মুন্সিগঞ্জে পুলিশের ইয়াবা নাটক


প্রকাশিত: ০৪:৫৬ পিএম, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫

মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় পুলিশের ইয়াবা নাটকের শিকার হয়েছেন আখি আক্তার (২৮) নামে এক নারী সাংবাদিক। পৈত্রিক ভিটা-বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার অভিনব কৌশল অবলম্বনে প্রতিপক্ষ প্রতিবেশির চক্রান্তে পুলিশের সহায়তায় ওই সাংবাদিককে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, অাখি আক্তারের পৈত্রিক ভিটা-বাড়ি নিয়ে তার প্রতিবেশি হাজেরা বেগমের সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। আর এ নিয়ে মুন্সিগঞ্জ আদালতে উভয়পক্ষের মধ্যে একাধিক মামলাও হয়েছে। এক পর্যায়ে শুক্রবার সালিশ বৈঠক চলাকালে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর আদালতে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়।

পুলিশের ওই রিমান্ড আবেদনের সঙ্গে মামলার সিডি (কেস ডায়েরি) না থাকায় তা শুনানি করেননি আদালত। এছাড়া যথাসময়ে কেস ডায়েরি না করে রিমান্ড আবেদেন করায় মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা দিদারুল আলম খানকে শোকজ করেন আদালত।

এছাড়া আদালতের বিচার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হারুন-উর-রশিদ ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে সোমবার আদালতে হাজির হয়ে যথাসময়ে সিডি জমা না দিয়ে রিমান্ড আবেদনের কারণ ব্যাখ্যার আদেশ দিয়েছেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাড. হুমায়ুন কবির শাহিন মিঝি জানান, জমি সংক্রান্ত বিরোধের কারণে ইয়াবা নাটক সাজিয়ে সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই মাদক মামলাটির বাদী হাজেরা বেগমের স্বামীর সঙ্গে আখিদের পরিবারের একাধিক মামলা বিচারাধীন রয়েছে। সেই প্রতি হিংসায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে পুলিশের সঙ্গে আঁতাঁত করে এটি করা হয়েছে বলে আখির মা জানিয়েছেন।

আখির মা নাসিমা বেগম মুন্সিগঞ্জের এডিএম কোর্টে ১৪০/১৫ নম্বর মামলা করেছেন। আর এই মামলার ৩নং আসামি হাজেরা বেগমের স্বামী শফিকুল। এছাড়া হাজেরা বেগমের স্বামী শফিকুলের দায়ের করা গজারিয়া সহকারী জজ আদালতের দেওয়ানি ১১৫/১৩ নম্বর মামলার ৭০ নম্বর বিবাদী আখির বাবা এনামূল হক।

তিনি আরো জানান, এছাড়া ৩(৯)১৫ নম্বর মাদক মামলার এজাহারের সঙ্গেও বাস্তবতার বিস্তর ফারাক রয়েছে। পুলিশের দাবি ওই নারী সাংবাদিকের ঘরের খাটের নিচ থেকে পলিথিনে মোড়ানো ২৫১ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু যখন তার ঘরে তল্লাশি চালানো হয় তখন আখি ছিলেন একটি সালিশ বৈঠকে। এই ইয়াবা নাটক নিয়ে এলাকায় মুখরোচক আলোচনার ঝড় উঠেছে।

এদিকে, আখিকে গ্রেফতারের পর মহলটি আখির মা নাসিমা বেগমকে বেদম মারধর করে তাড়িয়ে দিয়েছে বাড়ি থেকে। তিনি এখন মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসাতালে চিকিৎসাধীন। আখির ভাইসহ পরিবারের সকলেই এখন বাড়িছাড়া।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, আখির বাবার বাড়ি থেকে এই ইয়াবা উদ্ধার এবং তার ভাইকে আটক করা হয়। পরবর্তীতে প্রায় ৫০০ গজ দূরের সালিশ বৈঠক থেকে আখিকে আটক করে ভাইকে ছেড়ে দেয়া হয়।

সালিশ বৈঠকে উপস্থিত গজারিয়া উপজেলা প্রেসক্লাবের একাংশের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম নয়ন জানান, তুচ্ছ বিষয় নিয়ে নারী সাংবাদিকের গায়ে হাত তোলার ঘটনায় প্রতিবেশি মিজানের বাড়িতে সালিশ বৈঠক চলছিল। বৈঠকের এক পর্যায়ে পুলিশ এসে তার ঘরে ইয়াবা উদ্ধার করেছে দাবি করে। এরপর আখিকে আটক করে পুলিশ।

এর আগে সকাল ৮টার দিকে গ্যাস লাইনের সংযোগে আখিদের পরিবার থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় নিয়ে প্রতিবেশি ওসমানের সঙ্গে কথা কাটাকাটির হয়। এক পর্যায়ে আখিকে চড় মারে প্রতিবেশি ওসমান। বিষয়টি আখি পুলিশ এবং সাংবাদিক নেতৃবৃন্দকে অবগত করে। পরবর্তীতে পুলিশ না জানিয়ে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিষয়টি মীমাংসায় সালিশি বৈঠক হয়।

ভুক্তভোগী আখি আক্তার জানান, ভূমিদস্যু এবং হত্যাসহ কয়েক মামলার আসামি মো. ওসমান ও মো. মিজানের সঙ্গে জমি ভরাটকে কেন্দ্র করে বিরোধ আসছিল। আর এসব কারণেই তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এ সময় তিনি পুরো ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন।

গজারিয়া থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দিদারুল আলম খান জানান, মামলার ডায়েরি ডাকে পাঠানো হয়েছে। হয়তো পৌঁছতে বিলম্ব হয়েছে। তবে আখিকে কোথা থেকে কখন গ্রেফতার করা হয়েছে তা আমি এখনও জানি না। আমি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।

তিনি আরো বলেন, যারা গ্রেফতার করেছেন তারাই বলতে পারবেন। আর এই মামলার বাদী পুলিশ নয়, প্রতিবেশি এক নারী।

পুলিশের এমন কর্মকাণ্ডে ওই এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সঠিক তদন্ত না করে এমন ঘটনা ঘটানো হলে পুলিশের উপর থেকে সাধারণ মানুষের আস্থা হারিয়ে যাবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

শেখ সাইদুর রহমান টুটুল/এআরএ/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।