শিক্ষকদের দাবির প্রতি দৃষ্টি দিন
প্রস্তাবিত অষ্টম বেতন কমিশনে গ্রেড পুনর্নির্ধারণের দাবিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য এবার আন্দোলনে যাচ্ছেন শিক্ষকরা। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ইতিমধ্যে কর্মবিরতি পালনসহ নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। একই পথে হাঁটছে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড- শিক্ষকতা একটি মহান পেশা এই জাতীয় নীতিকথা আমরা শুনে আসছি বহুকাল। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, শিক্ষকতা একটি মহান পেশা হলেও বেতন কাঠামো এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধার দিক থেকে তারা নানা বৈষম্যের শিকার অনেকদিন থেকেই। এখন সময় এসেছে বিষয়গুলোর দিকে নজর দেওয়ার। বিশেষ করে আন্দোলন করে, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে যেন কোনো দাবি আদায় করতে না হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
প্রস্তাবিত অষ্টম বেতন কমিশনে গ্রেড পুনর্নির্ধারণের দাবিতে আগামী মঙ্গলবার দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কটিতে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালনের কর্মসূচি দিয়েছে শিক্ষকরা। সেদিন কোনো ক্লাস-পরীক্ষা নেবেন না তারা। রবিবারও পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্ত রয়েছে। এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবেশও করবেন শিক্ষকরা। দাবি পূরণ না হলে সামনে লাগাতার ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ধর্মঘটের দিকে যাবেন তারা।
এদিকে আগামী জুলাই মাস থেকে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেল কার্যকরের দাবিতে ১ অক্টোবর থেকে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি। আর ১০ দফা দাবি আদায়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।
শিক্ষকরা বলছেন- `এই আন্দোলন নিছক বেতন-ভাতা বৃদ্ধি কিংবা সরকারবিরোধী কোনো আন্দোলন নয়। এটি শিক্ষকদের মান ও মর্যাদা রক্ষার আন্দোলন।
শিক্ষকদের দাবি, `১৯৮৬ সালের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনুযায়ী সরকারি আমলাদের বেতন বাড়লে মর্যাদাও বাড়ে। আর শিক্ষকদের বেতনও বাড়ে না, মর্যাদাও বাড়ে না। এদিকে নতুন পে স্কেলে বেসরকারি শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং জুলাই থেকে তা কার্যকর করা, শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র উচ্চতর বেতন কাঠামো নির্ধারণ, চাকরির বসয়সীমা ৬৫-তে উন্নীত করা, অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা তিন মাসের মধ্যে প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, শিক্ষা জাতীয়করণ, বেসরকারি শিক্ষকদের সব বৈষম্য দূর করার দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষকরা।
একটি উন্নত সমৃদ্ধ জাতি গঠনে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। আর সেটি নিশ্চিত করতে হলে মানসম্মত শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। তার জন্য প্রয়োজন মেধাবীদের শিক্ষকতার পেশায় নিয়ে আসা। কিন্তু অন্যান্য পেশার চেয়ে শিক্ষকতা পেশায় যদি সুযোগ সুবিধা কম থাকে তাহলে মেধাবীরা কেন এই পেশায় আসবেন? শিক্ষকতা মহান পেশা-এই ধরনের নীতিকথায় তো আর পেট চলে না। এছাড়া বিদ্যমান বৈষম্য দূর করার দাবিও তো ন্যায্য। শুধু বিশেষ গোষ্ঠী বা শ্রেণিকে সন্তোষ্ট রাখার জন্য পে-স্কেল ঘোষণা করা হলে বাকিরা আরও বৈষম্যের শিকার হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই সমন্বয় করতে হবে যাতে শিক্ষকদের আর্থ-সামাজিক মর্যাদা কোনোভাবেই ক্ষুন্ন না হয়।
সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে নানা ধরনের কর্মসূচি নিয়ে এগোচ্ছে। নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। ৩০ কোটিরই বেশি বই জানুয়ারির ১ তারিখে বিনামূল্যে পৌঁছে যাচ্ছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের হাতে। বলা যায় এক মহাকর্মযজ্ঞ চলছে এক্ষেত্রে। কিন্তু এর সকলই ব্যর্থতার দিকে যাবে যদি শিক্ষকরা তাদের ন্যায্য পাওনা না পান। এক্ষেত্রে বাজেট স্বল্পতার কথা বলা হয় সরকারের পক্ষ থেকে। সেই ঘাটতি কিভাবে কাটিয়ে উঠা যায় সেটি নিয়েও শিক্ষকদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করতে হবে। আন্দোলন কর্মসূচির কারণে শিক্ষার্থীরা যাতে কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেটি সকল পক্ষকেই নিশ্চিত করতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে হবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানকে।
এইচআর/এমএস