মহাসড়ক ঘেষে কোরবানি পশুর হাট নয়


প্রকাশিত: ০৯:০২ এএম, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫

আসন্ন ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে কোনো সড়ক মহাসড়কের পাশে কোরবানি পশুর হাট বসতে পারবে না সরকার ঘোষণা দেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন মির্জাপুর উপজেলার বৃহৎ দুটি হাটের ইজারাদাররা। হাট দুটি হলো ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক সংলগ্ন উপজেলার গোড়াই ইউনিয়নের দেওহাটা এবং গোড়াই-সখিপুর সড়ক সংলগ্ন বাশতৈল ইউনিয়নের কাইতল্যা পশুর হাট।

হাট দুটিতে স্থানীয় কৃষক, বেপারি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বেপারিরা পশু এনে থাকেন। কোরবানির আগে হাটের স্থানে স্থানীয় ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বেপারিরা পশু নামাতে না পারলে এ উপজেলার প্রায় ৪০/৫০ হাজার মানুষসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা কয়েক লাখ মানুষকে কোরবানির পশু কিনতে ভোগান্তি পোহাতে হবে বলে জানা গেছে।

প্রতি বছরের ন্যায় চলতি বছরও সংশ্লিষ্ট হাট কমিটি প্রশাসনের কাছ থেকে সর্বোচ্চ দর দিয়ে ইজারা নিয়েছেন। দেওহাটা হাটের ইজারা মূল্য প্রায় ১১ লাখ টাকা এবং কাইতল্যা বাজারের ইজারা মূল্য প্রায় ৬৫ লাখ টাকা বলে জানা গেছে।

কাইতল্যা হাটের পেরিথেরিভূক্ত জমির পরিমাণ প্রায় সাত একর। দেওহাটা হাটের পেরিথেরিভূক্ত জমির পরিমাণ প্রায় সোয়া তিন একর। এরমধ্যে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী প্রায় দেড় একর জমি দখলে নিয়ে বাড়ি ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছেন।  

সরকার হাট দুটি হতে প্রায় ৭৬ লাখ টাকা পেলেও হাটের জায়গার কোনো উন্নয়নের কাজ করছেন না বলে জানা গেছে। মহাসড়ক ও সড়ক থেকে হাট দুটিতে যাওয়ার জন্য কাঁচা সড়কের মাঝপথে অনেক সময় পশুবাহী ট্রাক বিকল হয়ে পড়ে। এতে হাট কমিটি ও পশু নিয়ে আসা বেপারি ও স্থানীয়দের ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ঈদকে সামনে রেখে হাট দুটিতে প্রায় দুই শতাধিক পশু বোঝাই ট্রাক আসবে বলে হাট কমিটি জানিয়েছেন। তাছাড়া কমিটি ঈদের আগের তিনদিন নিয়মিত হাট বসিয়ে থাকেন। ওই সময় হাটে পশু বোঝাই ট্রাক ও ক্রেতার সংখ্যা আরও বেড়ে যায়।

Mirzapur

হাট দুটি থেকে পশু ক্রয় করে হাসিল বাবদ ইজারা কমিটি প্রতি গরু ও উট থেকে ২/৩শ টাকা এবং খাসি থেকে ৩০/৫০ টাকা নেয়া হয়।

ঈদে ঘরমুখো মানুষদের যানজট মুক্ত হয়ে নিরাপদে গন্তব্যস্থলে যাওয়ার কথা চিন্তা করে সরকার মহাসড়কের পাশে কোরবানীর পশু বিক্রির হাট বসানো নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছেন।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের প্রায় ২শ গজ দুরে দেওহাটা হাটের অবস্থান। একদিকে সরকারের নিষেধাজ্ঞা অপরদিকে হাটের জমি দখল হওয়া এবং বন্যার পানিতে কিছু অংশ তলিয়ে যাওয়ায় বিপাকে পরেছেন দেওহাটা হাট কমিটি। অপরদিকে সখিপুর-গোড়াই সড়কের কাইতল্যা বাসস্ট্যান্ডের পূর্ব দিকে কাইতল্যা পশুর হাট। কাইতল্যা হাট সরকারের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে না পরলেও পশু বোঝাই ট্রাকগুলো ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক হয়ে কাইতল্যা হাটে যেতে হবে।

গত বছরও সরকারের এ রকম নিষেধাজ্ঞা থাকায় চরম বিপাকে পরেন দেওহাটা পশু হাট কমিটি। তারা দেওহাটা গ্রামের বিভিন্ন রাস্তা ও রশিদ দেওহাটা গ্রামের উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে পশুর হাট বসান। এতে উত্তরবঙ্গের পশু বেপারিরা ওই হাটে পশু নিয়ে আসতে দুর্ভোগে পড়েন।


কাইতল্যা হাট কমিটির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, তারা চলতি বছর উপজেলা প্রশসানের কাছ থেকে প্রায় ৬৫ লাখ টাকা দিয়ে হাট ইজারা নিয়েছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাটের উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়নি। হাটে পশু নিয়ে আসা স্থানীয়রা ছাড়াও বেপারিদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তাছাড়া দেওহাটা পশুর হাট সঠিক যায়গায় করতে না পরলে তাদের হাটে প্রচুর চাপ পরবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

দেওহাটা হাট কমিটির সভাপতি মো. কামরুজ্জামান  জাগো নিউজকে বলেন, মির্জাপুরের ১টি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নের মানুষ প্রায় ৪০/৫০ হাজার কোরবানির পশু কিনে থাকেন। তার ৮০ ভাগ পশু দেওহাটা হাট থেকে কিনে থাকেন। হাটের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল হওয়ায় ঢাকা, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ কোরবানির পশু কিনতে এ হাটে আসেন। গত বছর প্রায় ৪ লাখ টাকা লোকসান গুণতে হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

গোড়াই ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. আদিলুর রহমান খানের সঙ্গে কথা হলে তিনি  জাগো নিউজকে বলেন, সরকার যানজটের কথা চিন্তা করে মহাসড়কের পাশে পশুর হাট বসানো নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ করে দেওহাটা পশুর হাট অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হবে।

মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুম আহমেদ  জাগো নিউজকে বলেন, দেওহাটা পশুর হাট সরিয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দুরে দক্ষিণ দিকে মীর দেওহাটা এলাকায় বসানোর চিন্তা করা হচ্ছে।

এমজেড/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।