যুদ্ধের আশঙ্কা, মক্কায় জরুরি বৈঠক ডেকেছে সৌদি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:২৫ এএম, ২০ মে ২০১৯
আরব উপসাগরে দুটো বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের যুদ্ধ লেগে যাওয়ার আশঙ্কায় পুরো মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। চলমান এ তীব্র উত্তেজনা নিরসনে আগামী ৩০ মে মক্কায় এক জরুরি বৈঠক ডেকেছে সৌদি আরব।

বৈঠকে অংশ নেয়ার জন্য আরব লীগ এবং উপসাগরীয় দেশগুলোর জোট জিসিসি সদস্যদের আমন্ত্রণ পাঠিয়েছেন সৌদি বাদশাহ সালমান।

সৌদি বার্তা সংস্থা এসপিএ’র বরাত দিয়ে বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

বার্তা সংস্থা এসপিএ সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে জানায়, সংযুক্ত আরব আমিরাতে সমুদ্র সীমায় সৌদি বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা এবং সৌদি আরবের মধ্যে দুটি তেল ক্ষেত্রে হুতি সন্ত্রাসীদের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে এই জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে।

এসব হামলা এই অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তা এবং বিশ্বে তেল সরবরাহের ওপর মারাত্মক হুমকি তৈরি করেছে।

গত সপ্তাহের শেষে উপসাগরে দুটি সৌদি তেলের ট্যাংকারে হামলা চালানো হয়। এছাড়া, সৌদি দুটি তেলের স্থাপনায় ড্রোন হামলার পর অপরিশোধিত তেলের গুরুত্বপূর্ণ একটি পাইপলাইন বন্ধ করে দিতে হয়েছে।

এসপিএ আরও জানিয়েছে শনিবার রাতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে সৌদি যুবরাজ এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহামেদ বিন সালমানের সঙ্গে কথা বলেছেন।

এদিকে সৌদি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আদিল আল জুবেইর রোববার রিয়াদে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘সৌদি আরব এ অঞ্চলে কোনো যুদ্ধ চায় না। যুদ্ধ যাতে না বাঁধে তার সব চেষ্টাই সৌদি আরব করবে। তবে অন্য পক্ষ যুদ্ধ শুরু করলে, সৌদি আরব তার নিরাপত্তা এবং স্বার্থ রক্ষায় কড়া জবাব দেবে।’

সৌদি এই মন্ত্রীর দাবি, ইরান সমর্থিত মিলিশিয়ারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে সৌদি স্বার্থে আঘাতের চেষ্টা করছে।

হুমকির সুরে তিনি বলেন, ‘সৌদি আরব আশা করে বিপদ এড়াতে ইরানের সরকার তাদের শুভবুদ্ধি প্রয়োগ করবে এবং তাদের অনুচরদের দায়িত্বহীন হঠকারী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখবে। না হলে এই অঞ্চলের যে পরিণতি হবে তার জন্য পরে অনুশোচনা করতে হবে।’

ইরানও একাধিকবার হুমকি দিয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের ওপর হামলা চালালে তারা তেল পরিবহনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেবে।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভাদ যারিফ শনিবার বলেছেন, ইরান কোনো যুদ্ধ চায় না। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আশপাশের কিছু মানুষ তাকে যুদ্ধ শুরুর উসকানি দিচ্ছে।

তিনি এ-ও বলেন যে, ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র জয়ী হবে না এটা আমেরিকানরা ভালো করেই জানে।

অন্যদিকে, সাবেক মার্কিন জেনারেল ডেভিড পেট্রেয়াসও বলছেন, কোনো সর্বাত্মক যুদ্ধের সম্ভাবনা কম। তিনি বলেছেন, ইরান দখল করার ক্ষেত্রে যে বিশাল চ্যালেঞ্জ রয়েছে মার্কিন সামরিক দফতর পেন্টাগন সে কথা যুক্তরাষ্ট্রের নেতাদের নিশ্চয়ই জানিয়ে দেবে।

শুধু সৌদি আরব নয়, উপসাগরীয় অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলোও সম্ভাব্য ইরান-মার্কিন যুদ্ধ নিয়ে গভীর শঙ্কায় পড়েছে। বাহরাইন তার নাগরিকদের ইরাক এবং ইরানে যাওয়ার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে এবং বলেছে- যত দ্রুত সম্ভব ওই দুটি দেশ ত্যাগ করতে।

বাহরাইন উপসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশ। এছাড়া বাহরাইন প্রায়ই অভিযোগ করে যে, ইরান তার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে।

আঞ্চলিক উত্তেজনা যে বেড়েছে তার আরও কিছু লক্ষণ দেখা গেছে। বৃহৎ মার্কিন তেল কোম্পানি এক্সন-মোবিল দক্ষিণ ইরাকের একটি তেলক্ষেত্র থেকে তাদের সব বিদেশি কর্মচারীকে সরিয়ে নিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের মধ্যে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক তেলের বাজারে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে তা আলোচনার জন্য জ্বালানি তেল উৎপাদকদের সমিতি ওপেক রোববার বৈঠক করেছে।

এমবিআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।