কুড়িগ্রাম ছিটমহলে ট্রাভেল কাম আইডেনটিটি পাস বিতরণ
কুড়িগ্রামের সাবেক তিনটি ছিটমহলের ৩শ ৫জন অধিবাসীকে ভারতের নাগরিক হিসেবে ‘ট্রাভেল কাম আইডেনটিটি পাস’ বিতরণ কার্যক্রম সোমবার শুরু হয়েছে। এদের মধ্যে দাশিয়ারছড়ায় ২শ ৮১জন এবং ভুরুঙ্গমারীর ছোট ও বড় গাড়লঝড়া ছিটের ২৪জনকে এ পাস দেয়া হবে।
সোমবার দাশিয়ারছড়ার অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের পাশে তিন সদস্যের ভারতীয় দল এবং ভুরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে বসে ‘ট্রাভেল কাম আইডেনটিটি পাস’ প্রদান করেন। এ সময় পৃথক দুই স্থানে ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এজেএম এরশাদ আহসান হাবিবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তাদের সঙ্গে ছিলেন ভারতের ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল।
সোমবার সকাল ১০ টায় শুরু হয়ে চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। একইভাবে মঙ্গলবার পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে। এ পাস প্রদানের মধ্য দিয়ে ভারত যেতে ইচ্ছুকদের প্রতীক্ষার প্রহর শেষ হতে চলেছে। আগামী ১ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে কুড়িগ্রামের ৩শ ৫জন বাঘভান্ডার ও সাহেবগঞ্জ সীমান্ত চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে প্রবেশ করবেন।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবস্থিত ১শ ১১টি বিলুপ্ত ছিটমহলের মধ্যে ১৯টি ছিটমহল থেকে ৯শ ৮৭জন ভারতীয় নাগরিকত্ব বহাল রাখার পক্ষে নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে পঞ্চগড় জেলার ১০টি ছিটমহল, লালমনিরহাট জেলার ৭টি ও কুড়িগ্রাম জেলার অভ্যন্তরের ৩টি ছিটমহল থেকে এসকল মানুষ ভারতে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
সোম ও মঙ্গলবার ২দিন ভারতীয় হাইকমিশনের প্রতিনিধি দল তাদের হাতে তুলে দেন ‘ট্রাভেল কাম আইডেনটিটি পাস’। পাস প্রদানের সময় তাদের প্রত্যেককে মিষ্টি, রজনীগন্ধার ফুল ও ভারত বিচিত্রা নামের একটি বই দেয়া হয়।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল মারুফ জাগো নিউজকে জানান, জেলার অভ্যন্তরে অবস্থিত বিলুপ্ত ১২টি ছিটমহলের মধ্যে ফুলবাড়ীর ‘দাশিয়ারছড়া’ ও ভুরুঙ্গামারীর ছোট গাড়লঝাড়া ও বড় গাড়লঝাড়া থেকে ৩শ৫ জন ভারতে যাবেন। এজন্য রোববার দুপুরে ভারতীয় হাইকমিশনের দূতাবাসের তিমীর ঘোষের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল কুড়িগ্রামে পৌঁছেন।
দলের অন্য সদস্যরা হলেন, শৌলেন্দর কিশোর, তাপস ভট্টাচার্য, দীপক দেবনাথ ও অসীম বড়ুয়া। সোমবার ৩ সদস্যের একটি দল দাশিয়ারছড়ার অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের পাশে এবং অপর ২ সদস্যের দল ভুরুঙ্গামারী ইউএনও কার্যালয়ে বসে ভারত যাওয়ার ‘ট্রাভেল কাম আইডেনটিটি পাস’ প্রদান শুরু করেন। মঙ্গলবার পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবস্থিত ১শ১১টি বিলুপ্ত ছিটমহলের মধ্যে ১৯টি ছিটমহল থেকে ৯শ৮৭ জন ভারতীয় নাগরিকত্ব বহাল রাখার পক্ষে নিবন্ধন করেছেন।
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন মাহমুদ জাগো নিউজকে জানান, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার ১শ৬২টি ছিটমহলের মধ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ১শ১১টি ছিটমহলে গত ৬-১৬ আগস্ট হেড কাউন্টিং এরপর জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪১ হাজার ৪শ৪৯ জন। এর মধ্যে ভারত যেতে নিবন্ধন করেছে ৯শ৮৭জন।
অপরদিকে ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশি ৫১টি ছিটমহলের প্রায় ১৪ হাজার মানুষের কেউ বাংলাদেশে আসতে আগ্রহ দেখায়নি। কুড়িগ্রাম জেলার দাশিয়ারছড়া থেকে ভারতে যাবে ২শ৮১জন এবং ভুরুঙ্গমারীর গাড়লঝাড়া থেকে ২৪জন। এছাড়া জেলার অভ্যন্তরের বিলুপ্ত ১২টি ছিটমহলের ৭হাজার ৮শ ২৭জন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন।
তিনি আরো বলেন, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে কুড়িগ্রামের ৩০৫ জন বাঘভান্ডার ও সাহেবগঞ্জ সীমান্ত চেকপোস্ট দিয়ে, লালমনিরহাটের ২৪৩ জন বুড়িমাড়ী ও চেংরাবান্দা এবং পঞ্চগড়ে অবস্থানরত ভারতীয় ৪৩৯ জন নাগরিক চিলাহাটী ও হলদিবাড়ী সীমান্ত দিয়ে ভারতে যেতে পারবেন।
নাজমুল হোসেন/এসএস/পিআর