দাবি আদায়ে অনড় শিক্ষকরা : শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির আশঙ্কা


প্রকাশিত: ০৪:৫৪ পিএম, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫

প্রস্তাবিত অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামো পুনর্নির্ধারণ ও সতন্ত্র বেতন কাঠামোর দাবিতে অনড় রয়েছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। দাবি আদায়ে নিয়মিত কর্মসূচিতে তিন ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করে সফলতা না এলে ক্লাস বর্জনের কথা ভাবছে শিক্ষকরা। এদিকে ক্লাস বর্জন কর্মসূচি শুরু হলে ভোগান্তিতে পড়বে শিক্ষার্থীর।

জানা গেছে, দাবি আদায়ে গত চার মাস ধরে নিয়মিত আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষকরা। এ নিয়ে সরকারের উচ্চ মহলে যুক্তি উপস্থাপনসহ নিয়মিতই কর্মসূচি পালন করছেন তারা। সর্বশেষ গত রোববার বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের আহ্বানে তিন ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেছেন শিক্ষকরা।

তবে দাবি আদায় না হলে দীর্ঘ ক্লাস বর্জনের মতো কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ারও ঘোষণা দেন শিক্ষকরা। এমনকি নতুন বেতন কাঠামো মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হলে তাৎক্ষণিক জাতীয় সম্মেলনের ডাক দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, প্রয়োজনে উচ্চ আদালতে রিটের ঘোষণা দিয়েছেন দিয়েছেন তারা।

এদিকে, শিক্ষকদের এমন কর্মসূচির আভাসে ভোগান্তিতে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে দেশের ৩৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত প্রায় সাড়ে চার লাখ শিক্ষার্থীর। সপ্তাহে একদিন শিক্ষকদের তিন ঘণ্টার ক্লাস বর্জনে এমনিতেই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীদের আশঙ্কা শিক্ষকদের আন্দোলনে অসম্পূর্ণ সিলেবাসে পরীক্ষা নতুবা সেশনজটে পড়তে হবে তাদের।

শিক্ষকদের দাবি, প্রস্তাবিত বেতন কাঠামোর মাধ্যমে শিক্ষকদের পদ-মর্যাদা একধাপ কমিয়ে আনা হয়েছে। তাই বেতন-ভাতা নয়, তারা আন্দোলন করছেন পদ-মর্যাদা নিয়ে। শিক্ষকরা চান তাদের পদ-মর্যাদা আগের মতোই থাকুক। তাদের যুক্তি যদি পদ-মর্যাদা কমিয়ে আনা হয়, তাহলে শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় আগ্রহ হারাবে নতুন প্রজন্ম। এতে জাতীকে মেরুদণ্ডহীন হতে হবে।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ শুক্রবার জাগো নিউজকে বলেন, অর্থমন্ত্রীর কথায় আমরা আস্থা রাখতে পারছি না। কারণ তার সবকিছুই অযৌক্তিক মনে হয়। মূলত তিনি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বিরোধী। উনি শিক্ষকদের সম্মান দিচ্ছেন না।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের ৩৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বমোট কর্মরত শিক্ষক রয়েছেন ১৪ হাজার ছয়শ ৮৫ জন। যার মধ্যে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক প্রায় সাড়ে চারশ জন, অধ্যাপক পাঁচ হাজারের একটু বেশি। আর বাকিরা সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক।

আগে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকরা সরকারের সিলেকশন গ্রেড-১ অনুযায়ী প্রশাসনের সর্বোচ্চ বেতনধারীদের (সচিব) সুবিধা ভোগ করতেন। কিন্তু প্রস্তাবিত বেতন কাঠামোয় তারা দুই ধাপ পিছিয়ে পড়েছেন। জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকরা বেতন কাঠামোতে পিছিয়ে পড়লে ধারাবাহিকভাবে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষকরাও একইভাবে পিছিয়ে পড়বেন।

শিক্ষকরা বলছেন, শুধু বেতন ভাতাদির বিষয়ে নয়, রাষ্ট্রীয় ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে শিক্ষকদের মর্যাদাহানি করা হয়েছে। ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেকশন গ্রেড অধ্যাপকদের অবস্থান ১৯তম, কিন্তু সমবেতনের সচিবদের অবস্থান ১৬তম। এমনকি উপাচার্যদের ১৭তম অবস্থানে রাখা হয়েছে। আমরা ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে পুনর্মূল্যায়ন করে বেতন কাঠামো অনুযায়ী শিক্ষকদের অবস্থান নিশ্চিত করার দাবি জানাই। অন্যথায় ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবস্থান বাদ দেয়া হোক।

এদিকে, দাবি আদায়ে গত চার মাস ধরে শিক্ষক নেতারা অর্থমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা গওহর রিজভিসহ উচ্চ মহলের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকে করেছেন।তবে কোনো আশ্বাস না পেয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করছেন তারা।

শিক্ষক নেতারা জানান, প্রস্তাবিত বেতন কাঠামোতে শিক্ষকদের সচিব, পদায়িত সচিবের নিচে মূল্যয়ন করার পেছনে রয়েছে সরকারের ভিতর থাকা বড় বড় কিছু মোগল। তারা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়কে চাঙা করতে এমন অনৈতিক প্রস্তাব করেছে।

এর আগে এক বিক্ষোভ সমাবেশে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ভারত, শ্রীলংকা ও পাকিস্তানে শিক্ষকরা আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের দাবি আদায় করেছেন। আমাদেরও সেই পন্থায় দাবি আদায় করতে হবে।

এদিকে কয়েকজন শিক্ষক নেতার সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সুষ্ঠু পরিবেশ থাকুক। শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে সপ্তাহে তিন ঘণ্টার ক্লাস বর্জন করছি। আমরা চাই প্রধানমন্ত্রী আমাদের বিষয়টি দেখবেন। যেন আমাদের কঠিন কোন কর্মসূচিতে যেতে না হয়।

শিক্ষার্থীরা আরো বলছেন, শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি মেনে নিয়ে প্রস্তাবিত বেতন কাঠামো পুনর্নিধারণ করা হোক। আর এটি হলে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভবনা নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র মো. মাসুদুল আলম সুমন জাগো নিউজকে বলেন, শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেয়া উচিত। তা না হলে শিক্ষকরা আন্দোলনে যাবেন। এতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি বাড়বে।

অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হতে পারে, এমন আশঙ্কা করে এতদিন লঘু কর্মসূচি দিয়েছি। তবে এবার শিক্ষার্থীদের সাময়িক ক্ষতি হলেও মর্যাদা রক্ষার্থে কঠিন কর্মসূচিতে যেতে হবে। শিক্ষার্থীদের সাময়িক ক্ষতি হলেও পরবর্তীতে তা পুষিয়ে দেয়া হবে। কারণ বেতন-ভাতা মূখ্য বিষয় নয়, মূখ্য বিষয় পদ-মর্যাদা।

নতুন কর্মসূচি নিয়ে তিনি বলেন, শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দরা বসবো। সেই বৈঠকে নতুন কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। যেখানে ৩৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা থাকবেন। একই দিন দুপুর সাড়ে ১১টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফারেন্স রুমে শিক্ষক সমিতি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যদের সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সঙ্গে যৌথ সভা করবে। সভা শেষে দুপুর ১২টায় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি জানানো হবে।

জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনে আগেই সর্মথন জানিয়েছি। শিক্ষকদের দাবি যৌক্তিক। প্রস্তাবিত বেতন কাঠামোতে শিক্ষকদের একধাপ নিচে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। যেটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছি।

এমএইচ/একে/এএইচ/আরএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।