মোদির ভূমিধস জয়ের নেপথ্যে ‘মোদিকেয়ার’
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:১১ পিএম, ২৯ মে ২০১৯
ভারতের সদ্য-সমাপ্ত নির্বাচনে বিজেপির ভূমিধস জয়ের পেছনে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কট্টর জাতীয়তাবাদী অবস্থানই মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে বলা হলেও এর নেপথ্যে রয়েছে আরো একটি চাবিকাঠি। সেটি হচ্ছে মোদির নেয়া জাতীয় স্বাস্থ্য প্রকল্প ‘মোদিকেয়ার।’
দেশটির অন্যান্য কিছু বড় ধরনের সমস্যা, সংস্কারের ব্যাপক প্রয়োজনীয়তা সত্ত্বেও গত বছর ব্যাপক ব্যয়বহুল মোদিকেয়ার প্রকল্প চালু করা হয়। সরকারি অর্থায়নে জনগণের চিকিৎসার জন্য গঠিত বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এই প্রকল্প। মোদিকেয়ারই লোকসভা নির্বাচনে মোদির পক্ষে বড় ধরনের নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে; বিরোধীদের সঙ্গে তৈরি করেছে বড় ব্যবধান।
ভারতের সবচেয়ে খারাপ স্বাস্থ্যসেবার বেশ কয়েকটি শহর রয়েছে। এর মধ্যে উত্তরপ্রদেশের সিতাপুর অন্যতম। সিতাপুরের একটি হাসপাতালে প্রধান মেডিক্যাল সুপারিনটেনডেন্ট অনিল আগারওয়াল বলেন, ‘এই প্রকল্পটি গরীবদের মাঝে এক ধরনের বিশ্বাস তৈরি করেছিল যে, যদি তারা অসুস্থ্য হয়ে পড়েন, তাহলে বিনাপয়সায় চিকিৎসা পাবেন।’
আরও পড়ুন : যেন আলোকচিত্রীর ইচ্ছাপূরণ করল ঈগল
এমনকি গত সপ্তাহের নির্বাচনী ফলাফলে দেখা গেছে, দারিদ্রপীড়িত অঞ্চলগুলোতে মোদির নেতৃত্বাধীন কট্টর জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ভূমিধস জয় পেয়েছে; যেখানে গরীব মানুষ বেশি উপকারভোগী হবেন।
ভারতের অলাভজনক সংস্থা পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট কে. শ্রীনাথ রেড্ডি বলেন, ‘গরীব মানুষের কল্যাণের জন্যই এ প্রকল্প চালু করা হয়েছে, এমন ধারণা থেকে পিছিয়ে পড়া গরীব মানুষ মোদিকেয়ারকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং সম্ভবত এটিই মোদির নির্বাচনী জয়ে অবদান রেখেছে।’
ভারতের মানুষের গড় বার্ষিক আয় মাত্র ১৬৭০ মার্কিন ডলার। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেয়া এই প্রকল্প হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ করবে ৪০ শতাংশ গরীব ভারতীয় নাগরিকের। প্রায় ৫০০ মিলিয়ন মানুষ চিকিৎসা সুবিধা পাবে।
আরও পড়ুন : ১৮০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে উল্টে গেলেন মমতা
এমনকি গত সেপ্টেম্বরে মোদিকেয়ার কিংবা চালুকৃত জাতীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রকল্পের (এনএইচপিএস) আগেও দেশটির সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা প্রায় বিনামূল্যেই পাওয়া যেতো। কিন্তু বেসরকারি ক্লিনিক ছিল অনেকের ধরাছোঁয়ার বাইরে; যেখানে একজন রোগী চিকিৎসকের ফি হিসেবে ১ হাজার রূপি দেন। যদিও এই রোগীদের অধিকাংশের জীবন নির্বাহের দৈনিক ব্যয় ২ ডলারের নিচে। কিন্তু এখন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর লোকজন ক্লিনিকে যেতে পারেন, এই প্রকল্পের আওতায় চিকিৎসা সেবা পান।
নতুন বিশ্বাস
তাঁত শ্রমিক সাবির আলী নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের জন্য মোদিকেয়ার কার্ড পেয়েছেন। সম্প্রতি কপাল থেকে একটি টিউমার অপারেশন করেছেন তিনি। দেশটির অন্তত ১৫ হাজার হাসপাতালে তিনি এখন এই কার্ড ব্যবহার করে চিকিৎসা নিতে পারেন।
ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা সীতাপুরের একটি হাসপাতালে মাথায় ব্যান্ডেজরত সাবির আলী ফরাসী বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেন, আমি এই কার্ড হাতে পাবো; এটা ছিল অবিশ্বাস্য।
আরও পড়ুন : মোদির সরকারে থাকতে চান না অরুণ জেটলি
‘আমি এই কার্ড ব্যবহার করেছি এবং আমার চিকিৎসার জন্য এক রূপিও খরচ করিনি।’ কিছুদিন আগেও ভারতের এক তৃতীয়াংশ মানুষের কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবীমা ছিল না; চিকিৎসার ব্যয় নিজের পকেট থেকেই ব্যয় অথবা চিকিৎসা নেয়া থেকে বিরত থাকতে হতো।
দারিদ্র সীমার নিচে বসবাসকারী প্রায় ৬০ মিলিয়ন ভারতীয় প্রত্যেক বছর চিকিৎসা ব্যয় চালাতে গিয়ে হিমশিম খান। চিকিৎসা বিষয়ক ম্যাগাজিন দ্য ল্যান্সেট মেডিক্যাল জার্নালের গত বছরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে নিম্নমানের স্বাস্থ্যসেবার কারণে বছরে প্রায় ১৬ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
তবে ১২০ কোটি ডলারের মোদিকেয়ার প্রকল্প চালু করার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ লাখ মানুষ চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন। এসব মানুষের চিকিৎসার ব্যয় কেন্দ্রীয় সরকার ৬০ এবং রাজ্য সরকার ৪০ শতাংশ বহন করে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক পারসা ভেঙ্কেটেশ্বর রাও বলেন, মোদিকেয়ারের মতো অন্যান্য প্রকল্পগুলো নির্বাচনী ফলাফলে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করেছে। মোটকথা মানুষের কাছে একটি বার্তা পৌঁছে গেছে; সেটি হচ্ছে, গরীব মানুষকে সহায়তা করার জন্য মোদির ইচ্ছা আছে।
এসআইএস/এমএস