ওপর শুরু করে নৃশংস এক গণহত্যা।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুসারে এখন পর্যন্ত সুদানে গণহত্যার শিকার হয়ে মারা গেছে দুই লক্ষাধিক মানুষ, ধর্ষণের শিকার হয়েছে অগনিত নারী আর বাস্তুহারা হয়েছে বিশ লক্ষাধিক মানুষ।
সুদানের বর্তমান অস্থিরতার সূত্রপাত ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে। সেই থেকে দেশটিতে অস্থিরতাই বিরাজ করছে।
এসএইচএস/পিআর