২০০ বছরে প্রথম সিংহাসন ছাড়ছেন জাপানের সম্রাট
জাপানের সম্রাট আকিহিতো সিংহাসন ছেড়ে দিচ্ছেন। নতুন সম্রাট হিসেবে দায়িত্ব নিচ্ছেন তার পুত্র যুবরাজ নারুহিতো। বুধবার সিংহাসনে বসবেন এই নতুন সম্রাট। দু'শো বছরের মধ্যে এই প্রথম জাপানের কোন সম্রাট নিজে থেকে তার দায়িত্ব ছেড়ে দিচ্ছেন।
জাপানের কোন সম্রাটের রাজনৈতিক কোন ক্ষমতা নেই। কিন্তু তাকে জাতীয় প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। ৮৫ বছর বয়সী সম্রাট আকিহিতো ২০১৬ সালে ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, বয়সের কারণে তার ভয় হচ্ছে যে, তিনি সঠিকভাবে তার দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। তখনি তিনি সিংহাসন ছাড়ার আভাস দেন।
জনমত জরিপে দেখা গেছে, স্বাস্থ্যের কারণে সিংহাসন ছাড়তে জাপান সম্রাটের ইচ্ছাকে সমর্থন করেছেন বেশিরভাগ জাপানি। পরে দেশটির সংসদ একটি আইন পাস করে যাতে তিনি সিংহাসন ত্যাগ করতে পারেন। রাজকীয় প্যালেসের মাৎসু-নো-মা রাজ্য কক্ষে এই অনুষ্ঠান হবে। তবে এর বেশিরভাগ আয়োজনই থাকবে লোকচক্ষুর আড়ালে।
স্থানীয় সময় বিকেল পাঁচটায় আয়োজন শুরু হবে। যখন সম্রাট আকিহিতো এবং সম্রাজ্ঞী মিচিকো কক্ষে প্রবেশ করবেন তখন প্রায় ৩৩০ জন অতিথি সেখানে থাকবেন। এই অনুষ্ঠানটি ১০ মিনিট ধরে চলবে। সম্রাট হিসেবে আকিহিতোর শেষ বক্তব্যের মধ্যে দিয়েই অনুষ্ঠানটি শেষ হবে।
বুধবার সকালে যুবরাজ নারুহিতো রাজকীয় ভাণ্ডারের দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে সম্রাট হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন। জাপানের ১২৬তম সম্রাট হতে যাচ্ছেন যুবরাজ নারুহিতো। তিনি যিনি জাপানকে 'রেইওয়া' যুগে নিয়ে যাবেন।
৫৯ বছর বয়সী নারুহিতো অক্সফোর্ডে পড়াশোনা করেছেন। ১৯৮৬ সালে একটি চায়ের আসরে রাজকুমারী মাসাকো ওয়াডার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ১৯৯৩ সালে তারা বিয়ে করেন।
এই দম্পতির একমাত্র সন্তান প্রিন্সেস আইকোর জন্ম হয় ২০০১ সালে। যদিও জাপানের বর্তমান আইন অনুযায়ী কোন নারী সিংহাসনে বসতে পারেন না। যে কারণে প্রিন্সেস আইকো সিংহাসনের পরবর্তী উত্তরাধিকারী নন।
যুবরাজ নারুহিতোর পর উত্তরাধিকারী তালিকায় রয়েছেন তার ভাই প্রিন্স ফুমিহিতো। এরপরে রয়েছে ফুমিহিতোর সন্তান ১২ বছরের হিসাহিতো।
নতুন সম্রাটের দায়িত্ব গ্রহণ উদযাপন করতে জাপানের বসন্তকালীন বার্ষিক ছুটি গোল্ডেন উইক ছুটি আরো দশদিন বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এই দায়িত্ব ত্যাগের আয়োজন অনেকটা উৎসবের মতো আকার পেয়েছে জাপানে। যদিও ৩০ বছর আগে যখন আকিহিতো তার পিতার মৃত্যুর পর সম্রাট হন তখন পুরো দেশ শোকের সাগরে ভাসছিল।
তবে এবার মানুষজন ছুটি কাটাচ্ছে, সিনেমা দেখতে যাবে অথবা বাড়িতে বসে সম্রাটের সিংহাসন ত্যাগ ও নতুন সম্রাটের দায়িত্ব গ্রহণের আয়োজন টেলিভিশনে দেখবে। এই প্রথম জীবিত কোন সম্রাট সিংহাসন ত্যাগ করলেন।
বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো রাজকীয় পরিবারের একটি জাপানের রাজপরিবার। পৌরাণিক কাহিনিতে বলা হয়েছে, যিশু খৃষ্টের জন্মের ৬০০ বছর আগে থেকে এই রাজতন্ত্র চলছে।
একসময় জাপানের সম্রাটদের ঈশ্বরের মতো দেখা হতো। তবে সম্রাট আকিহিতোর পিতা সম্রাট হিরোহিতো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের আত্মসমর্পণের পর তার সেই দেবত্ব ত্যাগ করেন। তবে যুদ্ধের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন সম্রাট আকিহিতো।
রাজপরিবার ও জনগণের মাঝ যে ব্যবধান ছিল তা কমিয়ে আনার পেছনে তার অবদান রয়েছে। সম্রাট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের দুই বছর পর ১৯৯১ সালে নাগাসাকিতে একটি আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে প্রথমবারের মতো প্রথা ভেঙে হাঁটু ভেঙে জনগণের কাতারে বসেন সম্রাট আকিহিতো। এরপর থেকে সেই ধারা চলছে।
জাপানের অনানুষ্ঠানিক দূত হিসেবে বিশ্বের অনেক দেশে ভ্রমণ করেছেন আকিহিতো, যা নতুন সম্রাট অব্যাহত রাখবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
টিটিএন/জেআইএম