৪৩ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’

সাইফুজ্জামান সুমন
সাইফুজ্জামান সুমন সাইফুজ্জামান সুমন , সহ-সম্পাদক, আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:৪২ পিএম, ০১ মে ২০১৯

অস্বাভাবিক আকার ধারণ করে বঙ্গোপসাগরে প্রবল শক্তি সঞ্চয় করছে ঘূর্ণিঝড় ফণী। ভয়ঙ্কর রূপে এই শক্তির বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তাণ্ডব লীলা দেখাতে পারে এই ঝড়। ভারতীয় ইংরেজি দৈনিক দ্য হিন্দু বলছে, ১৯৭৬ সালের পর এতো শক্তিশালী ঝড়ের মুখোমুখি হয়নি এই অঞ্চল।

শুক্রবার ভারতের ওড়িশা উপকূলে ঘণ্টায় প্রায় ২০৫ কিলোমিটার গতিতে আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে ‘ফণী’র। শক্তি সঞ্চয় করে ধীর গতিতে বঙ্গোপসাগরে ঘোরপাক খাওয়া এই ঝড়ের তাণ্ডবে একেবারে ধ্বংসাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে ভারতের তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ।

ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ ভারতের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে আঘাত হানার পর কিছুটা দুর্বল হয়ে আগামী ৪ মে (শনিবার) বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে। ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ তাণ্ডব চালাতে পারে দেশের উপকূলীয় ১৯টি জেলায়। ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় ইতোমধ্যে বাংলাদেশের উপকূলীয় এসব জেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু ও সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকতে বলেছে।

ভারতের আবহাওয়া অধিদফতরের বরাত দিয়ে দ্য হিন্দু বলছে, ঘূর্ণিঝড় ফণী বর্তমানে তামিলনাড়ুর বিশাখাপত্তমের পূর্ব উপকূল থেকে ৬০০ কিলোমিটার ও পুরি থেকে ৮০০ কিলোমিটার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। গত ৪৩ বছরে অর্থাৎ ১৯৭৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এপ্রিল মাসে বঙ্গোপসাগরে যতগুলো ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়েছে তার কোনোটি কখনই এতো শক্তিশালী আকার ধারণ করেনি।

প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের গতিবেগ সাধারণত ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে এবং এই ঝড় যে কোনো সময় সৃষ্টি হতে পারে। তবে সাধারণত বর্ষা মৌসুমের শেষে অথবা মে মাসের দিকে এমন ঝড় দেখা দিলেও বেশিরভাগই নভেম্বরে হয়।

ভারতের আবহাওয়া অধিদফতরের মহাপরিচালক কে জি রমেশ বলেন, এ ধরনের ঝড় বৈশ্বিক উষ্ণতা পরিবর্তনের ফল। বঙ্গোপসাগরের বায়ুমন্ডলের পরিবর্তনের কারণে এই ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়েছে...। বৈশ্বিক উষ্ণতার সঙ্গে এখন আমাদের এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি এবং পূর্ব সতর্কতা নিতে হবে। তবে এই ঝড়ের কারণে আগাম বর্ষা শুরুর সম্ভাবনা নেই।

ভারতীয় আবহাওয়া অধিদফতরের ঘূর্ণিঝড়-পরিসংখ্যান শাখা বলছে, ১৯৬৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগরে মোট ৪৬টি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে ২৮টি ঝড়ের সৃষ্টি হয়েছিল অক্টোবর-নভেম্বর মাসে। এছাড়া সাতটি মে মাসে এবং ১৯৬৬ ও ১৯৭৬ সালে মাত্র দুটি ঝড় সৃষ্টি হয় এপ্রিল মাসে।

বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ ধ্বংসাত্মক শক্তি সঞ্চয় করে বুধবার দুপুরের দিকে সাগরের সামান্য উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়েছে। শুক্রবার ভারতের ওড়িশা উপকূলে ঘণ্টায় প্রায় ২০৫ কিলোমিটার গতিতে আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে ‘ফণী’র। প্রত্যেক বছর বিশ্বে মাত্র ২০ থেকে ৩০টি ঘূর্ণিঝড় এ ধরনের প্রবল শক্তি সঞ্চয় করে আছড়ে পড়ে।

ভারতীয় আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, ঘূর্ণিঝড় ফণী প্রবল শক্তি ওড়িশা উপকূলে পৌঁছাতে পারে ৩ মে। এ সময় ঝড়ো বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৭০-১৮০ থেকে ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বয়ে যেতে পারে।

ফণী দীর্ঘ সময় ধরে তাণ্ডব চালাতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। ২৫ এপ্রিল থেকে বঙ্গোপসাগরে শক্তি সঞ্চয় করছে ঘূর্ণিঝড় ফণী। এত দীর্ঘ সময় ধরে গ্রীষ্ম মণ্ডলীয় কোনো ঝড়ের শক্তি সঞ্চয় খুব বেশি দেখা যায় না। সাধারণত এক সপ্তাহ শক্তি সঞ্চয়ের পর ঝড়ো-বাতাসের সঙ্গে দুর্বল হয়ে যায়।

আগামী ৩ মে মধ্যে প্রবল বেগে ভারতের ওড়িশা, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানবে ফণী। ইতোমধ্যে ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় ভারতের এসব রাজ্যে আশ্রয় কেন্দ্র চালুর পাশাপাশি উপকূলীয় এলাকাগুলো থেকে পর্যটকদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতেও আঘাত হানতে পারে এই ঝড়। এ জন্য পূর্ব সতর্কতা হিসেবে সাগর উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম থেকে সন্দ্বীপ ও হাতিয়া রুটে নৌ-চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফণী মোকাবেলায় উপকূলীয় এলাকায় ২ হাজার ৭৩৯ টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এক সভায় ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেন বলেছেন, চট্টগ্রামের সব সরকারি কর্মকর্তাকে স্থান ত্যাগ না করার জন্য মৌখিকভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে এখনো ছুটি বাতিলের কোনো নির্দেশনা আসেনি।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, প্রবল শক্তি সঞ্চয়কারী এই ঘূর্ণিঝড়টি বুধবার দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার থেকে ১ হাজার ১৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।

তবে আরো ঘনীভূত হয়ে উত্তর ও উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে এই ঘূর্ণিঝড়। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার। যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ঝোড়া হাওয়ায় উত্তাল হয়ে উঠেছে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র। বুধবার দুপুর পর্যন্ত ‘ফণী’ সুপার সাইক্লোনের একধাপ আগের স্তরের ঝড়ে পরিণত হয়েছে।

এসআইএস/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।