‘বখাটে প্রেমিক’ নাকি ‘দুর্বৃত্ত’


প্রকাশিত: ০৪:৪৯ এএম, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫

হবিগঞ্জে এক স্কুলছাত্রীকে দিনেদুপুরে, প্রকাশ্যে রাস্তায় লাঞ্ছিত করার ঘটনায় আবারও প্রমাণিত হল এই সমাজে নারীরা এখনো কতোটা অসহায়। আর দুর্বৃত্তরা  কতোটা বেপরোয়া। শুধু নির্যাতন নয়, এর ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় সারাদেশে। অভিযুক্ত রুহুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে তার যথাযোগ্য শাস্তিই পারে এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে।

জাগো নিউজের এ সংক্রান্ত সংবাদ থেকে জানা যায়, জেলা শহরের রাজনগর এলাকার এতিমখানা সড়কের জনৈক মোবারক হোসেনের ভাগ্নে বখাটে রুহুল আমিন রাহুল (১৫) কিছুদিন আগে ওই বিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী হবিগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীকে (১৪) প্রেমের প্রস্তাব দেয়। হবিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের (জুনিয়র স্কুল) নবম শ্রেণিতে পড়া এ বখাটে ছাত্রের প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় তার উপর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে রুহুল। সে প্রতিদিনই বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার পথে ওই ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করতো। এ খবর জানতে পেরে কিছুদিন আগে ছাত্রীর এক নিকটাত্মীয় যুবক রাহুলকে শাসিয়ে দেয়। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে সে। গত ২৬ আগস্ট স্কুল ছুটির পর বাসায় যাওয়ার পথে ওই ছাত্রীকে বিদ্যালয়ের সামনে রাস্তায় চড়-থাপ্পড় মারতে থাকে বখাটে রাহুল। এ ঘটনার ৩১ সেকেন্ডের একটি  ভিডিও চিত্র পহেলা সেপ্টেম্বর  ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপরই দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়।

দেশে নারী নির্যাতনের ঘটনা নতুন নয়। বিশেষ করে স্কুল-কলেজগামী ছাত্রীদের প্রায়শই নানা ভাবে উত্ত্যক্তের ঘটনা ঘটে। তবে হবিগঞ্জের এই ছাত্রী লাঞ্ছনা সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে ন্যক্কারজনক ঘটনা। প্রকাশ্য দিবালোকে স্কুল চত্বরে একজন ছাত্রীর ওপর এ ধরনের বর্বর নির্যাতনের কথা চিন্তায় করা যায় না। প্রেমে প্রত্যাখাত হয়ে এসিড নিক্ষেপসহ নানা ধরনের নির্যাতনের কথা ইতিপূর্বে গণমাধ্যমে এসেছে। কিন্তু দুর্বৃত্তরা এতটাই আস্কারা পেয়েছে যে তারা এখন আর অপরাধের জন্য রাতের আঁধার বা নিরাপদ অন্যকোনো সময় বেছে নিচ্ছে না। প্রকাশ্য দিবালোকে বেরিয়ে এসে দোর্দণ্ড প্রতাপের সঙ্গে তারা অপরাধ করছে। আর তা ছড়িয়ে দিচ্ছে ফেসবুকে।

প্রতিকারহীনভাবে দিনের পর দিন যখন এ ধরনের অপরাধ চলতে তখন যে সেটি ঘরের আঙ্গিনা পর্যন্ত গিয়ে ঠেকে তার প্রমাণ যেন হবিগঞ্জের স্বুল চত্বরে ছাত্রী নির্যাতনের এই দুঃখজনক ঘটনাটি।এক সময় ইভটিজিং ভয়াবহ আকারে বেড়ে গিয়েছিল। সামাজিক প্রতিরোধ এবং আইন প্রয়োগের মাধ্যমে এর কিছুটা বন্ধ করা গেছে । পুরোপুরি যে হয়নি সেটি তো এই ঘটনাই আবার প্রমাণ করলো। একটা ছেলে একটা মেয়ের গায়ে হাত তুলছে কিন্তু কেউ কিছু বলছে না, কোনো প্রতিবাদ, প্রতিরোধ আসছে না তাৎক্ষণিকভাবে- আমাদের সমাজ কি তাহলে অধঃপতনের অতল গহ্বরে হারিয়ে গেল। নাকি নিজের ঘাড়ে না আসা পর্যন্ত আমাদের ঘুম ভাঙবে না। নির্যাতিত মেয়েটিও তো এই সমাজেরই একজন। তাহলে কেন মেনে নেওয়া হচ্ছে তার ওপর এই নির্যাতন। স্কুল পড়ুয়া ছাত্রদের ওপর প্রেমের ভূত চাপে কী করে। এরা কি ছাত্র। বিদ্যালয়ে যায় কি এসব অপকর্ম করার জন্যই।

গলদটা কোথায়। পুঁথিগত বিদ্যার মধ্যেই কি আটকে যাচ্ছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা? নীতি নৈতিকতা, মানবিকতার কি কোনো স্থান নেই শিক্ষায়? পারিবারিক অনুশাসনের ঐতিহ্যই বা গেল কোথায়। নির্যাতক ছেলেটিও তো এ সমাজের। পারিবারিকভাবে সেকি কোনো শিক্ষা পায়নি! তার বোন যদি এ ধরনের নির্যাতনের শিকার হতো তখন সে কী করতো? এই বোধ জাগানোতো পরিবারেরই দায়িত্ব। যার যার জায়গা থেকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে এই অপরাধপ্রবণ সমাজ ব্যবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া কি খুব কঠিন কাজ? আর সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে আইনের শাসন এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা। অপরাধীর শাস্তি না হলে সে সমাজে কোনোদিনই অপরাধ বন্ধ করা যাবে না- এটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট। হবিগঞ্জের ঘটনায় মামলা হয়েছে।  গ্রেপ্তার করা হয়েছে আসামীকেও। এদেরকে ‘বখাটে’ বলে অপরাধ লঘু করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই হোক তার প্রাপ্য- এটিই দেশের মানুষ দেখতে চায়।

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।