মোদির অদ্ভূত দাবিতে হাসির বন্যা ভারতে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:৩৯ পিএম, ১৩ মে ২০১৯

ভারতীয় একটি টেলিভিশনের সাক্ষাৎকারে বিতর্কিত মন্তব্য করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাসির খোরাকে পরিণত হয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শনিবার তার ওই সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে নিয়ে ট্রলের বন্যা বয়ে যায়।

মেঘের কারণে ভারতীয় বিমানবাহিনীর বিমান পাকিস্তানের রাডারকে ফাঁকি দিয়ে পাকিস্তানের বালাকোটে অভিযান পরিচালনা করতে পারবে; এমন পরামর্শ তিনিই দেশটির বিমানবাহিনীকে দিয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেন মোদি। তার এই মন্তব্যের পর ব্যাপক হাসি-ঠাট্টা শুরু হয় ভারতে।

‘মেঘ’ এবং ‘রাডার’ নিয়ে মোদি দাবি করেছেন, ২৬ ফেব্রুয়ারি বালাকোট অভিযানে যখন বিশেষজ্ঞরা খারাপ আবহাওয়া নিয়ে চিন্তিত ছিলেন, তখন তিনিই বলেছিলেন, মেঘের আড়ালে ভারতীয় বিমানবাহিনীর বিমানকে ধরতে পারবে না পাক রাডার। মোদির এই মন্তব্য নিয়ে রোববার সোশ্যাল মিডিয়ায় কার্যত ট্রোলড হন। মোদির ওই মন্তব্য ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আক্রমণ, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ চলে দিনভর। রাত পোহাতেই সাক্ষাৎকারের আরও একটি অংশ ভাইরাল হয়।

আরও পড়ুন : ‘আমিই আসল মোদি, মোদিই দেখতে আমার মতো’

দেশটির রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নতুন এই ভিডিও ফুটেজে মেঘলা আবহাওয়া এবং রাডার মন্তব্যকেও ছাপিয়ে গিয়েছেন মোদি। ভারতীয় দৈনিক আনন্দবাজার বলছে, সাক্ষাৎকারে মোদি দাবি যে করেছেন, তা সময় এবং ইতিহাসের বাস্তবতার সঙ্গে কোনোভাবেই মেলানো সম্ভব নয়। ১৯৮৮ সালে ডিজিটাল ক্যামেরা এবং ই-মেইল ব্যবহার করেছিলেন বলে দাবি করে মোদি কার্যত হাসির খোরাক হয়ে উঠেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।

মোদি আরও দাবি করেছেন, তিনিই সম্ভবত ভারতের প্রথম ব্যক্তি, যিনি ডিজিটাল ক্যামেরা ব্যবহার করেছেন। ঠিক কী বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি? তার কাছে প্রশ্ন ছিল, প্রযুক্তি এবং গ্যাজেটে তিনি এত স্বাচ্ছন্দ কীভাবে। বরাবরই নতুন নতুন প্রযুক্তির প্রতি তার আকর্ষণ বেশি, গ্যাজেট নিয়ে আগ্রহী। কিন্তু তার পরই একটি উদাহরণ দিতে গিয়েই বিপত্তি বাধান।

তিনি বলেন, ‘সম্ভবত আমিই দেশে প্রথম ডিজিটাল ক্যামেরা ব্যবহার করেছিলাম। ১৯৮৭-৮৮ সাল হবে। তখন খুব কম মানুষের ই-মেইল ছিল। আমার এখানে বীরমগামে আদবাণীর সভা ছিল। আমি ডিজিটাল ক্যামেরায় ছবি তুলি। তখন ডিজিটাল ক্যামেরা অনেক বড় হতো। আমার কাছেও তখন ছিল। আমি ছবি তুলে দিল্লিতে পাঠিয়ে দিই। পরের দিন রঙিন ফটো ছাপা হয়। আদবাণীজি আশ্চর্য হয়েছিলেন যে, একদিনের মধ্যে দিল্লিতে কীভাবে রঙিন ছবি ছাপা হল?

আরও পড়ুন : মোদি ও মন্ত্রীদের সফর করেই খরচ ৩৯৩ কোটি টাকা

সাক্ষাৎকারের এই অংশ নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন নেটিজেনরা। কেন প্রশ্ন? অকাট্য যুক্তির ক্ষেত্রে যদিও ‘ডিজিটাল ক্যামেরা’র অংশ মেনে নেয়া যায়, মোদির ই-মেইল ব্যবহারের দাবিকে কোনোভাবেই মেনে নেয়া সম্ভব নয়। কারণ জাপানি ক্যামেরা প্রস্তুতকারী সংস্থা নিকন প্রথম বাণিজ্যিকভাবে বিক্রির জন্য ডিজিটাল ক্যামেরা বাজারে আনে ১৯৮৬ সালে।

আনন্দবাজার বলছে, যুক্তির ক্ষেত্রে যদিও ধরে নেয়া হয়, কিন্তু বাস্তবে মাত্র এক-দু’বছরের মধ্যেই ডিজিটাল ক্যামেরা ভারতে এসেছিল এবং তা মোদির হাতে ছিল, এটা মেনে নেয়া কার্যত অসম্ভব। আর ই-মেইল প্রথম চালু হয় ১৯৯৫ সালে। আশির দশকে এই দেশে ই-মেইল দূরে থাক, ইন্টারনেটের ধারণাও খুব কম মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কারণ বিএসএনএল প্রথম দেশে ইন্টারনেট পরিষেবা শুরু করে ১৯৯৫ সালে। ফলে মোদির ‘ই-মেইল’ সংক্রান্ত দাবি পুরোপুরি অসম্ভব।

সূত্র : এনডিটিভি।

এসআইএস/পিআর

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।